দ্যা ব্লগার অলসো.....
‘কী খবর বল, কোথায় ছিলি এতোদিন? যতোবার ট্রাই করি মোবাইল বন্ধ থাকে। ’ অভিযোগ করল মারুফ।
‘মাঝে মাঝে কী ইচ্ছে করে জানিস, ইচ্ছে করে হাওয়া হয়ে যাই, স্রেফ হাওয়া। যদি সুপার পাওয়ারের অধিকারী হতাম, তাই করতাম, অদৃশ্য মানব হয়ে যেতাম। ’
'এতোটা নৈরাশ্যবাদী তো কখনোই ছিলি না তুই', বলল মারুফ।
‘কী, তোর সুদর্শন চেহারাটা বুঝি মার্কেটে বিকোচ্ছেনা?’ চোখ নাচিয়ে যোগ করল পরের কথাটা।
‘ইচ্ছে করেনা রে, এসব লোক ঠকানো কারবার থেকে মন উঠে যাচ্ছে। ’
‘আচ্ছা! তাহলে তো ভালোই হলো, আমার অফিসে ক্যাশিয়ারের পদটা খালি আছে, চাইলে এক্ষুনি জয়েন করতে পারিস। ’
হাসল জয়, বলল-‘কেরানিগিরি করতে বলছিস?’
‘কেন, এটা খারাপ হলো কিসে? আমাদের বাঙালির এই একটাই দোষ বুঝলি, কাজকে ছোট করে দেখে। ’
‘আচ্ছা!’ রেগে গেলো জয়, ‘বাপের গড়ে দেওয়া রাজ্যের উপর রাজত্ব করছিস, স্যুট-টাই লাগিয়ে অফিস করছিস, তোর মুখেই এসব মানায়।
’
‘রেগে গেলি?’
‘না, একটা কথা বলি তোকে?’
‘বল। ’
‘তুই তোর বাবার এই ব্যবসাটা ছেড়ে দে, তারপর তোর ম্যাট্রিক সেকেন্ড ডিভিশন সার্টিফিকেটটা নিয়ে চাকরির জন্য বের হ, ভালো একটা পিয়নের চাকরি জোটাতে পারলে তারপর আমাকে বলিস। ’
‘তুই রেগে গেছিস দোস্ত, মাথা ঠান্ডা কর। আমি আসলে তোকে সাহায্য করতে চাই। ’ তারপর একটু থেমে বলল, ‘ কী খাবি বল, আমার খুব খিদে লেগেছে।
’
মারুফের অফিস থেকে বেরিয়ে থমকে দাঁড়ালো জয়, কোথায় যাওয়া যায় ভাবল। আচমকাই মনে পড়ল আজ টিনার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা, অথচ বেমালুম ভুলে বসে আছে ও। ভয় পেলো জয়। টিনা এমন একটা মেয়ে যাকে খোদাতালার ছেলে বানানোই উচিত ছিল। চাল-চলন,মেজাজ-মর্জি, কথা-বার্তা সব ছেলেদের মতো, শুধু শরীরটা বাদে।
আর ও যে একটা মেয়ে, ও নিজেই সেটা ওয়াকিবহাল নয়, জয়ের অন্তত তাই মনে হয়।
ওর সাথে টিনার পরিচয় রোমাঞ্চকর একটা ঘটনার মধ্য দিয়ে। মনে পড়লে এখনো গা শিরশির করে ওর।
জয়ের তিন নম্বর অ্যাসাইনমেন্ট ছিলো ওটা। টার্গেট ছিলো রিয়া নামের বেশ বড়লোকের মেয়ে।
ওর বাবা যে বেশ বড়লোক তাই শুধু জানতো জয়, জানতো না যে উনি বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্যও।
সাতদিনের মধ্যে রিয়াকে পটিয়েছিলো ও, জিজ্ঞেস করার সময় হয়নি ওর বাবা কি করেন। আট দিনের মাথায় ঘর থেকে ওকে ভাগিয়ে আনে জয়। তারপর নকল বিয়ের নকল বাসর রাত থেকে যখন বমাল ভেগে যায় ও, মেয়েটা সোজা গিয়ে ওর বাবাকে বলে দেয় সব।
তারপর যা হবার তাই হয়, পুলিশ আটক করে ওকে।
