আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকায় বাংলাদেশিরা যেসব কাজ করে থাকেন

ভুমিকা - বেশ কয়েকদিন আগে সামুতে একটা পোষ্ট দেখলাম একজন জানতে চেয়েছেন - আমেরিকায় বাংলাদেশিরা কি কাজ করেন। সে পোস্টে একটা কমেন্ট করেছিলাম। কমেন্ট করার পর মনে হল পোষ্ট দেয়া জন্য বিষয়টা মন্দ নয়। তাই সেই কমেন্ট কে কিছুটা পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন করে এই পোষ্টের জন্ম। আমি যে সিটিতে থাকি, এবং আমি বাংলাদেশিদের যে সব কাজ করতে দেখেছি তার উপর ভিত্তি এবং প্রধান্য দিয়ে তালিকাটা বানানো।

আসুন দেখি আমেরিকায় বাংলাদেশিরা কি ধরনের কাজ করে জীবন ধারণ করে থাকেন। এক - অনেকে রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। যারা ওয়াটার হিসাবে কাজ করেন, তারা সপ্তাহে ৩৫-৪০ ঘণ্টা কাজ করে ১হাজার থেকে ১২শ ডলার রুজি করেন ( যদি সেটা ভাল রেস্টুরেন্ট হয়)। আর ওয়াটারদের এভারেজ ইনকাম হল ৮ শ হলে ১ হাজার ডলার। ব্যাক ওয়াটার বা ফুড রানার হিসাবে যারা কাজ করেন তারা সপ্তাহে ৭শ থেকে ১ হাজার ( যদি সেটা ভাল রেস্টুরেন্ট হয়)।

আর এভারেজ ইনকাম হল ৫ শ থেকে ৮ শ। এমনও আছে যারা রেস্টুরেন্টে কাজ করে বছরে ১০০ হাজার ডলার পর্যন্ত বানায়। আর এদেশের মাস্টার্স পাশ আমেরিকান পুলা মাইয়ারাও এই কাজ করে থাকে। অনেকে বারে বার-টেন্ডার হিসাবে কাজ করেন, অনেকে বার ব্যাক হিসাবে কাজ করেন, অনেকে ক্লাবেও কাজ করেন। এসব কাজ ম্যাক্সিমাম ইয়াং ছেলেরা করে থাকে, অনেক মাঝারি বয়সের লোকজনও এসব কাজ করে থাকেন।

দুই – অনেকে আবাসিক হোটেলে কাজ করেন। এই জব অন্য সব প্রফেশনাল জব থেকে অনেক ভাল। অনেক ভাল সেলারি, অনেক ভাল বেনিফিট। আমার পরিচিত অনেকে আছেন যারা এদেশের ভাল ভাল ভার্সিটি পাশ করা কিন্তু হোটেলে কাজ করেন । তারা যে অফিসিয়াল কাজ পান না সেটা না, অফিসিয়াল জবে যে টাকা পাবেন তার থেকে ডাবল পয়সা হোটলে এবং বেনিফিটও বেশি।

তাদের এভারেজ সেলারি বছরে ৬০ হাজার থেকে শুরু করে ১২০ হাজার ডলার পর্যন্তও আছে। এটা একটা ইউনিয়ন জব। এই ধরনের ইউনিয়ন জবে জব সিকিউরিটি আছে। হুট করে জব চলে যাবার চান্স নেই। আর যদি কারো জব চলে যায় ইউনিয়ন তার সব দায়িত্ব নিবে।

ইউনিয়ন আরেকটা নতুন জবের ব্যবস্হা করে দিবে। নতুন জব না হওয়া পর্যন্ত সাপ্তাহিক একটা সেলারি দিয়ে যাবে। তিন - অনেকে ট্যাক্সি ক্যাব চালান। এটা একটা ফ্লেক্সিবল জব। টাকাও ভাল ।

সপ্তাহে পাঁচদিন চালালে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা হয়ে যায় । আর স্টুডেন্ট দের জন্য বেস্ট জব। এখানে কালো, হলুদ হরেক রকমের ট্যাক্সি আছে। এই ক্যাব চালাতে আলাদা লাইসেন্স বানাতে হয়, কোন কোন ক্যাব চালাতে হলে আলাদা টেস্ট দিতে হয়। সেই টেস্টে পাশ করলে তখন লাইসেন্স দেয়া হয়।

