দেশে ফিরে জমিয়ে সবাইকে কলকাতার গল্প বলছি। গেঞ্জি পরার পরও কলকাতার মেয়েদের কতো শালীন লাগে, সেখানকার ইলিশ মাছের স্বাদ কেমন , কিংফিশারের দাম দুই রুপি বাড়ছে-ইত্যাদি। যে ব্যাপারে গিয়েছিলাম সেই ব্যাপারটা নিয়া মোটামুটি চুপচাপ থাকি।
তবে ভেতরে ভেতরে টেনশনটা ঠিকই কাজ করে। জীবনে তো অনেক রকম অভিজ্ঞতাই হল, মৃত্যুরটা হলে মন্দ কী? কিন্তু মেয়ে দু্ইটার কথা ভেবে খুব ভেঙ্গে পড়ি।
একদিন ব্যাপারটা নিয়ে অফিসের হারু ভাইয়ের সাথে কথা বল্লাম। উনি এই লাইনে অভিজ্ঞ লোক। উনার একটা সিরিয়াস বাইপাস হয়ে গেছে। তো উনি বললেন, ডা. বরেন চক্রবর্তীকে একবার দেখাতে। অনেক চেষ্টা করেও বরেনদাকে ধরতে পারছি না।
তাপসদা আমারদের আরেক সহকর্মী, বড়ভাই। বরেন দা উনার বন্ধু। উনাকে গোটা ব্যাপারটা খুলে বলতেই হল।
উনি খুব সহজে বরেন দার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করে দিলেন। আর এইসব করতে করতেই গোটা অফিস জেনে গেল।
জাকির ভাই, যিনি ইলেকশন বিট করেন উনি ব্যাপারটা নিয়ে খুব সিরিয়াস হয়ে গেলেন। আমার মতো চেংড়াদের যদি হার্টের অসুখ হয়, তাহলে উনার মতো বয়সীদের কি হবে? গোটা অফিসে হৃদরোগ আতংক ছড়িয়ে পড়ল। এবং এই গণহৃদরোগ আতংকে আমার সত্যি সত্যি আবারও বুক ব্যাথা শুরু হল। এর কয়েকদিন পর, জাকির ভাইয়েরও বুক ব্যথা করতে লাগল ( যদিও ওটা ছিল নিখাদ গ্যাসট্রিকের ব্যাথা) । এখন উনি ডাক্তার দেখাচ্ছেন, নিয়ম করে দুই বেলা হাঁটছেন, আর সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাচ্ছেন।
কলকাতা থেকে কী খাব ( যেমন ডালের শুক্তো , আচ্ছা শুক্তো কি জিনিস কেউ বলতে পারেন ?, কাঁচা রসুন ) আর কী খাব না ( গরুর মাংস , ভাজাপোড়া, সিগারেট তো অবশ্যই ) তার একটা লিস্ট করে দিয়েছেন ডাক্তাররা। দিনে কয় মাইল হাঁটতে হবে সেটাও বলে দিয়েছেন ওরা।
আমি মোটামুটি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছি। সবাইকে চোখ বড় বড় করে বলছি, ভাই গরুর মাংস খাবেন, যত পারেন ভেজিটেবল খান। সকালে অবশ্যই কাঁচা রসুন।
এই কথাগুলো আমি বলি, হিতার্থী রেস্টুরেন্ট থেকে দুপুরের লাঞ্চ সারার পর, ওখানে কঠিন বিফ পাওয়া যায়।
তো গেলাম বরেন দা কাছে। উনি খুব মনোযোগ দিয়ে আমাকে দেখলেন। সিগারেট খাই কিনা- এটা জিজ্ঞেস করায় যখন বললাম, দিনে দুই প্যাকেট খেতাম, তবে এখন এক প্যাকেটে নামিয়ে এনেছি। শুনে উনি ঝিম মেরে গেলেন।
বললেন, আপনার যে অসুখ হয়েছে তাতে একটা সিগারেট আর একশটা সিগারেটের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য হবে না। অনকেই সিগারেট খায়, সবার সমস্যা হয়না, কিন্তু আপনার হয়েছে। কিছুই করার নেই, বাঁচতে হলে ওটা সবার প্রথমে ছাড়তে হবে। এই রোগে ওটা বিষের চেয়েও খারাপ। এরপর সিগারেটখোরদের সম্পর্কে যা বললেন, তাতে মনে হল, উনি ধুমপায়ীদের যুদ্ধাপরাধীদের থেকে বেশি ঘৃণা করেন।
উনিও কলকাতার ঐ টেস্টটি করতে দিলেন ( হলটার মনিটরিং টেস্ট )। বললেন, সিগারেট ছাড়ার ১৫ দিন পরে টেস্টটি করতে। তা না হলে রিপোর্ট খুব খারাপ আসতে পারে ... এখন থেকে আর একটা সিগারেটও না।
উনার চেম্বার থেকে বের হয়ে আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে গোটা বিষয় নিয়ে ভাবতে বসলাম।
সন্ধ্যা নাগাদ দুই প্যাকেট শেষ করলাম।
খুব ঠান্ডা মাথায় ঠিক করলাম আজ রাত বারোটা থেকে আগামী ১৫ দিন একটা সিগারেটও খাব না। ১৫ দিন পর টেস্ট করে দেখব কোন উন্নতি হল কিনা।
পরদিন থেকে শুর হল, আমার সিগারেটবিহীন জীবন। সে জীবন আনন্দের, সে জীবন বেদনারও। আমার বড় বাথরুম বন্ধ হয়ে গেল।
মনে প্রচন্ড অস্থিরতা। তিনদিন পার হওয়ার পর মনে হল , আমি পারবো।
ঠিক এগারো দিনের মাথায় বাসে করে অফিসে যাচ্ছি। দিনটা বৃহস্পতিবার, ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। সিগারেট ছেড়ে দেয়ায় ইতিমধ্যে অামার আচার আচরণে ব্যাপক পরিবর্তণ এসেছে।
চাল চলনে আমি প্রায় মহাত্মা গান্ধির পর্যায়ে চলে গেছি, সাত চড়ে রা কাড়ি না- এই অবস্থা।
(আগামী পর্বে সমাপ্য)
গত পর্ব
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।