আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর শাহজাহান চৌধুরী

গভীর কিছু শেখার আছে ....

[ ১৯৬৩ সাল থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। এর পাশাপাশি সংলাপ লেখক ও গীতিকার হিসেবে কাজ করেছেন। নির্মাণ করেছেন বেশ কিছু দর্শকনন্দিত ছবি। পাশাপাশি নাটক নির্মাণ ও লেখালেখির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিনি। ] পরিচালক শাহজাহান চৌধুরীর শৈশব-কৈশোরের পুরোটাই কেটেছে চট্টগ্রামে।

তবে মাধ্যমিক পরীক্ষার পর পরই ১৯৬৩ সালে তিনি চলে আসেন ঢাকায়। পড়ালেখার পাশাপাশি মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকেই কাজ শুরু করেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে। প্রথম যে ছবিতে তিনি কাজ করেন তা ছিল পরিচালক কায়সার পাশার উর্দু ছবি মালান। এ ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দ্বীপ ও নাসিমা খাতুন। মজার ব্যাপার হলো, এ ছবিতে তাকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু অভিনয়ের বদলে ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করাকেই তিনি প্রাধান্য দেন। এরপর আরো বেশ কিছু ছবিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আখেরী স্টেশন (১৯৬৫), নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৬), তুম মেরী হো (১৯৬৭), নতুন নামে ডাকো (১৯৬৮), ঘূর্ণিঝড় (১৯৬৯), চৌধুরী বাড়ি (১৯৬৯), বলাকা মন (১৯৬৯), আনাড়ী (১৯৬৯), শপথ নিলাম (১৯৭০), অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (১৯৭২) ও ডুমুরের ফুল (১৯৭২)। এরপর ১৯৭৩ সালে ডিরেক্টর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন শাহজাহান চৌধুরী। কবি আবুল হাসানের গল্প অবলম্বনে সুফিয়া চৌধুরীর সংলাপ ও চিত্রনাট্যে পরিচালনা করেন বাংলা চলচ্চিত্র পিঞ্জর।

ছবিতে অভিনয় করেন উজ্জল, কবিতা, আনোয়ার হোসেন, গোলাম মুস্তাফা, শওকত আকবর প্রমুখ। উল্লেখ্য, পিঞ্জর ছবির মাধ্যমে শাহজাহান চৌধুরী গীতিকার হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। এ ছবিতে সাবিনা ইয়াসমীন ও খন্দকার ফারুক আহমেদের গাওয়া ডুয়েট গান ‘তোমারই উপহার/আমি চিরদিন রেখে দেবো’ এবং ফেরদৌসী রহমানের গাওয়া ‘কি করে তোমাকে ভুলবো/তোমার স্মৃতি আমার জীবনে’ গান দুটি লিখে সর্বমহলে প্রশংসিত হন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত ৩০০-র বেশি গান লিখেছেন তিনি। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় পিঞ্জর ছবিটি।

দর্শক ও বোদ্ধাদের কাছে ছবিটি প্রশংসিত হয়। ১৯৭৮ সালে মাহবুব তালুকদারের অপলাপ অলম্বনে শাহজাহান চৌধুরী নির্মাণ করেন আংশিক রঙিন বাণিজ্যিক ছবি শত্রু। ছবির সাতটি গানই ছিল রঙিন। ছবিতে অভিনয় করেন বুলবুল আহমেদ, সুচরিতা, নূতন, রোজিনা, এ টি এম শামসুজ্জামান, জসীম প্রমুখ। শত্রু ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ পরিচালক নিজেই লিখেছিলেন।

অবশ্য এর আগে ১৯৬৮ সালে মমতাজ আলীর পরিচালনায় নির্মিত নতুন নামে ডাকো ছবিতে শাহজাহান চৌধুরী অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের পাশাপাশি অতিরিক্ত সংলাপ লেখক হিসেবে কাজ করেন। এরপর আরো বেশ কিছু ছবিতে অতিরিক্ত সংলাপ লেখক হিসেবে কাজ করলেও তার রচিত চিত্রনাট্য ও সংলাপ সংবলিত প্রথম ছবি ছিল শপথ নিলাম (১৯৭০)। যা হোক, শত্রু ছবির পর শাহজাহান চৌধুরী লাল সালু ছবিটি তৈরির প্রস্তুতি নেন। কিন্তু পরে ছবির স্ক্রিপ্ট পরিচালক তানভীর মোকাম্মেলকে দিয়ে দেন। এরপর দেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ থেকে দীর্ঘ সময় শাহজাহান চৌধুরী বিরত ছিলেন।