অনেকে নিজস্ব ক্যাব কিনে নিজের ক্যাব নিজে চালায়। অনেকে ট্যাক্সি চালিয়ে এখানে মিলিনিয়ার। যাদের এখানে নিজের একটা ট্যাক্সি আছে তারা এখানে রাজার হালতে আছে। স্পেশিয়ালি নিউইয়র্কে যাদের নিজের হলুদ ক্যাব আছে। চার - অনেকে আছেন অনেকদিন ধরে এখানে যাদের অনেকের নিজস্ব ব্যবসা আছে।

ব্যবসা বলতে ডেলি গ্রোচারি, রেস্টুরেন্ট, হাঁস মুরগীর ফার্ম , গিফট শফ, গ্যাস স্টেশন, মোবাইল এক্সোসরিসের দোকান, সেলুন ইত্যাদি । এসব ব্যবসায় যারা কাজ করে তারাও বাঙালি। যারা এসবে কাজ করে তাদের আয় সপ্তাহে ৩০০-৫০০ ডলার। যারা অবৈধ তাদের জন্য এসব কাজ আশীর্বাদ স্বরূপ, কারণ এসব কাজে ক্যাশে পেমেন্ট করা হয়। আর অবৈধদের জন্য ক্যাশে ছাড়া কাজ করা প্রায় অসম্ভব।

পাঁচ - যারা মধ্য বয়স্ক, একটু বয়স্ক মানুষ দেশ থেকে আসেন, তারা কাজ পেতে এখানে একটু সমস্যা হয়। তাদের জন্য সিকিউরিটি হল বেস্ট জব । তাই এই বয়সি লোকজন সিকিউরিটিতে কাজ করতে প্রায়ই দেখা যায়। এর জন্য তাদের আলাদা ট্রেনিং করে একটা সার্টিফিকেট নিতে হয়। তারা ঘণ্টায় ৮-১৫ ডলার পর্যন্ত আয় করেন।

সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করলে চেকে ট্যাক্স বাদে ৩২০-৪০০ ডলার থাকে। ছয় - অনেকে ভেন্ডারি করেন। ভেন্ডারি মিন রাস্তায় কার্টে করে খাবার বিক্রি করেন। অনেকে আবার ফল, শাক সবজি বিক্রি করেন। এই গুলার জন্য আলাদা ভেন্ডার লাইসেন্স বের করতে হয়।

এটা একটা মনো-পলি ব্যবসা, অনেকে এই ব্যবসা করে মিলিনিয়ার। যাদের নিজস্ব ভেন্ডার কার্ট আছে, তারা মানুষ রেখে কাজ করায়। যারা কাজ করে তারাও বাঙালি। তাদেরকে ডেইলি ১০০ ডলার করে দেয়া হয়। অবৈধদের অনেক কে এই কাজ করতেও দেখা যায়।

সাত -অনেক ফাস্ট ফুডের দোকানে কাজ করে লাইক ম্যাকডোনাল্ড, সাবওয়ে,বার্গার কিং, ডানকিন ডোনাট,ডমিনো পিজা ইত্যাদি। এসবের সেলসে বেশির ভাগ বাঙালি মেয়েরা কাজ করে। ছেলেরা যারা কাজ করে কিছুদিন কাজ করে ম্যানেজার হয়ে যায়, মেয়েদেরও অনেকে হয়। সেলসে যারা কাজ করেন তারা ঘণ্টায় ৭.৫০ -১০ ডলার করে আয় করেন । সাপ্তাহিক ৪০ ঘণ্টা কাজ করলে আফটার ট্যাক্স ২৫০-৩০০ ডলার।

আর যারা ম্যানেজার লেভেলে তাদের ইয়ারলি সেলারি ২৫ থেকে ৩৫ হাজার ডলার। অনেকে ডেলিভারির কাজও করেন। আট - অনেকে ফার্মেসিতে কাজ করেন। এদেশের ফার্মেসির সাথে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরও থাকে। এখানে অনেকে এসোসিয়েট হিসাবে ৪/৫ বছর কাজ করে স্টোর ম্যানেজার হয়ে যায়।

