দ্যা ব্লগার অলসো.....
(অনেক দিন বিরতির পর স্বপ্নচোর ধারাবাহিকটি পোস্ট করলাম। যারা সময় নিয়ে সিরিজটি পড়ছেন, এবং পোস্ট করার জন্য তাগাদা দিয়েছেন, তাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি)
আগের পর্বগুলো পড়ুন, এখানেbr /> স্বপ্নচোর -১ম পর্ব
স্বপ্নচোর-২য় পর্ব
স্বপ্নচোর-৩য় পর্ব
স্বপ্নচোর-৪র্থ পর্ব স্বপ্নচোর-৫ম পর্ব
স্বপ্নচোর-৬ষ্ঠ পর্ব স্বপ্নচোর-৭ম পর্ব স্বপ্নচোর-৮ম পর্ব
একটু পরেই শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি, ইংরিজিতে যাকে বলে ক্যাটস অ্যান্ড ডগস। জয় প্রাণভরে উপভোগ করতে লাগলো শ্রাবণ দিনের মন আনচান করা বর্ষণ। টার্মিনালের ছাউনিতে, দোকানে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো ওকে দেখতে লাগলো। তবে সে সম্পর্কে ও একদমই ওয়াকিবহাল নয়।
আপনমনে দাঁড়িয়ে আছে ও।
একসময় দেখা গেলো, রবীন্দ্রনাথ’র ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ ধরনের বর্ষণ নজরুলের বিদ্রোহী কবিতায় রুপ নিয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের আশির্বাদ পুষ্ট সরু এবং আবর্জনায় ভরা ড্রেনগুলো ফুলে-ফেঁপে রাজপথে চলে এসেছে। পানি বাড়তে বাড়তে হাঁটু ছাড়িয়ে উপরে উঠতে চাইছে।
হাঁটু পানিতে কতোক্ষন আর হাঁটা যায়।
তাছাড়া ড্রেনের ময়লা, বৃষ্টির পানির সাথে বন্ধুত্ব পাতানোয়, বৃষ্টি ভেজার বিলাসি শখটা বাদ দিতে হলো। টার্মিনালের ফাস্টফুড শপে গিয়ে দাঁড়ালো জয়। মাথা নেড়ে পানি ঝাড়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলো ও। তারপর হঠাৎই চোখ পড়লো মেয়েটার উপর।
প্রথমে বিস্মিত এবং পরে আনন্দ, দুটো মিলিয়ে অবর্ণনীয় এক অনুভূতির সৃষ্টি করলো ওর মনে।
আলো; ওর স্বপ্নের নারী, ওর জীবনের এক সোনালী অধ্যায়, ওর যা কিছু আনন্দ, ওর যা কিছু আপন; ওর সামনে দাঁড়িয়ে! পরিবেশ পরিস্থিতি ভুলে গিয়ে ছুটে গেলো ওর কাছে জয়, চিৎকার করে বলে উঠলো-‘আলো, তুই!’