এ সময় তিনি নাটক নির্মাণ ও সাংবাদিকতায় ব্যস্ত সময় কাটান। উল্লেখ্য, কলেজ জীবন থেকেই শাহজাহান চৌধুরী লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৫ সালে সাপ্তাহিক পাকিস্তানী খবর পত্রিকার কালচারাল রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৭৩ সালে বিচিত্রায় কালচারাল রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৩ সাল থেকে মাসিক নিপুণ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে এখন পর্যন্ত কাজ করে চলেছেন।

তবে শাহজাহান চৌধুরী উল্লেখযোগ্য কাজ হিসেবে মনে করেন ১৯৯৬ সালে শওকাত আলীর উপন্যাস অলম্বনে নির্মিত উত্তরের খেপ ছবি নির্মাণ। এ ছবির চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান তার নিজের রচিত। ছবির মূল চরিত্রে ছিলেন প্রয়াত মান্না ও চিত্রনায়িকা চম্পা। ছবির অন্যতম সেরা গান ‘আমি একা বড় একা/এই ভুবনে নেই কেউ আপন’। এ গানের জন্য তিনি বাচসাস পুরস্কার ২০০৪ পান।

এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য চিত্রনায়িকা চম্পা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। মোট ১২টি ক্যাটাগরিতে ছবিটি পুরস্কৃত হয়। সর্বশেষ ২০০৪ সালে শাহাবুদ্দিন নাগরীর কবিতা অবলম্বনে নির্মাণ করেন এক খ- জমি ছবিটি। ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদ ও চম্পা। উল্লেখ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য হিসেবে ছবিটি তৈরির প্ল্যান করা হলেও পরে এটিকে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে নির্মাণ করা হয়।

চলচ্চিত্র ছাড়াও শাহজাহান চৌধুরীর যেসব নাটক অনএয়ার হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রতিপক্ষ (শমী কায়সার, মাহফুজ), দীঘল গাঁয়ের কন্যা (শমী কায়সার, দোদুল), ভালোবাসার মুকুর (হেলাল খান, তমালিকা), শেষ বিকেলের মায়া (জাহিদ হাসান, জয়া) প্রভৃতি। গত ঈদে বিটিভিতে ইলিয়াস কাঞ্চন ও লাক্স তারকা রাহিকে নিয়ে নির্মিত টেলিফিল্ম রুমালী অনএয়ার হয়। সম্প্রতি শেষ করেছেন টনি ডায়েস, মুক্তি, লিটু, রাহিকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক টেলিফিল্ম অন্তহীন ভালোবাসা, হেলাল খান ও ফারাহ রমার নাটক নীল আকাশের নীল তারা প্রভৃতি। এ বছরের শেষ নাগাদ শুরু করবেন রিজিয়া রহমানের মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনা নারীর কাহিনী নিয়ে রক্তের অক্ষর ও তার নিজের উপন্যাস যন্ত্রণার নদী অবলম্বনে ছবি নির্মাণ। রক্তের অক্ষর ছবি প্রসঙ্গে পরিচালক শাহজাহান চৌধুরী বলেন, রক্তের অক্ষর আমার স্বপ্নের ছবি।

এ ছবি নিয়ে আমি অস্কারে যেতে চাই। ঢালিউডের সঙ্গে বলিউডের তফাৎ বা মূল্যায়ন কীভাবে করবেন জিজ্ঞেস করলে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, বলিউডের কলাকুশলীরা যে কোনো কাজ করেন শ্রদ্ধার সঙ্গে। কিন্তু আমাদের এখানকার সবাই কেমন যেন অস্থির। তবে আমার কথা হলো, দেশি চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসছে। নতুন তরুণ পরিচালকরা চলচ্চিত্রে আসছেন।

এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের ছবি এখন তৈরি হচ্ছে, যা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতিবাচক। এক নজরে পুরো নাম : শাহজাহান চৌধুরী জন্মতারিখ : ৩ জুলাই, ১৯৪৬ প্রথম কাজ শুরু : ১৯৬৩ (মালান) প্রথম ডিরেকশন : ১৯৭৩ (পিঞ্জর) গান লিখেছেন : তিন শতাধিক বই লিখেছেন : ১৫টি (কাব্য ও উপন্যাস) স্ক্রিপ্ট লিখেছেন : প্রায় ১২টি

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.