যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
মঝে মধ্যে সত্যই অবাক হই - বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নিয়ে একদল তরুন কিভাবে মিথ্যা আর বিকৃত ইতিহাস প্রচার করে। আমি নিজে মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রত্যক্ষদর্শী। ছোট ছিলাম। কিন্তু যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতা ভয়াবহ ভাবে উপলদ্ধি করেছি। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছি - পরিবারের সবার জীবন রক্ষার জন্যে।
আমার বোনরা ছিলো বড় - তাদের সম্ভ্রম রক্ষাও ছিলো আমাদের পরিবারের আরেকটা প্রধান দায়িত্ব।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন করে লেখা হচ্ছে। একটা ভার্সান লেখা হয়েছে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ এর মধ্যে - যাতে একজন সামরিক শাসককে বড় করার জন্যে স্বাধীনতার মুল নায়কদের আড়াল করা হয়েছে। ছোট সন্তানসহ স্বপরিবারের নেতাকে হত্যা আর জেলের ভিতরে নির্মমভাবে হত্যা করা চার মুক্তিযুদ্ধের চার সেনানীকে শুধু হত্যাই করা হয়নি - সেই হত্যার বিচারে পথ বন্ধ করে দিয়ে তাদেরকে ইতিহাস থেকে বিসর্জনের সকল প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য - একজন মুসলমান হিসাবে আমি খুবই লজ্জিত থাকি - যখন মুক্তিযুদ্ধকালে ভিন্নধর্মী - বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার করা হয়েছে - তাদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
সেই অত্যাচারীদের মধ্যে অনেকে এখন বড় বড় ধর্মীয় নেতা সেজে টিভিতে ধর্মের বিষয়ে জ্ঞান বিতরন করেন - তারা ইসলামের কোন নির্দেশ থেকে আদিষ্ট হয়ে হিন্দুদের বাড়ীঘর দখল করে ছিলেন - তার জবাব হয়তো তাদের কাছে নেই। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে এই সকল ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মের যে ক্ষতি করেছে - সকল নাস্তিকরা মিলে করতে পারবে না। আমি মুসলমান হিসাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে ৭১ এর ঘটনাবলীর জন্যে ক্ষমা চাচ্ছি।
এখন দেখছি ১৯৭১ এর ইতিহাসের আরেক ভার্সান লেখা শুরু হয়েছে। যথারীতি ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য আর আমেরিকান ওয়ার অন টেররে টাকায় ভূরাজনৈতিক চলমান ঘটনা - যেমন ফিলিস্থিন, আফগান, ইরাক থেকে মুসলামনদের দৃষ্টি অণ্যদিকে রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে জামাত-শিবির আবারো নেমেছে নতুন ইতিহাস তৈরীতে। নিজেরা ইসলামের পথ অনুসরন না করলেও ইসলামী জোস তৈরী করে তরুন সমাজকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
৩৭ বছর এমন কিছুই না - একন অনেক মানুষ জীবিত আছে যাদের শরীরে পাকবাহিনীর বুলেট রয়ে গেছে। এখনও অনেক মা বোন জীবিত আছেন - যারা পাকিদের অত্যাচারের চিহ্ন নিয়ে বেড়াচ্ছে। এখনও অনেক যুদ্ধ শিশু দেশে বিদেশে বেঁচে আছেন - যারা ইতিহাসের জ্বলজ্বলে স্বাক্ষী বটে।
তাই এই ঘাতক দালালদের পক্ষে ইতিহাস বিকৃতি করা কঠিন।
তারপরও দেখি কুছু তরুন-যুবক সেই বিকৃত ইতিহাস প্রচার করে। আগে বুঝতে পারতাম না - কেন এরা এই কাজ করে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনাবলী থেকে বুঝতে পারলাম - এদের অধিকাংশের পূর্বপুরুষ ১৯৭১ এ পাক বাহিনীর দালাল হিসাবে নিজের দেশের মানুষের সাথে বেঈমানী করেছে। এদের পূবপুরুষ রাজাকার আলবদর হিসাবে নিজেদের মা বোনকে পাকিদের ক্যাম্পে পাঠিয়েছে।
এরা প্রচন্ড ভাবে ঘৃনা করে আহবামান বাংলা সংস্কৃতিকে।
সেই রাজাকার আর দালালচক্র রাজনীতি আর সামরিক শাসনের বদৌলতে বেঁচে গিয়ে তাদের সন্তানদের যথারীতি ঘৃনা করতে শিখাচ্ছে। এরা ঘৃনা করে আমারদের মুক্তির যুদ্ধকে - আমাদের প্রগতিশীলতাকে - আমাদের আধুনিকতাকে। ফলে আমরা দেখি রমনায় বোমা হামলা - দেখি শামসুর রাহমানরের মাথায় কুড়ালো কোপ - দেখি হুমায়ুন আজাদের রক্তাক্ত মুখ।
আমিও যদি কোন রাজাকারের সন্তান হতাম - তবে হয়তো ঘৃনা করতাম শেখ মুজিবুর রহমানকে - যে একজন সাধারন মানুষের কাতার থেকে উঠে এসে একটা জাতিকে নিজের পরিচয় দেবার মতো ভু-খন্ড প্রাপ্তির সংগ্রামের স্বপ্ন দেখিয়ে স্বপ্নের দোড়গোড়ায় পৌছে দিয়েছে।
আমি হয়তো ঘৃনা করতাম জেলে নিহত চার নেতাকে - যারা কঠিন সময় তাদের মেধা আর প্রজ্ঞা দিয়ে একটা যুদ্ধে জাতিকে বিজয়ী করেছে। হয়তো ঘৃনা করতাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে - যে মানবতার কথা বলে বাঙালী জাতিকে আলোর পথ দেখাচ্ছে।
অন্যদিকে হয়তো আমি মহান মানুষ ভেবে কৃতজ্ঞতায় স্মরন করতাম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে - যার বদৌলতে আমার বাবা জীবনকাল বেড়েছে আর আমার জন্ম হয়েছে। হয়তো বাঙালী জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত দালাল গোলাম আজমকে মহান নেতা ভাবতাম - কারন তার সুবাদে সৌদী অর্থের চালানের কিছু অংশ পেয়ে আমার বাবা আমাকে ফ্রান্স অথবা অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষার জন্যে পাঠাচ্ছেন। আমি হয়তো রাজাকার বাহিনীর জন্যে একটা কবিতা লিখতাম - কারন আমার বাবা রাজাকার হিসাবে গর্বিত হয়ে ছোট কাল থেকে আমাদের রাজাকার বিষয় গল্প শুনাতেন।
সত্যই যদি আমি রাজাকারের সন্তান হতাম - হয়তো আমিও মুক্তিযুদ্ধের সন্ত্রাসী বলতাম আর রাজাকারদের বলতাম ইসলামের মহান যোদ্ধা। কারন আমার রাজাকার বাবার কোন দৃশ্যত আয়ের উৎস ছাড়াই আমাদের উচ্চ বিত্তের জীবনযাপন করাতেন - আমার ভাইকে পাঠাতেন কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাস্তায় হেটে বেড়ানো নেংটা মানুষ গুলোর জীবন যুদ্ধ দেখে আমি নিশ্চয় কৃতজ্ঞ থাকতাম আমার বাবার কাছে - সেই কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ হতো - আমি মাঝে মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে বিকৃত ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক তৈরী করতাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।