আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদ্বেষ ও মতপ্রকাশের মার্কিন তরিকা

এই ব্লগটি নোমান বিন আরমান'র দায়িত্বে প্রবর্তিত। এখানে মাঝেমধ্যে তিনি আসেন। numanbinarmanbd@gmail.com নোমান বিন আরমান : পছন্দ আপেক্ষিক বিষয়। সব কিছুই সবার পছন্দ হবে এমন নিশ্চয়তা নেই। যে চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত হয় পৃথিবী, তাতেও কেউ কেউ খুঁত খুঁজে বেড়ায়।

কোনো কোনো প্রাণী নিন্দা করে আলোর। অভিশাপ দেয় সূর্যকে। এটাই বাস্তবতা। তাই বলে চাঁদের কিরণ যেমন ম্লান হয় না, য় হয় না জ্যোৎস্নার সৌন্দর্য, আলো কমে না সূর্যের। মাঝখানে যারা বিরক্ত হয়, নিন্দে করে বেড়ায়_ নষ্ট হয়, কষ্ট পায় তারাই।

বিস্তারিত রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নবী। তিনি সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম চরিত্রের মানব। আমরা; আরও নির্দিষ্ট করে বললে_ মুসলমানরা তাঁকে অনুসরণ করি, তাঁর আলোয় উদ্ভাসিত হোই, তাঁর নামেই আল্লাহর কাছে জীবন সমর্পণ করি। তিনি আমাদের আবেগের পবিত্র আধার, ভালোবাসর উজ্জ্বল মিনার। কিন্তু সকলেই তাকে একইভাবে, একই দৃষ্টিকোণ ও বিশ্বাসে মূল্যায়ন করবে, শ্রদ্ধা নিবেদন করবে এমনটা কখনো ঘটেনি।

ঘটবেও না। কারণ কিছু লোক চায়, এবং চাবেই, আঁধার থাক, অন্ধকারে ছেয়ে যাক শুভ্র আকাশ; তাতে সুবিধা তাদের। তারা আলোয় ভয় পায়। ভয় পায় স্বচ্ছ আকাশ। আলো আসলেই আঁধারকে পালাতে হয়।

আলো তাই আজন্মই আঁধারের শত্রু। মুহাম্মাদ সা. ছিলেন আলোর বার্তাবাহক। তিনি সত্যের আলো নিয়ে মাঠে নামার সাথে সাথে ঘিরে ধরেছিল কায়েমি স্বার্থবাদী আঁধারের পুজারীরা। তারা তাঁকে হেয় করার, ছোট করার প্রাণান্তকর অপচেষ্টা করেছে। পথভ্রষ্ট, বিশৃঙ্খলাকারী, বিভক্তকারী, অশান্তিসৃষ্টিকারী বলে অপবাদ দিয়েছে।

কারণ তিনি যে আলো নিয়ে এসেছেন, তাতে আঁধারের পুজারীরা তাদের নিশ্চিত মৃত্যু, কায়েমি স্বার্থের অনিবার্য নিপাতকাল দেখতে পাচ্ছিল। এই আলো আসার পূর্বে যে স্বার্থবাদীরা মানুষের ওপর নিজেদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছিল, ইচ্ছেমত পরিচালানা করছিল সকল কিছুকে; এমন স্বেচ্ছাচারিতার বিদায়কাল দেখে তারা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তাই মুহাম্মাদ সা.-কে ‘পাগল, যাদুকর’ বলেও পরিত্যক্ত ও নিবৃত করার হাজারো চেষ্টা আঁধারের পুঁজারীরা করেছিল। কিন্তু আলো সবসময়ই অপ্রতিরুদ্ধ। তাই, সত্য সমাগতয় মিথ্যা বিদূরিত হল।

