আর শোনা হবেনা দরাজ কন্ঠের সেই চির আন্তরিক কুশল জিজ্ঞাসা - কী ক্যামন আছো?
আর দেখতে পাবোনা সেই সাফল্যের প্রতিমূর্তি । ছাত্র ছাত্রীদের যিনি মুহূর্তে আপন করে নিতেন, আদর্শ শিক্ষকের মতো গাইড করতেন, তাদের সাফল্যে আনন্দে মেতে উঠতেন, তাদের ব্যর্থতায় ভেঙ্গে পড়তেন শিশুর মতো - সেই চির নবীন শ্মশ্রূমন্ডিত চেহারা আর কখনো খবর নিবেন না তার প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের; আর কোন ছাত্রের খারাপ ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে অল্পদিনের মাঝে তাকে ভালো ছাত্রের দলে ঢোকানোর জন্য প্রাণপাত করবেন আমাদের সবার অতি শ্রদ্ধাভাজন, অতি প্রিয় মিয়া মোঃ মনিরুজ্জামান; তিনি ঘুমিয়ে গেছেন চিরতরে গত রাত একটা পঞ্চান্ন মিনিটে ( ইন্নালিল্লাহি … … .. রাজেউন)।
হাজারো স্মৃতি, সুখ, দুঃখ, আনন্দ বেদনার।
তিনি সম্পর্কে ছিলেন আমার খালু। ১৯৮০ সনে আমার খালার সাথে ওনার বিয়ে হয়।
আমি তখন ক্লাশ সিক্সে পড়ি। উনি আমাদের বাংলা পড়াতেন। তিনি ছিলেন বাংলা ও ইংরেজী উভয় সাহিত্যে মাষ্টার্স করা আমাদের স্কুলের একমাত্র শিক্ষক। লিখতেন ডাবল এমএ। আমরা সেই ছোট বিচ্ছুর দল এটার ব্যাখ্যা করেছিলাম উনি একবারে এমএ পাশ করতে পারেননি বলেই তাকে ডাবল বা দুইবার এমএ করতে হয়েছে।
ধর্মের উপরও তার ছিলো অগাধ দখল।
নাইন টেনে পড়ার সময় তার কাছ থেকেই আমার ভাষা শিক্ষার শুরু। ব্যাকরণ যে একটা মজার বিষয় হতে পারে সেটা আগে জানতাম না। ওনার কাছ থেকে শিখি কীভাবে রচনায় সাহিত্যের ছোয়া দেয়া যায়, কত ছোট করে কত সুন্দর ও প্রাঞ্জল ভাষায় অনুবাদ, প্যারাগ্রাফ বা সারমর্ম ইত্যাদি লিখা যায়। আর এসবের ফসল হিসেবেই বোধকরি এসএসসি তে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ৮০, ইংরেজী উভয় পত্রে ৭৯ করে পেয়েছিলাম সেই ১৯৮৫ তে।
শিক্ষকদের দলাদলির বলি হিসেবে যখন তিনি ওয়েষ্ট এন্ড হাই স্কুল ছেড়ে এলেন, খুব আর্থিক কষ্টে পড়েছিলেন। গড়ে তুললেন মুকুলিকা শিক্ষালয়। আর তারপরই হয়ে গেলেন ইতিহাস। নতুন একটা কিন্ডারগার্টেন কে অলৌকিক মন্ত্র বলে মাত্র চার বছরের মাথায় শহরের অন্যতম ভালো একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিণত করলেন। এরপর দায়িত্ব নিলেন তখন পর্যন্ত অখ্যাত, নিতান্তই মাঝারীমানের বিডিআর হাই স্কুলের।
তিল তিল পরিশ্রমে গড়ে তুললেন একে। নিঃসন্তান এই মানুষটির কাছে বিদ্যালয় আর তার ছাত্রছাত্রীরাই ছিলো সন্তানতুল্য। আজকের রাইফেলস স্কুলের দেশজোড়া সুনামের পিছনে রয়েছে তার নিরলস শ্রম আর মেধা।
আজ তাই প্রার্থনা করি আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসীব করুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।