আমার হাতদুটো পা হয়ে গেলে আর পা হাত; তাহলে কি তুমি করমদর্নের সজ্ঞাটা পালটে দিবে
প্রীয় রাত্রি,
কেমন আছ তুমি? দীর্ঘ পনেরোটি বছর পর একটা চিঠি শূন্যের কাছে ছুঁড়ে দিচ্ছি নষ্টালজিয়ার কাছে নতজানু হয়ে। এখানে সামার টা যাই যাই করছে, হালকা হালকা ছলে শীতের উঁকিঝুকি। এই সময় প্রকৃতি আমাকে বড্ড বেসামাল করে দেয়, একটা গুপ্তচোরা ঘ্রান আমার নিঃশ্বাসের সাথে মিতালী পাতায়ে শিরা-উপশিরায় পরজীবি বাসা বাঁধে। মস্তিষ্কের নিউরনে বেজে উঠে নষ্টালজিয়ার পুরোন ছন্দ।
এখন সেই ছন্দেই আমি দোল খাচ্ছি পেন্ডুলামের মত।
আমি তোমাকে মাঝে মাঝে বলতাম, কষ্টকে নিয়ে ভাবনার অবকাশ রেখোনা। তাহলে কষ্টকে নিয়ে বিলাসিতা করা হয়। তুমি তখন হেসে বলতে- "কষ্টগুলো সুকেসে এমনিতেই জায়গা করে নেয়, বড্ড বেহায়া। " তখনকার সেই শক্ত কথাটি আজ ভূল মনে হচ্ছে- তুমিই ঠিক। এক অদৃশ্যমান শো-কেসে কষ্টের পাপেট গুলো আমার দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে বড্ড উপহাস করে।
আচ্ছা! তোমার কি আমার মত কোন অদৃশ্যমান শো-কেস আছে? একজন কৃপণ কবি, যার অনুর্বর কবিতাগুলো তোমার আঁচলে বাঁধা থাকতো-সেগুলোর বসবাস এখন কোথায়? খুব জানতে ইচ্ছে হয়। একটা বহেমিয়ান ছেলেকে তুমি ডেকে ডেকে ভাত খাওয়াতে, সেই আতিথ্য কি তুলে রেখেছ? আমি জানতাম সেটা মোটেই তোমার সাদর আতিথ্য ছিলনা, শুধু খানিকক্ষনের জন্য বেঁধে রাখতে চাইতে তোমার প্রয়োজনে। আমাদের মনের মাঝে যে মৌলিক ষষ্ঠ অধিকারের ধারা জন্মেছিল তার প্রবলতর তাগিদে।
এই মুহুর্তে কমরেড কথাটি বড্ড কানে বাজছে। চারু মজুমদারের উপর লিখা বই, লেলিন, কালমার্ক্স এদের সবাই কে তুমি বলতে তোমার সতিন।
কিন্তু আমার মধ্যে আমি কমরেড হবার কোন যাবতীয় জ্ঞান বা ইচ্ছা তখন দেখতাম না আর এখনো দেখিনা। তুমি একদিন বড্ড ক্ষেপেছিলে- এখনো মনে পড়লে হাসি পায়। আমাদের সেই প্রথম চুম্বনের বেলাকার কথা। তোমার ঠোঁট যখন আমার ঠোঁটে স্বপ্ন দেখছিল- আমি তখন মজা করে বলেছিলাম, "জানো এদেশের মানুষ অনেকেই চুম্বনের বাসনা নিয়ে বসে আছে কিন্তু চুম্বন গুলো ঠিক মত ভাগ বাটোয়ারা হচ্ছেনা- এর জন্য সমাজতন্ত্রের সঠিক প্রয়োগ দরকার। " ক্রোধে তোমার শরীরের কম্পন আমি অনুভব করেছিলাম, সব কিছু ভূলে আমি একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিলাম তোমার ওষ্ঠে।
সেই থেকেই সমাজতন্ত্র ধারা তোমার চোখের বালি ছিল।
রাত্রি, আবৃত্তি করার পরিবেশ এখন পাইনা এই যান্ত্রিক শহরে- তবুও ভালো কোন কবিতা পেলে এখন গুনগুন করে আবৃত্তি করি, জানিনা তোমার কানে তা সহস্র ক্রোশ দূর থেকে পৌঁছায় কিনা। এখন কিন্তু কৃপণ কবি নই, লিখার মাঝে উর্বরতা এসেছে, অকৃপণ কবি- তোমার গন্ডিতে বাঁধা নেই, একটা পিছুটান জন্মেছে মানুষের জন্য। কেননা মানুষের ভীরকে কষ্ট খুব ভয় পায়, জেঁকে বসেনা। ছবি আকা ভুলতে বসেছি চর্চার অভাবে।
চোখের সামনে সুপারগ্লু দিয়ে বসানো বড় বড় ইমারত কে আমার ইটের জঙ্গল মনে হয় , তাই আঁকাআঁকির চর্চা বাদ।
চোখে চশমা ভর করেছে, রোজ সকালে অফিস যাবার সময় আয়নায় দাঁড়ালে চশমার দাগ স্মরন করিয়ে দেয় বয়সকে। মুখের ক্যানভাসে স্থিরতার ছাপ। এখন আমি আর বহেমিয়ান কমরেড নই- আপোষ করি রোজ জীবনের সাথে।
খুব ইচ্ছা হয় তোমার সাথে কথা বলার, ইচ্ছা করলেই তোমার মুঠোফোনের নম্বর যোগাড় করতে পারি।
কিন্তু করিনা। কেন?
"আলতো ছোয়ায় লজ্জাবতী লাজুক ঘোমটা টানে
পা আমার বাড়ীমুখো- পা বাড়াই
পাছে ক্ষনিক দাম্পত্য কাঁদে---"
কিছু বুঝলে লজ্জাবতী? তুমি ভালো থেকো- আমি ভালই আছি।
ইতি
আদিত্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।