মক্কায় ৫৭০ খিস্ট্রাব্দে রাসূল সা. আগমন করলেন। এরপর ৪০ বছর পর্যন্ত ওই সমাজ ও শাসন ব্যবস্তায় তিনি ‘বিশ্বস্ত, নিরাপদ ও শান্তির দূত’ হিসেবেই বিবেচিত হলেন। কিন্তু যখনই তিনি ওই সমাজ ও শাসন ব্যবস্থার অন্ধকার কূঠরিতে আঘাত করলেন, তখন আর মুহূর্ত বিলম্ব না, তাদের বিচারে তিনি হলেনÑ অনিষ্টসৃষ্টিকারী, বিশৃঙ্খলাকারী। কিন্তু তার আহবানেই অন্ধকারে বন্দি থাকা সত্যের পাখিরা, শান্তির কপুতেরা জীবনের গান শুনতে পেল। তাঁরা ছোটে এলেন, একে একে, দলে দলে।

সারাবিশ্ব দেখল, মুহাম্মাদ সা. এর দিকনির্দেশনায় মাত্র ২৩ বছরে ‘জাজিরাতুল আরবে’ মানবতা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হল, দুর্বলেরা অধিকার ফিরে পেল, নারী পেল মা, বোন আর স্ত্রী’র সম্মান। পেল বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা। ‘দাসেরা’ পেল মুনীবের ভাইর মর্যাদা। বন্ধ হল জাতিগত সঙ্ঘাত, সংঘর্ষ। মানুষে মানুষে প্রতিষ্ঠিত হল ভ্রাত্বিত্যের সম্পর্ক।

তবে এটা এমনিতেই হয়ে যায়নি। এর জন্যে তাকে পদে পদে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হতে হয়েছে, ‘নিঃস্ব’ হতে হয়েছে, নির্বাসনে যেতে হয়েছে। কিন্তু এরপরও তাঁর অবসর ছিল না। আঁধারের বিরুদ্ধের অন্তহীন জেহাদে তাঁকে ক্রমাগত লড়ে যেতে হয়েছে। তিনি লড়েছেন।

বিজয়ী হয়েছেন। ০ দুই ০ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত একটি চলচ্চিত্র নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে উত্তাল সারা বিশ্ব। ‘ইনোসেন্স অব মুসলিস’ (পবিত্র মুসলমান) নামের ওই চলচ্চিত্রে রাসূল মুহাম্মাদ সা. ও তাঁর বিজয়ী আদর্শ নিয়ে কটা করা হয়েছে। খুব কি অবাক হওয়ার মত কিছু। মোটেই না।

রাসূল সা. তাঁর সারা জীবনের সাধানায় মানুষের মুক্তির পথ দেখিয়ে গেছেন। বিজয়ী আদর্শরূপে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন। এ সত্য। তাই বলে, অন্ধকার যে একেবারেই নির্মূল হয়ে গেছে তা নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব নয়।

তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আঁধার তেমনই। একে নির্মূল করা হবে না। তবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এটাই আল্লাহর নীতি।

তিনি আলো ও আঁধার সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাদের খেলতে নামিয়ে বলেছেন, শুরু কর_ আমি আলোর পইে আছি। সেই খেলা চলছে। পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত চলতেই থাকবে। আঁধারের পুজারীরা মক্কা থেকে আলোর বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করেছিল তাতে এখনো কোনো দাড়ি পড়েনি।

পড়বেও না। তারা তাদের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা অব্যাহত রাখবেই। রাসূলরে আদর্শকে ‘বধ’ করার ব্যর্থ চেষ্টা তারা চালাবেই। যতদিন তারা বেঁচে থাকবে এই যুদ্ধে কোনো কান্তি আনবে না। মুহাম্মাদ সা. এর আদর্শের উপর নিজেদের বিজয়ী না করা পর্যন্ত তারা থামবে না হবে না।

এরজন্যে কোনো কিছুতেই তারা কুণ্ঠাবোধ করেনি। করছে না। কখনো করবেও না। এটাই তাদের চরিত্র। আঁধারের অস্ত্র একটাই_ মিথ্যা।

সবসময়ই এই মিথ্যা দিয়ে আলোকে সে দমাতে চেয়েছে। দমানোর কসরত করে যাচ্ছে। করবে। ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ তারই একটি ধারাবাহিকতা মাত্র। এটা শুধু দাবিই নয়।

