আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মতপ্রকাশের স্বাধীনতাহীনতা কি আমাদের মতপ্রকাশের ক্ষেতে কোনো জড়তা তৈরি করে?



গত ২ বছরের অভিজ্ঞতায় এই মুক্ত প্ল্যাটফর্মের একটা বিষয় লক্ষ্য করবার মতো মনে হয়েছে, এখানে ভ্রমনকারী অধিকাংশ মানুষের মনোভাব পাঠশালার ছাত্রের মতো। খুব আশ্চর্য হতাম প্রথম প্রথম, এখন আর আশ্চর্য হই না তেমন। মত প্রকাশ করবার স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হতে হতে আমাদের মানসিকতার গঠনই এমন হয়েছে যে আমরা নিজের কানেও নিজের মত বলতে অনাগ্রহী। এই অনাগ্রহ কিংবা ভীতি কিংবা মত প্রকাশের আকাঙ্খা না থাকবার কোনো কারণ খুঁজে পাই না আমি। মুক্ত একটা মঞ্চে সবাই নিজের কথা বলবে, কিন্তু কেউ কেউ এত বেশী লাজুক এবং আত্মকেন্দ্রীক যে তাদের মত প্রকাশ করবার ধরণটা অদ্ভুত, তার নিরবে পাঠ করে চলে যায়।

এখানে লেখালেখির প্রধান সুবিধা হয়তো পাঠকের সাথে সরাসরি সম্পর্ক, তবে সেই সম্পর্কটা ভক্তিবাদীতায় গিয়ে শেষ হয় সময় সময়। কঠোর মত প্রকাশ করলে লেখক মাঝে মাঝে মনঃক্ষুন্ন হন, তবে অধিকাংশ সময়ই লেখক অন্তত তার দৃষ্টিভঙ্গির বাইরেও ঘটনার বিশ্লেষণ সম্ভব এই ধারণাটাই মেনে নেন। এখানে সবাই লেখক এবং সবাই পাঠক, সবারই নিজস্ব স্বাধীন মত আছে, এবং মত প্রকাশ করবার কিংবা ভিন্নমত প্রকাশ করবার অধিকার আছে। এরপরও অধিকাংশ মানুষের নিরবতা ভীতপ্রদ মনে হয়। মানুষ নিজের দিনলিপিতেও আজকাল বিদ্রোহ লিখে রাখতে চায় না।

প্রচলিত মতের বাইরে গিয়ে কোনো কথা বলতে চায় না, সামাজিক নিষ্পেষণ আমাদের সঙ্গী অনেক দিন, আমরা সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছি, অধিকাংশের মতের সাথে সহমত প্রকাশ করতে করতে আমরা প্রশ্ন করবার সাহস হারিয়েছি। এখানে অধিকাংশ আলোচনামূলক লেখার অবধারিত ভবিষ্যত সেটা পড়ে কেউ কোনো আলোচনা করবে না। নিতান্ত সামাজিক প্রথা আক্রান্ত না হলে, কিংবা নিজের মৌল বিশ্বাস আক্রান্ত না হলে কেউ এখানে সরব হয়ে উঠতে পারে না। লেখক তখন নিজের মনমতো সবাইকে ছাত্র ধরে নিয়েই নিজের পাঠদানপ্রকল্প অব্যহত রাখেন। কেউ শিখতে না চাইলেও তাকে শিখানোর উদ্যোগ গ্রহন করেন।

এমন কি আমার আশংকা এই লেখা যেসব পাঠক পড়বেন [ মানে যদি পড়েই ফেলেন ভুল করে, তারাও এটার বিরোধিতা করবেন না, কিংবা এই অনাগ্রহ বিষয়ে তাদের মত প্রদান করবেন না]। আমাদের ভেতরে যোগাযোগের মাধ্যম নিজেদের মতাদর্শিক অবস্থানকে স্পষ্ট করে পাশাপাশি এসে সমবেত হওয়া। নিজেদের মতদ্বৈততা এবং মতভিন্নতা স্বীকার করে বড় কোনো উদ্দেশ্যে সমবেত হওয়া যায়। পারস্পরিক মতবাদের প্রতি সম্মান রেখেই এই সম্মিলন সম্ভব। যেহেতু কেউই পরমতসহিষ্ণু নন, এবং সবার মতবাদ অপরিস্কার অন্যের কাছে তাই তারা একসাথে কাজ করবার সময় নিজেদের ভিন্ন মতের কলহে শুভ উদ্যোগকে খুন করছেন অবলীলায়।

সবাই নিজের মতবাদ প্রকাশ করেন, গুজব কিংবা অনুযোগ থাকলেও সেটাও পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন, আপনার মতামত এবং মতবাদ জানা থাকলে আমার স্বাধীনতার পরিসীমা আমি নিজে নির্ধারণ করতে পারি। এমনভাবে সবাই নিজের সীমানাপ্রাচীর চিহ্নিত করেই কোনো উদ্যোগে সংযুক্ত হতে পারি। আমাদের সংযুক্ত হওয়া প্রয়োজন, আর এই প্রয়োজনীয়তার কারণেই আমাদের পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত হওয়া প্রয়োজন মতাদর্শিক ভাবে। আমরা আলোচনা করি, সমালোচনা করি, পরস্পরের মত ছিন্ন করি যৌক্তিক ভাবে, মতভিন্নতার কারণে তাকে ছুড়ি দিয়ে ছিন্নভিন্ন না করে আমরা আলোচনা করতে পারি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.