এমপির মেয়ে বলে কথা। বাকি জিন্দেগানি যাতে শ্বশুরালয়ে(!) কাটাতে পারে জয়, তার সব ব্যবস্থা করে ফেলে ওরা। ও নিজের পক্ষে কোন উকিল দিতে পারেনি, দেবেই বা কী করে? সেই টাকা কি ওর আছে? তাছাড়া দিলেও যে খুব একটা লাভ হবে না, জানতো ও, কারণ রিয়ার বাবা ভাল করেই ওকে ফাঁসানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। গারদের ভিতর আশার বাতি নিভিয়ে যখন ঝিমুচ্ছিলো জয়, তখনই ওকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে টিনা।
রিয়া যদি হয় এমপির মেয়ে, টিনা হচ্ছে তার আরো উপরে।
টিনার বাবা একজন মন্ত্রী। টিনা যখন জয়ের জামিন নিল, তখন বিস্মিত জয়ের প্রশ্নোত্তরে টিনা যা বলল, তা হচ্ছে এই- রিয়া আর টিনা একই কলেজে পড়ে, এবং ওরা একে অপরের প্রতিবেশীও। রিয়া মেধাবী, সুন্দরী এবং সবার পছন্দের পাত্রী। আর এর উল্টোটা হচ্ছে টিনার বেলায়। ওর ছেলেদের মতো চলাফেরা, লেখাপড়ায় অমনোযোগ ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে ওকে কেউ তেমন পছন্দ করতো না।
তাই রিয়ার প্রতি সাংঘাতিক রকমের জেলাস ছিলো ও। বাবার কাছ থেকে রিয়ার ব্যাপারে সবকিছু শোনে ও। এবং যার হাতে প্রতিদ্বন্ধী নাজেহাল হয় তাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে।
ওকে জেল থেকে ছাড়ানোর পর টিনা ওর ঘনিষ্ট সহচরে পরিণত হয়। কিভাবে রিয়াকে পটায় জয়, কিভাবে ফাঁকি দিয়ে পালায় এই কথাগুলো বারবার শুনতে চায় ও, শুনে আর খুশিতে ফেটে পড়ে।
এ সময় টিনাকে একটা সাইকোপ্যাথ ছাড়া আর কিছই মনে হয়না জয়ের। একটা মেয়ের দুর্দশায় আর একটা মেয়ের এতো আনন্দ হয় কী করে!
মেয়ে ঠকানোর এই প্রফেশনটা ছেড়ে দিতো জয়, কিন্তু টিনার জন্য পারলো না। ওর প্রফেশনটা দারুণ চ্যালেঞ্জিং আর ইন্টারেস্টিং মনে হলো ওর, তাই জয়কে ও বাধ্য করলো এটা চালিয়ে যেতে। এক ধরনের ব্ল্যাকমেইলই বলা চলে এটাকে। কারণ, জয় যখন বললো ওর পক্ষে এটা কন্টিনিউ করা সম্ভব নয়, তখন টিনা বললো, ও যা বলে তাই করতে হবে জয়কে, অন্যথায় ওর বারোটা বাজানোর জন্য যা কিছু করা দরকার সবই করবে ও।
একেতো মন্ত্রীর মেয়ে, তার উপর ওকে যতোটুকু চিনেছে জয়, তাতে ওর হুমকিকে একটুও বাড়াবাড়ি মনে হলোনা ওর, তাই বাধ্য হয়েই এ ঘৃণ্য কাজটা করে যেতে লাগলো , আর এতে নিঃস্বার্থভাবে ওকে সাহায্য করে যেতে লাগলো টিনা।
ওর সাহায্য পাওয়ার পর কাজটা পানির মতো সহজ হয়ে গেলো জয়ের জন্য। এমনিতে ও যথেষ্ট সুদর্শন, ওর মায়াবি দু’টি চোখ যে-কোনো মেয়েকে বিভ্রান্তিতে ফেলতে বাধ্য। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এটাই। আর তার সাথে যখন যোগ হল টিনার দেওয়া চাকচিক্য, তখন ওকে আর পায় কে।
যখন কোনো টার্গেট পেয়ে যায় জয়, টিনা ওর দুটো গাড়ির একটা দিয়ে দেয়, এমনকি পোশাক-আশাক পর্যন্ত কিনে দেয় ও। আর উন্মুখ হয়ে থাকে কখন তাকে সেই কথাটা শোনাবে জয়, বাসর রাত থেকে মেয়েটার সম্বল এবং স্বপ্ন চুরি করে ভেগে যায় ও। শুনবে আর অদম্য হাসিতে লুটিয়ে পড়বে।
চলবে.......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।