আলোর মতই ধ্রুবসত্য। ইতোমধ্যে প্রায় সবার জানা হয়ে গেছে, চলচ্চিত্রটি নির্মাণের পেছনে কারা ছিলেন, কারা অর্থ ব্যয় করেছেন এবং কাদের মাধ্যমে ও কোন উদ্দেশে এটি প্রচার করা হয়েছে। এসব এতই আলোচনা হচ্ছে যে, এখানে তা উল্লেখ করার দরকার মনে করছি না। আর এসব নিয়ে কথা বলে তাদের উদ্দেশ্যকে সফল করার কাজটিকেও আরও বাড়াতে চাইছি না। তবে আমরা এই আলোচনায় কী বলতে চাচ্ছি, লেখার শিরোনাম থেকে খানিক আভাস মিলেছে।

০ তিন ০ চলচ্চিত্রটি প্রকাশের পর লিবিয়ায় বিক্ষুব্ধ মুসলমানদের প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকান রাষ্ট্রদূতসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। আর চলচ্চিত্রটির প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পাকিস্তানসহ কয়েকটি মুসলিম দেশে অন্তত ৩০জন মুসলমান শহীদ হয়েছেন। সব কিছু ছেড়ে এই চলচ্চিত্রটি নিয়ে মুসলমানরা উত্তেজিত হয়ে আছেন। মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোয় জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে। আমরা দায়ী করছি না, তারা যা করছেন নিজেদের আবেগ আর ভালোবাসা থেকেই করছেন।

প্রত্যেক মুসলমানের কাছেই রাসূল সা. সব চেয়ে বেশি সম্মান ও ভালোবাসার অধিকারী। মুসলমানদের আবেগের কেন্দ্রও তিনিই। সাধারণ একজন মানুষ তার নিকটজনদের কারো চরিত্রকে নিয়ে কোনো অবমাননা হতে দেখলে যে প্রতিক্রিয়া জানাত; রাসূলের চরিত্রকে বাজেভাবে উপস্থাপন করায় তাই করছেন বিশ্বের মুসলমানরা। আবেগের স্থান থেকে একে দায়ী করার সুযোগ নেই। কিন্তু এটা যেমন আইনের চোখে গ্রাহ্য নয়, তেমনি বিচার পাওয়ার কোনো পন্থাও নয়।

এটা অবশ্যই মনে রাখতেই হবে। কারণ এভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো ফলে, অপরাধীরই বেশি সুবিধা হয়। মানুষ প্রথম অপরাধের কথা ভুলে পরের প্রতিক্রিয়াকেই বড় করে দেখতে শুরু করে। এই কাজটিই ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ এর প্রতিক্রিয়ায় ঘটছে। চলচ্চিত্রে যা করা হয়েছে তা কোনোভাবেই কারও প্রশ্রয় পাওয়ার যোগ্য নয়।

যে কোনো আইনেই এর কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। কিন্তু চলচ্চিত্রটি যেহেতু ‘মুসলমানদের নবী’কে নিয়ে করা হয়েছে তাই কোনো আদালতে এর বিচার হলো না। আমেরিকা মৃদুভাবে এর জন্য তিরস্কার করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার মনে করনি। উল্টো মার্কিন মুলুকের মতাধর পররাষ্টমন্ত্রী হিলারি কিন্টন বললেন, এ চলচ্চিত্রটি বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগ নেই। আর মার্কিন সংবিধানে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ সমুন্নত থাকায় নির্মাতাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন হিলারি।

মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভকে অসর্মনযোগ্য উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, মুসলমানরা পরিকল্পিতভাবে লিবিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হত্যা করেছে। নিহতদের পরিবার ও মার্কিন নাগরিকদের কাছে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই হত্যার ‘ন্যায় বিচার’ নিশ্চত করা হবে। তারপরই বিভিন্ন মুসলিম দেশে মার্কিন দূতাবাস ও নাগরিকদের নিরাপত্তায় ওবামার সৈন্যরা উড়াল দেন। পাঠানো হয় যুদ্ধ জাহাজও। ওবামার এই পদেেপর পর রাষ্ট্রদূত হত্যার ঘটনায় লিবিয়া রাষ্ট্রীয়ভাবে মা প্রার্থনা করে।

