আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফুলবাড়ী দিবসে -



বৃহত্তর রংপুর দিনাজপুর শিল্প বাণিজ্য উন্নয়ন পরিষদ ফুলবাড়ী দিবসে সভা করেছে, সেই সভায় দাবি উঠেছে দেশের বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে ফুলবাড়ীর কয়লাই একমাত্র সমাধান, তাই অতি সত্ত্বর এই খনি খননের বিষয়ে একটা ঐক্যমতে পৌঁছানো প্রয়োজন। ব্যবসায়ী মানুষেরা ৫০ হাজার আদিবাসীর কথা ভাববে না, অবশ্য বিশ্বে আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার যেকোনো রাষ্ট্রেই আদিবাসীরা চিড়িয়াখানার জন্তুতে পরিণত হয়েছে। তারা ভাববে না ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত হলে উচ্ছেদ হবে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ, ৬ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমি ধ্বংস হবে, এবং এই জমির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটা পরিবার বাস্তুহারা হবে। দিনাজপুর রংপুরের শিল্পোন্নয়ন প্রয়োজন, দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসন করা প্রয়োজন, তবে সবার আগে মানুষ। অবশ্য উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের অন্যসব প্রকল্পও ধীরে ধীরে পরিত্যাক্ত ঘোষিত হয়েছে, এবং জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে এমন উন্মত্ততার নজির নেই কোথাও।

বাংলাদেশের কতিপয় ব্যবসায়ী নেতা অনুভব করছেন মুষ্ঠিমেয় কিছু মানুষের প্রতিরোধে এই কয়লা খনির উন্নয়ন রদ করবার সিদ্ধান্ত সরকারের দুর্বলতার পরিচায়ক। তারা ঢাকার শেরাটন হোটেলে উন্মুক্ত খননের সমর্থনে বক্তব্য রাখছেন যখন ফুলবাড়ীতে ২৬শে আগস্ট ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার ২য় বর্ষপুর্তিতে এশিয়া এনার্জিকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করবার শপথ গ্রহন করছে ফুলবাড়ীর জনতা। তারা এশিয়া এনার্জির হিসাব শুনিয়েছে সংবাদমাধ্যমকে, ডেইলি অবজারভারের সম্পদক ইকবাল সোবহান এই উন্মুক্ত খননের পক্ষে, তার দাবী যারা উন্মুক্ত খননের পক্ষে এবং যারা উন্মুক্ত খননের বিপক্ষে তারা মুখোমুখি বসে আলোচনা করে একটা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারে, অবশ্য শর্তগুলো হলো, যারা বাস্তুচ্যুত হবে তাদের উপযুক্ত পুনর্বাসন। বাংলাদেশে প্রতিবছর এক শতাংশ চাষযোগ্য জমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, এই চাষীদের কোথায় চাষের জমি দেওয়া হবে, যারা চাষ ছাড়া অন্য কিছু শিখে নি জীবনে তাদের ৬০০০ হেক্টর জমি কোথায় দিবে এশিয়া এনার্জি, কোথায় যাবে এই ৫ লক্ষ মানুষ জীবিকার খোঁজে, কয়লা খনিতে কতজন শ্রমিক প্রয়োজন, তাদের বেতন ভাতায় ৫ লক্ষ মানুষের চাহিদা পুরণ হয়ে যাবে? বিকল্প অর্থনৈতিক চক্র, এখানে দোকান খুলে বড়লোক হয়ে যাওয়ার আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখে না ফুলবাড়ী। উন্নয়নের স্বপ্নে মদির আমাদের আসাদুজ্জামান নুর, আমাদের মিজানুর রহমান মানু, আমাদের দিনাজপুর জেলা চেম্বারের প্রতিনিধি এবং রংপুর জেলা চেম্বারের প্রতিনিধিরা সবাই এশিয়া এনার্জির পক্ষাবলম্বন করেছে, অবশ্য এটাই স্বাভাবিক, সব সময়ই ক্ষমতাবানেরা কোনো একটা বিকারগ্রস্থ অর্থনৈতিক উন্নয়ন মডেলের সমর্থক হয়ে যান, এখানে তাদের বর্ণবাদ নেই, চামড়ার রংয়ের বিদ্বেষ নেই, ভাষার বিভেদ নেই, সব ক্ষমতাশালীই অর্থে ঝনঝনানিতে কামার্ত পশু হয়ে যায়।

ফুলবাড়ী জ্বলে উঠবে, যখন সারা দেশ থেকে জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির সদস্যরা প্রতিরোধের শপথ গ্রহন করেছে, যখন ২৬ শে আগস্টকে জাতীয় সম্পদ রক্ষা দিবস ঘোষণার দাবী উঠছে, যখন যেকোনো মূল্য এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিস্কারের দাবি নিয়ে আসছে জনতা, যখন ২০০৬ সালে প্রস্তাবিত ৬ দফা মেনে নেওয়ার দাবিতে ফুলবাড়ীর সবাই সমর্থন জানাচ্ছে, তখন সরকার নিরব। এশিয়া এনার্জি অবশ্য কখনই হাল ছেড়ে দেয় নি, তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্থ দিয়ে মেধা কিনছে, তারা অর্থ ছড়িয়ে জনসমর্থন কিনতে ব্যস্ত, এবং তারা কিছুটা হলেও সফল। তাই মাননীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যখন এশিয়া এনার্জির পক্ষে বক্তব্য রাখছেন তখন তাদের কর্মীরাই ফুলবাড়ীর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শপথ নিচ্ছে। ফুলবাড়ী জেগে উঠুক, উন্মুক্ত খননের প্রহসন বন্ধ হোক, এশিয়া এনার্জির সাথে অবৈধ চুক্তি করা সরকারী কর্মকর্তাদের শাস্তি হোক, এবং এশিয়া এনার্জি যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছে সেই স্বপ্নের বিভ্রান্তি থেকে জেগে উঠুক আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিবর্গ। এই উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনে উত্তর বঙ্গ উষর হয়ে যাবে, এমনিতেই মরুকরণের শিকার উত্তর বঙ্গ, নদীগুলোর নাব্যতা নেই, পলি জমে মৃত নদী, ইছামতির বুকে ধান চাষ হচ্ছে প্রতি বছর, এই সময়ে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের প্রভাবে ভু গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাবে ২০ থেকে ৩০ ফুট।

শুধুমাত্র ৬০০০ হেক্টর জমি যাবে কয়লা খনির গর্ভে, তবে এই কয়লা খনি থেকে পানি অপসারণ করে যেখানে ফেলানো হবে সেটা প্রায় ৫০০০ হেক্টর জমিকে তলিয়ে দিবে প্রায় ১০০ ফুট পানির নীচে, তবে উত্তর বঙ্গ দেশের উঁচু অঙ্চলের একটি, সুতরাং এই ৫ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত জলাধার নিয়মিতি উপচে পড়বে এবং আশে পাশের বিস্তৃর্ণ অঞ্চল তলিয়ে দিবে। আমাদের উন্নয়নের নেশায় মত্ত রংপুরের চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, শিল্পয়নের স্বপ্ন দেখতে থাকা অন্য সব মানুষেরা হয়তো তলিয়ে যাওয়া জমিতেই নতুন শিল্পায়ন ঘটাবেন, তারা হয়তো ৫ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল এক্যুরিয়ামে উন্নয়নের শৈবাল চাষ করে দেশকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিবেন, আমরা শৈবাল বেচে মধ্য আয়ের দেশ হবো অচিরেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.