শী কান্ট রিমেম্বার এ টাইম, হোয়েন শী ফেল্ট নীডেড। ইফ লাভ ওয়াজ রেড, দেন শী ওয়াজ কালার ব্লাইন্ড।
বাল্যশিক্ষায় ভর্তি হবার কয়েকদিন পরের ঘটনা। ছোটকাকা কাঁেধ ছড়িয়ে সেলুনে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। বেশ কিছুক্ষন পর ফিরে এসে আমার মাথার চুল দেখে রেগেমেগে ফায়ার।
-ওর চুল এভাবে কাটলেন কেন?
-পিচ্চি মেয়েদের চুল যেভাবে কাটে সেভাবেই তো কেটেছি।
-ওকে মেয়ে মনে হয়?
-মেয়েকে মেয়েই তো মনে হবে।
ছোট কাকা আমাকে সেলুনের চেয়ারে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললেন,প্যান্ট খোল।
লজ্জায় খিচ্চা প্যান্টের বোতাম চেপে ধরলাম। কিন্তু ছোটকাকা নাছোড়বান্দা!একরকম জোর করে আমার প্যান্ট খুলে ফেললেন!
আন্ডাবাচ্চা বয়সে নাদুস-নুদুস এবং মাথার চুল বেশ ঘন প্লাস লম্বা থাকায় রিলেটিভ অনেকেই আমাকে মেয়ে ভেবে ভুল করে বসত।
সেলুনওয়ালার আর কি দোষ!
বাড়িতে এসে কাকা ঘটনা ফাঁস করে দিল পাশের বাড়ির নাফিসার সামনে। বদ মেয়েটা পরদিন স্কুলে গিয়ে ক্লাসে ইনিয়ে বিনিয়ে আরো কাহিনী বানিয়ে রটিয়ে ক্লান্ত হলনা। সবাইকে চকলেট বিলিয়ে আমার নাম দিল ‘লজ্জাবতী ছেলে’।
ছোটবেলা থেকেই আমার অবস্থা ‘লাজে মরি গো লাজে মরি’ টাইপের লজ্জাবতী মেয়েদের মত। ক্লাসের কোন মেয়ে একবারের বেশী দুইবার তাকালে লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখতাম।
ফ্রেন্ডরা প্রায় অফার দিত মেয়েদের পাশে বসে ক্লাস করতে!
লজ্জার পাশাপাশি মেয়ে ভীতিও চরমে ছিল। এসএসসি পরীক্ষার পর নাফিসা চিঠি ধরিয়ে হুমকি দিল,৩দিনের মধ্যে উওর না দিলে খবর নিয়ে ছাড়বে। পুরো চিঠিতে ‘লজ্জাবতী ছেলে,আই লাভ ইউ’ বাক্যটা ১০০বার লেখা।
ভাগ্যিস ৩দিনের আগেই নাফিসারা ঢাকায় চলে যায় একবারে। ঢাকা থেকে নাফিসারা যতবারই গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে ততবারই বাড়ি ছেড়ে ফুফুর বাসায় গিয়ে থেকেছি!যদি চিঠির উওর চেয়ে বসে এই ভয়ে।
বুঝলা?
-বুঝলাম। এখন তো মুখোমুখি প্ল্যাট। পালাবে কোথায়?
-ভাইয়াকে বল আমাকে একটা মেস ঠিক করে দিতে।
-একটা থাপ্পর দেব। সবার কাছে আমাকে ‘হিংসুটে ভাবী’ পরিচয় করিয়ে দেবার পায়তারা করছ?
-তোমার মাথা।
ভাইয়া আসবে কখন?
-বিকেলে। জার্নি করে এসেছ। গোসল করে নাও। ততক্ষনে টেবিলে খাবার রেডি করছি।
দেশের আরো ৬৩টা জেলা থাকতে ঢাকায় ট্রান্সফার করায় বসের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে বাথরুমে গেলাম।
গোসল সেরে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
বিকেলে ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে টিভিতে ম্যাচ দেখছি এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল। ভাইয়া এসেছে ভেবে দরজা খুলে নাফিসাকে দেখে থ’ হয়ে গেলাম।
-হাবলার মত তাকিয়ে আছিস কেন?
-কি করব?