মাপ্রার্থনায় লিবিয় সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি। ওবামা বলেছিলেন, এই বিক্ষোভের পেছনে আল কায়দা জড়িত রয়েছে। এখন সবখানেই সেই আল কায়দা খোঁজা হচ্ছে। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর আমেরিকা অনুগত সরকারের উপর নতুন করে আল কায়দা নির্মূল অভিযানের দায় বেড়েছে। এটা আগামিতে আরও বাড়বে।

ইনোসেন্স অব মুসলিমস যে উদ্দেশে নির্মিত হয়েছিল তাতে যে সে পুরোপুরি সফল এতে কোনো সন্দেহ নেই। ০ চার ০ ইনোসেন্স অব মুসলিমসই রাসূল ও ইসলাম বিদ্বেষী প্রথম কোনো কাজ এমন নয়। এই আলোচনার সূচনাতেই আমরা উল্লেখ করেছি ইসলামের শুরু থেকেই আলোর শত্র“রা অন্ধকারের জন্য লড়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় অতীতেও ইসলাম ও রাসূল সা. কে নিয়ে অশোভন ও বিদ্বেষপ্রসূত কাজ করা হয়েছে। এই চোখ ফিরালেই দেখা যায় এমন ব্যবধানে (২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর) ডেনমার্কের পত্রিকা ‘জিল্যান্ড পোস্ট’-এ রাসূল সা.কে নিয়ে আপত্তিকর কার্টুন প্রকাশ করে তাদের অন্তরের অন্ধকারকে প্রকাশ করেছে।

এর বিরুদ্ধে তখন সারা বিশ্বেই মুসলমানরা ুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। জালাও-পোড়াও করেছেন। কিন্তু কোনো আদালতেই তার বিচার হয়নি। বিচার হবে এমন আশাও আমরা করি না। কারণ তারা যে সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় থেকে এসব কাজ করে তা তাদের কাজের অনুকূলেই অবস্থান নেয়।

‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’র ছায়া তাদের মাথায় নিরাপত্তার চাদার হয়ে দাঁড়ায়। ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী যে কোনো কাজ তারা এই ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার’ অধিকারে করে যায়। তাদের রাষ্ট্র ও আদালত এসব কাজের জন্য তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। এটা কেন করে তা বুঝতে কারো সমস্যা হবার কথা নয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যে কেবল তাদের নিজেদের জন্যই বরাদ্দ তা পরিস্কার।

পরিস্কার করে বলি, মুসলমান ছাড়া আর সকলেরই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে। শুধু মুসলমান, একমাত্র মুসলমানেরই কিছু বলার স্বাধীনতা নেই। কোনো বক্তব্য প্রকাশের অধিকার নেই। এই রীতিই চলছে এখন বিশ্বজুড়ে সকল সমাজ ও রাষ্ট্রে। অমুসলিমরা _ প্রধানত ইহুদি ও খ্রিস্টানরা মতপ্রকাশের ‘সর্বময় মতার’ অধিশ্বর।

এখানে আর কারো প্রবেশাধিকার নেই। মুসলমান হলে তো তার জন্য স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবেই। তাই ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ বিদ্বেষপূর্ণ কাজ হলেও তা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পৃষ্ঠপোষকতা পায় আর মুসলমানরা প্রতিবাদ জানালে তা ‘বিশ্বে অশান্তি ও সন্ত্রাস’ সৃষ্টির আখ্যা পায়। এই ‘বিশ্বে অশান্তি ও সন্ত্রাস’ মোকাবেলায় তাৎণিক পদেেপ সর্বাধুনিক বাহিনী প্রস্তুত হয়ে যায়। বিদ্বেষী নির্মাতার হত্যার জন্য নিজের মত প্রকাশ করে পুরস্কার ঘোষণা করলে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞা আখ্যা দিয়ে নিন্দা আসে হোয়াই হাউস থেকে।

