রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আগামী ৪ আগষ্ট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে রাজশাহীতে প্রচারণা জমে উঠেছে। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী ১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে নাগরিক কমিটি মনোনীত রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন অন্যতম একজন প্রার্থী। তিনি জাতীয় নেতা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের পুত্র।
আওয়ামী লীগ নেতা জনাব লিটন বলেছেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে যে লুটপাট, অনিয়ম, দুর্নীতি ও দলীয়করণ হয়েছে সে ব্যাপারে টাস্কফোর্সের তদন্ত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে আমি রাজশাহীতে ইনফরমেশন টেকনোলজি ভিলেজ গড়ে তুলবো। খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, করপোরেশন হবে রাজশাহীর দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত। সেখানে কোন দলেরই নেতা-কর্মীর টেন্ডারবাজি, মস্তানী বরদাশত করা হবে না। করপোরেশনের অধীন সমস্ত কাজ স্চ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেয়া হবে। কোন অনিয়ম-দুর্নীতি হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম আকাশকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। নিচে প্রশ্নোত্তর আকারে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
প্রতিবেদক : নির্বাচিত হলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে অতীতে যে দুর্নীতি ও দলীয়করণ হয়েছে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন?
লিটন : আমার জানামতে সিটি করপোরেশনের অনেকগুলো ফাইল টাস্কফোর্স তদন্ত করেছে এবং করছে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে সেই তদন্তের আলোকে এবং প্রয়োজনে আরও তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো।
প্রতিবেদক : রাজশাহীর প্রধান সমস্যা কি?
লিটন : রাজশাহীতে গ্যাসের সংযোগ না আসা এবং বেকার সমস্যাই প্রধান বলে মনে করি।
প্রতিবেদক : নির্বাচিত হলে আপনি রাজশাহীর জন্য কি করবেন ?
লিটন : আমি নির্বাচিত হলে রাজশাহীর জন্য যেসব কাজ করতে চাই সেগুলো হলো-পাইপলাইনের মাধ্যমে যত শিগগির সম্ভব গ্যাস সংযোগ প্রদান, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে কৃষিভিত্তিক নতুন নতুন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ, সাহেববাজার, ল²ীপুর বাজার, কোর্ট বাজার, শালবাগান, নওদাপাড়া, বিনোদপুর, তালাইমারী, বৌবাজারগুলোসহ সকল কাঁচা বাজারের স্থায়ী দালান নির্মাণ করে খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের ঘর বরাদ্দ দেয়া, ৫০/৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন, ইপিজেড নির্মাণ, সকল ওয়ার্ডে ড্রেনেজ, রাস্তা, বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন, দরিদ্র রিকশা ও ভ্যান চালকদের স্বল্পমূল্যে রাতযাপন ও বিনামূল্যে আরবান চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা ও ঔষধ প্রদান, উন্নতমানের একটি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়, গার্লস ক্যাডেট কলেজ ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্রতিষ্ঠা, কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, রেশম শিল্পকে পুনরুজ্জীবীত করে রেশমপল্লী গড়ে তোলা, বিনোদনের জন্য পদ্মা নদীর পাড় উন্নয়ন, ঐতিহাসিক ভুবনমোহন পার্ক ও সোনাদিঘীর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা, রাজশাহী থেকে অপসারিত বিভাগীয় অফিসগুলো পুনরায় ফিরিয়ে আনা, মিয়াপাড়া সাধারণ গ্রন্থাগারের উন্নয়ন, ক্রিকেট টেস্ট ভ্যেনু উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও স্বাধীনতা স্তম্ভব নির্মাণ, পূর্ণাঙ্গ নাট্যমঞ্চ স্থাপন, সাহেববাজার বড় মসজিদের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বসবাসের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ, মাতৃত্বকালীন তিন মাসের ছুটি ও স্বাস্থ্যসবা নিশ্চিত করা, মহানগরীর জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের স্মৃতি রক্ষায় সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবেদক : ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পট পরিবর্তনের পর জনগণকে রাজনীতিবিমুখ করার যে প্রক্রিয়া সেসম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
লিটন : একটি দেশ পরিচালিত হবে জনগণের দ্বারা পরিচালিত জাতীয় সংসদ ও নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে। কতিপয় দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদের কারণে পুরো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করার কোন সুযোগ নেই। একথা অনস্বীকার্য যে যারা দুর্নীতি করেছেন তারা কেউই আইনের উর্ধ্বে নন। এটিই এক এগারোর পরে দেখেছি।
আমি মনে করি এদেশের রাজনৈতিক দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীর অধিকাংশই অত্যন্ত সৎ এবং দায়িত্ববান। এক এগারোর পরে তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার নেতৃত্বে আসার একটি ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। যেকোন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতা-কর্মীর মতামতই চূড়ান্ত হওয়া উচিত। কেবল তাহলেই দেশে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরী হবে। এক্ষেত্রে এক এগারো পরবর্তী পরিস্থিতির সঙ্গে আমি একমত।
প্রতিবেদক : ১৪ দল ওয়ার্কাস পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে রাজশাহীর মেয়র পদে মনোনয়ন/সমর্থন দিয়েছিল। আমরা শুনছি যে, আপনি তাকে বাধ্য করেছেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করাতে।
লিটন : আমি মনে করি বর্তমান বাস্তবতায় উনাকে সমর্থন কিংবা মনোনয়ন যাই বলি না কেন ১৪ দল এই সিদ্ধান্ত অনুচিত কাজ হয়েছে। যারা স্বাধীনতার পক্ষের নেতা-কর্মী ভোটার ও সমর্থক তাদের মতামতকে সম্মান করা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় ১৪ দলের। আশা করি ভবিষ্যতে এজাতীয় ক্ষেত্রে তারা (১৪ দল) অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ নেবে।
প্রতিবেদক : এই যে প্রার্থী বদল হলো তাতে ১৪ দলের ভেতরে কোন খারাপ প্রভাব পড়বে কি?
লিটন : আমি মনে করি কোন প্রভাবই পড়বে না। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই এই পরিবর্তন। কাজেই এ বিষয়ে ১৪ দলের ভেতরে কোনব প্রভাব পড়া উচিত নয়। আগামিতে সকল সা¤প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ১৪ দল এক হয়েই লড়বে এবং সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেবে।
প্রতিবেদক : আপনার দল থেকে তিনজন নেতা মেয়র প্রার্থী লড়ছেন, এটা নির্বাচনে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি আপনার সফলতার ক্ষেত্রে?
লিটন : এটা দলীয় নির্বাচন নয়।
তাছাড়া দলের পদ যেহেতু আছে সেহেতু অপর দুই প্রার্থীর নির্বাচনী লড়াই থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল। একই পদে একই দলের তিনজনের প্রতিদ্ব›িদ্বতা করাটা দুঃখজনক।
প্রতিবেদক : বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় জোট সিটি নির্বাচন বর্জন করেছে। এরপরও তাদের দলের একাধিক নেতা মেয়র পদে লড়লেও বিএনপি-জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাকে কাউকে সমর্থন জানায়নি। আপনি কি মনে করেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ভোটারদের ভোটও আপনি পাবেন?
লিটন : আমি সুষ্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি নির্বাচন বর্জনের কথা বলা হলেও স্থানীয় বিএনপির সমর্থিত দু’জন নেতা মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন এবং বিএনপি সমর্থক ভোটাররা তাদের সমর্থন দিয়ে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে।
জামায়াতের প্রার্থী নেই বললেও শেষ মুহুর্তে তারা কি করবেন বলা মুশকিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।