দ্যা ব্লগার অলসো.....
এক.
রাতটা জোছনা ধোয়া, বৃষ্টি হয়েছে এক পশলা। বৃষ্টির পানি সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশের উপর এক অপরূপ দৃশ্যের অবতারণা করেছে। জয় পাহাড়টার নাম জানে না, হয়তো হিমালয় হবে, কিংবা পৃথিবীর স্বর্গ কাশ্মীর এর কোনো সুউচ্চ পর্বত। হাত বাড়ালেই মেঘ ছোঁয়া যাচ্ছে; এতোটাই উঁচু। জয় একা নয়, ওর সাথে পরীর মতো একটা মেয়ে।
জয় কোনোদিন পরী দেখেনি, পরীরা কিরকম হয় ও জানেনা। ছোটবেলায় মার কাছে প্রায় শুনতো পরীদের গল্প, সেই থেকেই ওদের সম্বন্ধে একটা ধারণা গেঁথে আছে মনে।
দুধে আলতা গায়ের বরন মেয়েটার, টানা টানা দুটি চোখ, আরব্য রজনীর শাহরাজাদের উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা নায়িকাদের মতো। মেয়েটা হাসলে মুক্তো ঝরে, আর একটা একটা করে সেগুলো কুড়িয়ে নেয় জয়। তবে পরীদের সাথে মেয়েটার পার্থক্য একটাই; ওর দু’পাশে ডানা নেই, পরীদের যেমন থাকে।
তবে ডানা ছাড়াই উড়তে পারে ও। আসলে জয় জানে, মেয়েটা উড়তে পারে না, তবে ও হাঁটলেই মনে হয় মাটিতে ওর পা পড়ছে না, যেন উড়ে চলেছে ।
অনেকক্ষণ যাবৎ মেয়েটা ওর সাথে দুষ্টুমি করছে, কিছুতেই কাছে আসছে না। জয় ধরতে গেলেই ছুটে পালিয়ে যায়। কিছুতেই ওর সাথে দৌড়ে পেরে উঠছেনা।
আর যতোবার ওর নাম ধরে ডাকতে যায়, ততোবারই অবাক হয়ে লক্ষ করে, কিছুতেই মেয়েটার নাম মনে করতে পারছে না ও। অথচ জনম জনমের পরিচয় ওদের।
দৌড়াতে দৌড়াতে পাহাড়ের শেষ মাথায় খাদের কিনারায় পৌঁছে গেলো মেয়েটা, ওর পিছন পিছন জয়ও। দারুণ ভয়ের সাথে লক্ষ করলো , আর দু’ কদম এগোলেই পড়ে যাবে মেয়েটা। নাম ধরে ডাকতে গেলো ও, এবং সেই একই ব্যাপারের পুনরাবৃত্তি ঘটলো, কিছুতেই ওর নাম মনে করতে পারলো না সে।
জয় দেখলো খাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালো মেয়েটা, তারপর পেছাতে শুরু করলো। জয় আবার ওকে সাবধান করার জন্য চিৎকার করতে যাবে, এ সময় ও দেখলো মেয়েটা অবলীলায় শূন্যে দাঁড়িয়ে আছে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে নিচে পড়ে যায়নি। আকাশে ভাসতে থাকা মেঘগুলো ওকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। একই সাথে আশ্চর্য এবং আতঙ্ক বোধ করলো জয়, এ কী করে সম্ভব!
তারপর এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটতে শুরু করলো, মেয়েটা দু’হাত মেলে ওকে ডাকতে লাগলো : ‘এসো জয়, এসো!’ নেশা ধরানো কন্ঠে বললো ও। জয় সম্মোহিত হয়ে গেলো মাদকতাময় ওই ডাকে, নিজের অজান্তেই হাঁটতে শুরু করলো কিনারার দিকে, যেখানে শূন্যে দাঁড়িয়ে ওকে ডাকছে মেয়েটা।
এক পা দু পা করে পৌঁছে গেলো শেষ মাথায়। তারপর যখন শূন্যে পা রাখলো আচমকাই শুরু হয়ে গেলো পতন। জয় আর্তনাদ করেছিলো, তবে তার আগে ও একটা ভীতিকর আওয়াজ শুনতে পেলো, হাসির আওয়াজ। হাসছে মেয়েটা, খলখল শব্দে কাঁপিয়ে দিচ্ছে পাহাড়, আকাশ, রাতের নিস্তব্দতা।
ঘুম ভেঙে গেলো জয়ের।
দারুণ পানির পিপাসা পেলো ওর, গলা শুকিয়ে সাহারা মরুভূমি। বিছানা থেকে নেমে টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাসের পুরোটা খালি করলো।
আজকে সহ নয় রাত, হিসেব করে দেখলো জয়। মাঝখানে তিন রাত গ্যাপ ছিলো, আজকে আবার। কেন যে এই স্বপ্নটাই বারবার আসে, বুঝতে পারে না ও।
সাবজেক্ট এক, পরিবেশ ভিন্ন। পতনটা সবসময় থাকে।
জয় দেখে, সে পড়ে যাচ্ছে, কখনো কোনো বিল্ডিং এর ছাদের উপর থেকে, কখনো পাহাড়ের উপর থেকে। কখনো আবর্জনার মধ্যে,কখনো খাদের মধ্যে। এর মানে কি হতে পারে? ভাবছে জয়, বিধাতা কি ওকে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন যে, ও ডুবে যাচ্ছে অন্ধকারে, ওর স্থান আবর্জনায়?
''আলো থেকে অন্ধকারের কিছুই দেখা যায়না, অন্ধকার থেকে আলোর সবই দেখা যায়।
'' জয় অন্ধকারের মানুষ, অন্ধকারকে ওর ভয় পাবার কোন কারণ নেই।
সকাল দশটায় ঘুম ভাঙলো জয়ের। শেষ রাতের দিকে ঘুম এসেছিলো, হয়তো আরো অনেকক্ষণ ঘুমানো যেতো, যদি না জানালা দিয়ে আস্ত সূর্যটা ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়তো। ওর ঘরের এই জানালাটায় না আছে গরাদ, না পর্দা। কিনবো কিনবো করেও জানালার জন্য একটা পর্দা কেনা হচ্ছেনা।
সকালবেলা যখন চোখের উপর সূর্যের আলো এসে পড়ে, তখন ভীষণ রাগ হয় ওর, ইচ্ছে হয় তক্ষুনি এই বস্তি ছেড়ে ভালো কোনো বাসায় গিয়ে উঠতে, যেখানে বেডরুমের দক্ষিণমুখো একটা জানালা থাকবে, জানালার পর্দাটা হবে আকাশ নীল, সেই সাথে লাগোয়া একটা ব্যালকনি। জানালা খুললেই ব্যালকনিতে দাঁড়ানো যাবে, আর ওই আকাশ-নীল পর্দাটা টেনে দিয়ে যতোক্ষণ ইচ্ছে ঘুমানো যাবে।
ব্যালকনিঅলা বাসায়ও কখনো ওঠা হবেনা,আর সুখের ঘুমও দেওয়া হবেনা; মুরাদপুরের এই খুপড়ি বস্তিতেই ওকে জীবন কাটাতে হবে। তাই আকাশ-কুসুম কল্পনার জগত থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনলো জয়।
ক্রমশ.....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।