আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটিএম বুথে একজন সিকিউরিটি ম্যান ও গানম্যান

বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d

সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের সামনে আমার কলিগ টাকা তুলবে বলে। ইফতারীর আগে দেখলাম সেখানে বিশাল লাইন। অর্থাৎ সবাই টাকা তুলবে। কিন্তু লাইন এগুচ্ছে না।

সিকিউরিটি গার্ডকে প্রশ্ন করতেই জানলাম টাকা লোড করা হচ্ছে মেশিনে। পরক্ষনেই চোখে পড়লো পাশে দাড়ানো ফার্ষ্টক্লাশ সিকিউরিটি কোম্পানীর একটা গাড়ী। বুলেটপ্রুফ কালো কাঁচের গন্ডারের মত মাইক্রোবাস। ভিতরে দেখার সুযোগ নেই। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ওদের কোম্পানীর কয়েকজন সিকিউরিটির লোক।

কোথা থেকে ভেজা হাত পায়ে ছুটে আসলেন সেই কোম্পানীর একজন লোক। এসেই প্রশ্ন করলেন বুথের সিকিউরিটিকে সেখানে নামাজের কোন জায়গা আছে কিনা। লোকটার প্রশ্নের কেউ জবার দিলো না। লোকটা কিছুক্ষণ এদিকে ওদিক তাকিয়ে দুরে সরে গিয়ে দাঁড়ালো। এই মুহুর্তে লাইন সচল হলো।

একজন দুইজন করে ভিতরে ঢুকতে থাকলো। আবারো সেই কোম্পানীর লোকটা এসে সেই সিকিউরিটিকে তার কোমরের কিছুটা ছিঁড়ে যাওয়া বেল্টব্যাগ দেখিয়ে প্রশ্ন করল আশেপাশে কোন জুতা সিলাই করে এমন কেউ আছে কিনা। তারা কোন জবাব না দিয়ে হাসতে থাকলো। হাসিতে কেমন একটু টিককারী ভাব লুকিয়ে আছে লক্ষ্য করলাম। এই মুহুর্তে সেই কোম্পানী পোষাক পরিহিত লোক ক্ষেপে গেলেন এবং পুরো ইংরেজীতে টানা কয়েকমিনিট ঝাড়লেন তাদের।

তার কথার মিনিং ছিল অনেকটা এই রকম: "তোমরা কেন হাসছো? ফাজলামি করো? তুমি জানো তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো? আমি একজন এয়ারফোর্সের রিটায়ার্ড সাজেন্ট (ওয়ারেন্ট অফিসার)। আমার বাড়ী রাজশাহীর নওগাঁতে। আমার ব্যাচের বন্ধুরা এখন সব ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদার। আমার একটা ছেলে নর্থ-সাউথে পড়ে। মাসে তার ১৫ হাজার টাকা খরচ দিতে হয়।

আমি না পেরে এখন এই কাজ করছি। এই কোম্পানীর গানম্যানের চাকুরী নিয়েছি। অনেক বড় একটা দায়িত্ব পালন করতে হয় আমাকে। এই যে কোমরে বেল্টব্যাগ দেখছো, দেখো এর মধ্যে ভর্তি কার্তুজ। আমার নিজের দুইটা লাইসেন্সড গান আছে।

" উনি প্রতিটা বাক্য বলার মাঝে বেশ কিছু সময় নিচ্ছিলেন আর মাথা ঝাকাচ্ছিলেন। তবে তার কথা শুনে এবং ইংরেজীতে ফ্লুয়েন্সি দেখে সেখানে উপস্থিত অনেকেই অবাক হলেও সিকিউরিটি গার্ড দুটি একেবারে চুপ হয়ে চুপসে গেল। তবে মনে হয় লোকটার কিছুটা সমস্যা আছে। হয়ত একটু বেশী কথা বলে। কিন্তু বুঝলাম তার এই কথাগুলো তার কষ্ট থেকে বের হয়ে এসেছে।

নিঃশ্চই তার জীবনে কোন একটা না পাওয়ার কষ্ট আছে। একে একে মানুষগুলো এগিয়ে চলছে বুথের দিকে। আমরাও আমাদের কাজ শেষে চলে এলাম ওখান থেকে। দেখলাম লোকটি কোন জায়গা না পেয়ে সেই গাড়ীর ভিতর ঢুকে নামাজ পড়ছে। সিকিউরিটি গার্ডটি নির্বিকার ভাবে এটিএম বুথের গেট খুলে দিচ্ছে একজন একজন করে প্রবেশ ও বের হয়ে যাচ্ছে।

যেন সে একটা রোবট।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.