এসব ফার্মেসী ম্যানেজারদের সেলারিও খারাপ না। ইয়ারলি ৪০ থকে ৭০ হাজার ডলার। যারা এসিসটেন্ট ম্যানেজার তাদের সেলারি ইয়ারলি ৩০-৪৫ হাজার ডলার। আর যারা এসোসিয়েট হিসাবে সেলসে ঢুকে তারা আয়ার-লি রেট ৭.৫০ থেকে ১০ ডলার। ঠিক তদ্রূপ অনেকে সেলস এসোসিয়েট হিসাবে বড় বড় কাপড়ের দোকান, গাড়ির দোকান, মোবাইল কোম্পানিতে কাজ করেন।

অনেকে এয়ারপোর্টের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করতে দেখা যায়। নয় - অনেকে সিটি জব করেন। এটা অনেকটা আমাদের দেশের সরকারি জবের মত। ট্রাফিক পুলিশ, রেগুলার পুলিশ, রেল বিভাগ, বাস বিভাগ, পোস্ট অফিস ইত্যাদি যে সব ডিপার্টমেন্ট গুলা সিটির আন্ডারে আছে। এই জব গুলার জন্য আলাদা টেস্ট দিতে হয়।

সে টেস্টে পাশ করলে তারপর ছয়মাস ট্রেনিং করতে হয়। ট্রেনিং শেষে তারপর পোস্টিং দেয়া হয়। ঠিক তদ্রূপ কিছু কিছু স্টেইট জব আছে। এসব জবের প্রাইমারি সেলারি ৩০- ৪৫ হাজার ডলার হয়ে থাকে। আস্তে আস্তে সেলারি বাড়ে প্লাস এসব জবে অনেক বেনিফিটও আছে।

দশ- আইটি ফিল্ডে বাংলাদেশিদের অবস্থান ঈর্ষণীয়। এবং দিন দিন এর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। ইন্ডিয়ান চাইনিজদের পরেই বাংলাদেশিদের অবস্থান। সেলারি ও বেনিফিট অনেক ভাল। অনেকে ডেভেলপার, ডিজাইনার, টেষ্টার হিসাবে কাজ করছেন, অনেকে হার্ডওয়ার সাইট, হেল্প ডেস্কে কাজ করছেন।

এদের ইয়ারলি সেলারি ৫০- ১৫০ হাজার পর্যন্ত। ওদের অনেকে ঘরে বসেও কাজ করেন। এগার - মেডিকেলের প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টে বাঙালিদের অবস্থান চোখে পড়ার মত। ডাক্তার, ডেন্টিস্ট থেকে শুরু করে নার্স, পি এ, এইড, ফার্মাসিস্ট, বিভিন্ন রকম টেকনিশিয়ান প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টে দিন দিন বাঙালিদের সংখ্যা শুধু বাড়ছে। ডাক্তার, পি এ, নার্সদের তো সেলারি অনেক ভাল।

আর বাদ বাকি যারা আছেন তাদেরও খারাপ না। অনেক ডাক্তার আছেন যাদের নিজস্ব মেডিকেল অফিস আছে। অনেক ডেন্টিস্ট আছেন যাদের নিজস্ব ডেন্টিস্ট অফিস আছে। সেসব অফিসগুলাতে অনেক বাংলাদেশি ডেন্টাল এসিসটেন্ট, মেডিকেল এসিসটেন্ট, রেসিপ্সনিস্ট, ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছেন। বার - অনেকে আছেন উকিল যদিও সংখ্যায় একটু কম।

তবে অনেকে পেরা লিগ্যাল হিসাবে ল কোম্পানিতে কাজ করেন। অনেকে আবার ল'অফিসে ক্লারিকাল বা ম্যানেজমেন্টে কাজ করেন। তেরো- অনেকে ব্যাংকে কাজ করেন। ট্রেলার হিসাবে যারা কাজ করে তারা আয়ার-লি ১২-১৫ ডলার পায়। যারা কাস্টমার সার্ভিসে কাজ করেন তারা আরেকটু বেশি সেলারি পান।