-সুন্দরী মেয়ে দেখলে রূপের প্রশংসা করতে হয় জানিস না?আমার রূপের প্রশংসা কর।
-পারিনা তো।
-একটুও পাল্টাসনি। আগের মত হাবলাই আছিস। তোকে অনেক জ্বালিয়েছি তাই না?মনে আছে তোর ন্যাড়া মাথায় কালি মেখে দিয়েছিলাম।
-হু। একবার জুতা ফেলে দিয়েছিলি পুকুরে।
-কি করব বল?তোর হাবলা মার্কা লাজুক লাজুক চেহারা দেখলেই খোঁচাতে ইচ্ছা করত।
বাহ্!দরজায় দাঁিড়য়ে ভালই স্মৃতিচারন হচ্ছে!অথচ একটু আগেও একজন পালানোর প্ল্যান করছিল!ভাবীর কথায় চমকে উঠে দরজা ছেড়ে সোফায় গিয়ে বসলাম।
-পালালে আমাকে সাথে নিয়েই পালাতে হবে। সংসদ ভবনের ঐদিকে একটু কাজ আছে। তোমার দেবরকে সাথে নিয়ে যাবার অনুমতি দিবা নাকি জোর করে তুলে নিয়ে যাব?
-কাজী অফিসে ছাড়া যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যাও।
-গেলে তোমাকে আর ভাইয়াকেও নিয়ে যাব। দুইজন সাক্ষী লাগবে তো। রেডী হয়ে আসছি। ঐ হাবলা তুই ও রেডী হয়ে নে।
নাফিসা যেতেই ভাবীকে বললাম,ওর সাথে বাইরে যাব না।
তুমি জাননা ও কতটা ফাজিল। নিশ্চিত আমাকে কোথাও রেখে একা চলে আসবে।
-ও যতটা না ফাজিল তার চাইতে হাজার গুন বেশী লক্ষী।
-লক্ষী না ছাই। আমার চাইতে বেশী ওকে কেউ চিনেনা।
-তুমি ওকে পছন্দ কর তাইনা?
উওর না দিয়ে রুমে এসে টিশার্ট আর জিন্স পড়ে নাফিসার সাথে বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম।
নাফিসার কাজ শেষ হতেই চন্দ্রিমা উদ্যান দেখতে গেলাম। উদ্যানের লেকের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যতই ভেতরের দিকে যাচ্ছি ততই ‘টিনের চালে কাক আমি তো অবাক’ অবস্থা!কয়েক হাত দূরে দূরে জোড়ায় জোড়ায় প্রেমিক-প্রেমিকারা এমন ভাবে বসে আছে তাকানো দায়। লেকের অপর পাশে উদ্যানের ভেতর আরো বিশ্রী অবস্থা। আশপাশের অশ্লীলতা হিন্দী সিনেমার আইটেম সংও ফেইল!
-লজ্জা পাচ্ছিস?
-তুই পাচ্ছিস না?
-ঢাকা শহরের পাবলিক বিনোদনের স্থানগুলোতে এসব দেখতে দেখতে এখন আর লজ্জায় করে না।
সবচাইতে বড় কথা আমরা হচ্ছি লজ্জাহীন জাতি। দাদাদের সীমান্ত কুকুররা আমাদের সামীনায় ঢুকে আমাদের কামড়ে রক্তাত্ব করার খবরে আমাদের চোখে পানি আসেনা। কিন্তু,হিন্দী সিরিয়ালে নায়িকা যতবারই মরে ততবারই টিসুৎবক্স খালি করে ফেলি। দূর্নীতির দায়ে দাতারা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর দূর্নিতীবাজরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে নিজেদের সাধু প্রমাণ করতে পত্রিকার প্রথম পাতায় বিজ্ঞাপন দেয়;সমাবেশ করে।
আমরা গিয়ে হাততালি দেয়। পৃথিবীতে ‘লজ্জা’ ঋন দেওয়ার কোন সংস্থা থাকলে লজ্জাহীন এই জাতিকে কোন শর্ত ছাড়াই লজ্জা ঋন ভিক্ষা দিত।
আনমনেই ফাজিল মেয়েটার হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম। অদ্ভুদ নরম হাত ফাজিল মেয়েটার। মেয়েদের হাত এত নরম হয় জানতাম না।
দেশের প্রধানের হাতও নিশ্চয় এমন নরম। নরম হাতের আশীর্বাদ পেলে দূর্নীতি করে বড় কথা বলবে না কোন শালা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।