যার উদ্দেশে বলা হলো সে প্রথমে জয়ের দিকে তাকালো, মুখের উপর উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তার রেখা স্পষ্ট।
মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো।
জয় দ্বিতীয়বার চিৎকার করার আগেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিলো। কারণ যাকে আলো ভেবে ও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলো, সে ওকে চিনতেই পারেনি। তার মানে এই, মেয়েটা আলো হতেই পারেনা।
যুক্তিটা যদিও বেশ শক্ত, তবু ওর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলোনা, কারণ, আলোর সাথে মেয়েটার চেহারার মিল।
‘সরি, আমি আপনার সাথে একজনকে মিলিয়ে ফেলেছিলাম। ’ ব্যাখ্যা দেবার সুরে বললো জয়, কারণ মেয়েটা এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। জয়ের ব্যাখ্যা ওর মনঃপুত হলো কিনা বোঝা গেলোনা, কারণ মেয়েটা এখন অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে।
বৃষ্টি এখনো ঝড়ছে, আর সেটাই মেয়েটাকে ভালো করে দেখার সুযোগ করে দিলো জয়কে।
ওর পরনে আকাশনীল রঙের শাড়ি। চেহারায় রাত জাগার চিহ্ন স্পষ্ট, কিন্তু সেটা ওর চেহারার লাবণ্যকে এতটুকু ম্লান করতে পারেনি। দুহাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত পুরোটা জুড়ে নীল রঙের চুরি। জয়ের কেন যেন মনে হলো, বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছে মেয়েটা।
ওকে দেখতে দেখতে ওর আবারো মনে হলো, এ আলো না হয়েই যায়না, আবার ভালো করে দেখাতে পার্থক্যটাও চোখে পড়লো।
আলোর মুখটা গোল, আর এর একটু লম্বাটে ধরণের। শুধু এই, আর সবকিছুই আলোর সাথে মিলে যায়।
মেয়েটার হাতে একটা ব্যাগ, জয় আন্দাজ করলো, ব্যাগের মধ্যে কাপড়-চোপড় ছাড়াও মূল্যবান কিছু থাকতে পারে। ভাবনাটা মাথায় আসতেই, নিজেকে ইডিয়ট বলে গাল দিলো ও, এখানেও মাথায় জোচ্ছুরির চিন্তা।
বৃষ্টি থেমে গেলো, সাথে সাথেই জয় ভাবলো, কেন থেমে গেলো, কারণ বৃষ্টি থেমে যাওয়া মানে যে যার গন্তব্যে চলে যাওয়া, মেয়েটা নিশ্চয়ই বৃষ্টির জন্যই তার গন্তব্যে যেতে পারছেনা।
বৃষ্টি থামার পাঁচ মিনিট পরেও সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো মেয়েটা, সাথে সাথে জয়ও, উদ্দেশ্য ডুপ্লিকেট আলোকে আরো ভালো করে দেখা। তবে এর বেশী আর থাকা গেলোনা, কারণ, মেয়েটা ঘন ঘন ওর দিকে তাকাচ্ছে, তাকানোর ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে, ও বিরক্ত বোধ করছে।
দোকান থেকে বেরিয়ে গেলো জয়, তবে একেবারে যে চলে গেলো তা নয়। মেয়েটাকে দেখার পর কিছুতেই ওকে মন থেকে তাড়াতে পারছেনা। তাই আড়াল থেকে ওকে দেখতে লাগল।
যেন আলোই আবার ওর কাছে ফিরে এসেছে, এত মিল দুজনের চেহারায়। প্রায় দশ মিনিট কেটে গেলো এভাবেই, জয় অবাক হলো, এখনো মেয়েটা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। চেহারায় রাজ্যের দুশ্চিন্তা, অজানা আশংকায় কালো মেঘ জমেছে সেখানে। জয় মোটামুটি নিশ্চিত, কোনো বিপদে পড়েছে মেয়েটা। ভেতর থেকে একটা তাগিদ বোধ করল ও, মেয়েটাকে সাহায্য করতে হবে।
কিন্তু কিভাবে? গায়ে পরে সাহায্য করতে যাওয়া, অভদ্রতার পর্যায়ে পড়ে।
তবে বেশিণ ভাবতে হলোনা ওকে, কারণ মেয়েটাকে সাহায্য করার মোক্ষম একটা সুযোগ এসে গেলো। ষন্ডা চেহারার তিনজন লোক ওর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে,বোঝাই যাচ্ছে ওদের মতলব খুব একটা ভালো নয়। জয় মোটামুটি সাহসী, তবে বীরত্ব দেখাতে গিয়ে পৈত্রিক প্রাণটা খোয়াবার কোন ইচ্ছে ওর নেই। ও তো আর সিনেমার নায়ক নয় যে, তিন-চার জন লোককে একাই মেরে কাত করে দেবে।
কিন্তু ভাবনাটা বেশিণ স্থায়ী হলোনা, কারণ ইতিমধ্যে লোকগুলো ওর সাথে কথা বলতে শুরু করেছে। এতো দুর থেকে কথা শোনা না গেলেও, জয় মেয়েটার চেহারা দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারছে, আর যাই হোক লোকগুলো ওকে রবীন্দ্রসংগীত শোনাচ্ছে না।
চলবে......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।