দ্যা ব্লগার অলসো.....
ঘড়ি দেখল জয়, একটা বেজে দশ। কখন যে বেলা গড়িয়ে গেছে টেরই পায়নি ও, পেটে ছুঁচোর নাচন শুরু হওয়ায় টনক নড়ল। পেট পুজো করতে হবে, তবে তার আগে একটু ষ্টেশনরোড যেতে হবে। প্রীতম আছে কিনা দেখা দরকার, অনেকদিন ওর সাথে দেখা হয়নি।
গিয়ে দেখল ঠিকই বসে আছে প্রীতম রেলওয়ে ভবনের বেঞ্চিতে।
ওকে দেখেই হাতের বস্তাটা রেখে উঠে দাঁড়াল।
‘আইসসুনা বদ্দা, এতদিন খডে ডুব মারি আছিলা যে?’। ’ ( এসেছো বড়্দা, এতোদিন কোথায় ডুব মেরে ছিলে?’)
‘নারে, তা আর পারছি কই, দেখ চলে এলাম তোকে দেখতে। ’ হেসে বলল জয়।
‘ভালা গইরজো, এহন চল ওটলত।
’(ভালো করেছো, এখন চলো হোটেলে। )
‘কেন, খুব খিদে লেগেছে বুঝি?’ হেসে বলল জয়।
‘লাইগ্গি মাইনি, ভুগে ফেডর আঁতুরি-গুতুরি উদ্দা বাইর অই যার!’ (লেগেছে মানে, খিদেয় পেটের নাড়ি-ভুড়ি সহ বেরিয়ে যাচ্ছে!)
একবার এক রাজনৈতিক দলের জনসভায় কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল জয়, তখনই প্রীতমকে দেখতে পায় ও, অবাক হয়ে দেখে ছেলেটা খুব মন দিয়ে বক্তৃতা শুনছে। উদোম গা, কালি-ঝুলি মাখা চেহারায় অপার মায়া। সভা শেষ হওয়া পর্যন্ত ছেলেটা ছিলো, জয়ও থেকে যায় ওর সাথে কথা বলার জন্য।
‘তোমার নাম কী ভাই?’ জিজ্ঞেস করে জয় ওকে।
‘ডাক নাম পিচ্চি, আছল (আসল) নাম প্রিতম। ’
‘কী করো তুমি?’
‘খাগজ তুয়াই বেচি। ’ (কাগজ কুড়িয়ে বেচি। )
‘তার মানে টোকাই?”
‘অয়অ।
’ (হ্যাঁ)
তারপর ওর জীবন কাহিনি শুনলো জয়। মনোযোগী শ্রোতা পেয়ে প্রিতমও বললো সব। আর দশটা টোকাইয়ের মতো ওর গল্পটাও সাধারণ এবং সাদামাটা। তবে জয়ের কাছে মোটেও তা মনে হলোনা, ওর নিজের জীবনের সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পেল প্রিতমের জীবনের। বাবা মারা যাওয়ার পর মা আবার বিয়ে করেন।
সৎ বাবার সংসারে মাত্র দশদিন টিকেছিলো ও, তারপর ওই মদখোর লোকটা মারতে মারতে একদিন তাড়িয়ে দেয় ওকে। লোকটা যখন ওকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছিল, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল ওর মা, একবারও ওকে বাঁচানোর জন্যও এগিয়ে আসেনি, বলেনি- আমার সোনা মানিক ব্যাথা পাচ্ছে, ওকে আর আঘাত করোনা। চলে আসার সময় প্রীতম মায়ের চোখের দিকে তাকিয়েছিল অপরীসীম ঘৃণা নিয়ে।
জয়ের মনে প্রশ্ন জেগেছিলো, দশমাস দশদিন জঠরজ্বালায় কি জ্বলেনি ওই মহিলা? নিজের মধ্যে কি সযত্নে লালন করেনি আপন সন্তানকে?
করেছিলো, হয়তো বাধ্য হয়েই। নিজের শরীর থেকে প্রীতমকে আলাদা করার পর, কাঁচি দিয়ে নাড়ি কাটার পর, হয়তো মায়ার যে বাঁধন, সেটাও কেটে দিয়েছিলো ওই রাক্ষসী।
নয়তো কেন নিজের সুখের জন্য পৃথিবীর তাবৎ মায়ের মুখে চুনকালি লাগালো সে।
বলতে বলতে কেঁদেছিলো প্রীতম, হয়তো জমাট বাঁধা অশ্রুর আগল খুলে গিয়েছিলো। আর জয়, জমতে জমতে পাথর হয়ে যাওয়া ওর সব দুঃখগুলো প্রীতমের অশ্রুর সাথে মিশে গলতে শুরু করেছিলো, তাই ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলো সেও। দুই ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষ নিজেদেরকে হালকা করে নিয়েছিলো সেদিন।
চলবে.....
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।