আর যারা ম্যানেজিং লেভেলে তাদের ইয়ারলি সেলারি ৩৫-৬০ হাজার ডলার । চৌদ্ধ- অনেকে বিভিন্ন কোম্পানি একাউন্টেড হিসাবে কাজ করেন, যাদের সেলারি ৪৫-৭০ হাজার ডলার। অনেকে সিপিএ হিসাবে কাজ করেন যাদের সেলারি ৫৫-৯০ হাজার ডলার। অনেকে নিজস্ব ফার্ম খুলে নিজের কাজ নিজে করছেন। এসবের সাথে অনেকে রিয়েল ষ্টেট বিজনেস, ইমিগ্রেশনের কাজও করে থাকেন।

পনের - এখানে অনেক বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা আছে। অনেকে সেসব পত্রিকায় কাজ করেন। অনেক মহিলারা ঘরে বেবি সিটিং করেন। অনেকে আবার চাইল্ড কেয়ার সেন্টারেও ঘন্টায় ৯-১০ ডলারে কাজ করেন। অনেক স্টুডেন্ট আছেন বাসায় বাসায় গিয়ে ঘন্টায় ১০-১৫ ডলারে টিউশনি করান।

অনেকে আবার কোচিং সেন্টার খুলে ব্যাচে ছাত্র পড়ান, এটা একটা ভাল বিজনেস। অনেক হুজুর আছেন যারা বাসায় বাসায় গিয়ে ঘন্টায় ১০-১৫ ডলারে আরবী পড়ান। ষোল অনেকে আছেন ইন্জিনিয়ার, সংখ্যায় একটু কম। তবে দিন দিন বাড়ছে কারণ এখানে জন্ম নেয়া বাঙগালি ছেলেমেয়েরা ইন্জিনিয়ারের বিভিন্ন বিভাগে পড়াশুনা করছে। সতের অনেকে ক্লিনিংয়ের কাজ করেন।

বড় বড় অফিস ব্লিল্ডিং বড় বড় অপার্টমেন্ট ব্লিল্ডিং ক্লিনিং। কেউকেউ ক্লিনিং কোম্পানীর আন্ডারে কাজ করেন,কারোকারো আবার নিজেরই ছোট কোম্পানী আছে। এই কাজে পয়সা অনেক ভালো। আটারো আরও কিছু কিছু কাজ আছে যেগুলা আমরা বাংগালীরা করে থাকি যেমন - মুভিংয়ের কাজ, প্লাম্বিং, কন্সট্রাকশন। এইগুলাতেও পয়সা ভালো।

উনিশ - অনেকে টিচিং করেন স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে ভার্সিটি পর্যন্ত। অনেক ভাল ভাল কলেজ ভার্সিটিতে বাংলাদেশি অনেক এসিসটেন্ট/এ্যাসোসিয়েট/ফুল প্রফেসর পর্যন্তও আছেন। অনেকে ভার্সিটিতে গবেষক হিসাবে কাজ করছেন। আবার অনেকে স্কুলে পার্ট-টাইম এসিসটেন্ট টিচার হিসাবেও কাজ করেন। উপসংহার - আমেরিকা এমন একটা দেশ যেখানে কোন কাজকে কেউ ছোট করে দেখেনা।

এখানে কোন কাজই ছোট নয়। এখানে মিলিনিয়ার রা যেমন বিএমডব্লিউ, লেক্সাস দৌড়ায় ঠিক তেমনি রাস্তার ঝড়ুদারও বিএম ডব্লিউ, লেক্সাস দৌড়ায়। যে যে টাইপ কাজ করুক না কেন, সে সেই কাজে বস। একটা উদহারণ দেই - মনে করেন কেউ কোন অফিসে সিকিরিউটিতে কাজ করেন। যদি ওবামা আসে তার অফিসে, এখন যদি সেই সিকিরিউটি পারমিশন না দেয় অফিসে না ঢুকার, তাহলে ওবামা ভিতরে ঢুকতে পারবেন না।

সে পারমিশন না দেয়া পর্যন্ত বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এখানে চাকরীর জন্য কোনরকম ঘুষ বা কমিশন দিতে হয়না অথবা কোন কাজ কাজ করাতে গেলেও ঘুষ বা কমিশন দিতে হয়না। যার যে যোগ্যতা আছে সেই যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করে। যে লাইনে আগে দাঁড়াবে সেই আগে কাজ শেষে বাড়ি ফিরবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.