আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নচোর- ৩য় র্পব

দ্যা ব্লগার অলসো.....

ফখরুদ্দিনের বউ ঘোমটা মাথায় দেওয়া একটা মোষকে (প্রথমে তাই ভেবেছিলো ও) সঙ্গে করে নিয়ে এলো। ওর পাশে বসানো হলো মোষটাকে। জয় এসবের মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছিলোনা, কোন প্রশ্ন করার সাহসও হলোনা। ‘সালাম কর, মা, সালাম কর,’ বলল ফখরুদ্দিনের বউ। বলার যা দেরি, সাথে সাথে হুকুম তামিল করলো মেয়েটা।

হতভম্ব জয় এমনকি পা সরিয়ে নেওয়ারও সময় পেলোনা। ‘ঘোমটাটা সরাও না, ছেলেটা একটু দেখুক। ’ বউয়ের উদ্দেশে বললো ফখরুদ্দিন। কাপড় দিয়ে ঢাকা এক দলা কয়লার উপর থেকে যেন কাপড় সরানো হলো। দেখে তাই মনে হলো আতংকিত জয়ের।

‘এতো সাক্ষাত মা কালী!’ মনে মনে বলল ও, আরেকটু হলে সরাসরিই বলে ফেলতো। ‘তোমরা কথা বলো, আমরা আসছি। ’ জলহস্তীর সাথে জয়কে একা রেখে বেরিয়ে গেলো স্বামী-স্ত্রী। ‘কিছু বলছোনা যে,’ মদির (জয়ের মনে হলো মরণ) কটাক্ষ হেনে বললো মা কালী, জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকা জয়ের উদ্দেশে। ‘অ্যাই মেয়ে, অ্যাই, কোন সাহসে আমাকে তুমি করে বলছো, অ্যাঁ?’ রাগে ফেটে পড়লো জয়।

‘ওমা, তুমি করে বলবোনা তো কি আপনি করে বলবো, ক’দিন পর....’ গলায় আহ্লাদ মা কালীর। ‘ক’দিন পর কী, অ্যাঁ, কদিন পর কী? শোনো মেয়ে, আয়নায় নিজেকে আপাদমস্তক দেখো, তারপর এরকম স্বপ্ন দেখার সাহস করো। তুমি জানো কী রকম লাগে তোমাকে?’ ‘কী রকম?’ ‘ফানুস দেখেছো, ফানুস? বড়–য়ারা পার্বনে উড়ায়। তুমি হচ্ছো ফানুস, ঢাউস সাইজের ফানুস। আর রঙটাও মাশাল্লা, কারেন্ট চলে গেলে তো তোমাকে দেখাই যাবেনা!’ যদিও ফখরুদ্দিনের উপর ভীষণ রেগে গিয়েছিলো ও,তবু কথাগুলো বলার পর জয়ের নিজের কাছেই বেশ খারাপ লাগলো।

এখানে মেয়েটার তো কোন দোষ নেই। দোষ হচ্ছে ফখরুদ্দিনের, মেয়ে অসুন্দর বলে রাস্তা থেকে লোক ধরে এনে বিয়ে দিতে হবে নাকি! তবে যার উদ্দেশে উত্তপ্ত বাক্যবাণ বর্ষণ করা হলো সে কিন্তু নির্বিকার। জয়ের কথাগুলো যেন ওর কানেই যায় নি, বললো-‘আজ কিন্তু আপনি খেয়ে যাবেন, বাবা বলেছে আপনাকে যেন যেতে না দেই। ’ ‘কেন গো, আমি কি আলাদীনের চেরাগ, নাকি সলোমনের গুপ্তধন, যে আমাকে যেতে দেওয়া যাবেনা?’ মনে মনে বলল জয়। সুযোগ বুঝে সেখান থেকে ভেগেছিলো জয়, আসার সময় এমনকি একবার ওদের বলে পর্যন্ত আসে নি।

জানে কাজটা উচিত হয়নি, কিন্তু ফর্মালিটি করতে গেলে বিপদ বাড়তো বৈ কমতো না। তাই পালিয়ে চলে এসেছিলো ও। পরে ফখরুদ্দিন ওকে অনেকবার বলেছে যে এভাবে চলে আসাটা ওর মোটেও উচিত হয়নি। সখিনার মা (মেয়েটার নাম সখিনা) ওর জন্য অনেক আয়োজন করেছিলো। সব নাকি বরবাদ হয়েছে।

জয় তখন মনে মনে বলছিলো ‘আমার জীবন বরবাদ হওয়ার চেয়ে খানা বরবাদ হওয়াটা তেমন বেশি কিছু নয় গো। ’ মদিনা হোটেলে ক্যাশ এর পাশে একটা সিডিসেট আছে, যেটায় এ মুহূর্তে ফুল ভলিউমে হিন্দি গান চলছে। মন দিয়ে শুনছে জয়। গানের কথা শোনা যাচ্ছেনা অত্যাধিক মিউজিকের কারণে, তবু ওর কাছে চেনা চেনা লাগছে গানটা। মন দিয়ে শুনতেই চিনতে পারল।

পুরোনো দিনের গান, রিমিক্স বানানো হয়েছে। রিমিক্স গানের ব্যাপারে ওর একটা অপিনিয়ন আছে। সেটা হচ্ছে এরকম, ‘‘খুব সুন্দর একটা মেয়ের চেহারায় প্রথমে এসিড মারা হলো, তারপর ওর সেই মুখের উপর করা হলো প্লাস্টিক সার্জারি। এতে যদিও কোনোরকমে ওর চেহারাটা ঢাকা গেলো, কিন্তু আগের সেই সৌন্দর্য ফিরে পাওয়া গেলোনা মোটেও। ’’ জয়ের চোখে রিমিক্স গানগুলো এরকমই।

মদিনা হোটেল থেকে বেরিয়ে এলো জয়, তক্ষুনি ওর মোবাইল বেজে উঠলো। ধরল জয় ,বন্ধু মারুফ। ‘কিরে সোনার চান, কোথায় ডুব মেরে আছিস?’ মারুফ বলল। ‘সেটা করতে পারলে তো কথাই ছিলো না, আরামসে মৎস্যকুলের সাথে ঘুরে বেড়ানো যেতো, খাওয়া-পরার চিন্তা থাকতোনা। ’ ‘বুঝতে পেরেছি, বেশ কদিনের উপোস তুই।

মরে যাওয়ার আগেই অফিসে চলে আয়। ’ চলবে.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।