তাই নিজ দেশের সরকারের নিন্দার পাশাপাশি মার্কিন নিন্দাও জুটলো রাসূল প্রেমিক পাকিস্তান সরকারের রেলমন্ত্রী গোলাম আহমদের ললাটে। এটাই মতপ্রকাশের মার্কিন তরিকা। মুসলমানদের করণীয় কী হতে পারে এসব ক্ষেত্রে? বিক্ষোভ-প্রতিবাদ কি তারা করবেন না। অব্যশই প্রতিবাদ জানানো উচিত। তবে তা নিয়মতান্ত্রিকভাবে।

প্রতিবাদের আড়ালে যাতে অপরাধীর কার্যকলাপ চলে না যায়, কেউ যাতে মুসলমানদের বিরুদ্ধেই সেই প্রতিবাদকে কাজে লাগানোর সুযোগ না পায় তা অবশ্যই সতর্কভাবে বিবেচনায় নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মুসলমানদের খেপিয়ে ফায়দা হাসিলের ধান্ধা অতীতে যেমন হয়েছে। এখনও হচ্ছে। আগামিতেও একইভাবে হবে। অমুসলিমরা মুসলমানদের বিকাশ, প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তাদের উত্তেজিত রাখতে ব্যস্ত।

মুসলমানদের উত্তেজিত দেখলেই তারা হাসতে পারে। সুখ পায়। তাই ইনোসেন্স অব মুসলিমস এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলার সময়ই কার্টুনে রাসূল সা. এর নাম দিয়ে মুসলমানদের আরও উত্তেজিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু কি ইনোসেন্স অব মুসলিম বা ফ্রান্সের পত্রিকার কার্টুন? না। সারাবিশ্বে তো আছেই।

এই বাংলাদেশেরই কিছু আঁধারের পুজারী, রাসূল বিদ্বেষীচক্র ব্লগ ও ওয়েব সাইটের মাধ্যমে এমন সব কার্টুন আর আল্লাহ-রাসূলকে নিয়ে এমন নিশ্চু কটা করে যাচ্ছে তার খবর ক’জন রাখেন। এসব তো ইনোসেন্স অফ মুসলিমস এর চেয়ে অপরাধের বিচারে কোনো অংশেই কম নয়। ০ পাঁচ ০ এই লেখাটি শেষ করার সময় বাংলাদেশে একটি হরতাল পালিত হয়েছে। এই হরতাল নিয়ে প-বিপ আলোচনা আছে। সরকারপ্রধান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প থেকে চলচ্চিত্রটির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পরও হরতালের মত কর্মসূচির প্রয়োজন ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে।

এটা ঠিকÑ বাংলাদেশ যে প্রতিবাদ জানিয়েছে তা চূড়ান্ত না হলেও একেবারেই ফেলনা নয়। এইটুকুই এই সরকার থেকে অনেক বেশি প্রাপ্তি। মতায় আছেন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পে দ্রুত ও তাৎণিক প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো অনেক হিসেবের বিষয় ছিল। তাই (অনেকে বলে থাকেন) হিলারি এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখার পরই হাসিনা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা জ্ঞাপনের পর বাংলাদেশে ইউটিউব বন্ধ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাৎণিক না হলেও অন্তত সরকারের আগে এর প্রতিবাদ জানাতে পারত। সরকারের উপরও তারা প্রতিবাদ ও নিন্দা জানোর চাপ সৃষ্টি করতে পারত। দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় হলেও বিএনপির তা করা জরুরি ছিল। এতে তাদের প্রতি জনগণের সিম্পীতি বাড়ত। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা গেল তারা সরকারের অনুগামী হল।

প্রধানমন্ত্রী নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পর বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী বেগম খালেদা জিয়া নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেন। বিএনপির এই বিলম্ব নিন্দার কারণ কী? ইসলামি দলগুলো এক্ষেত্রে যা করেছে তাও কি প্রশ্নোর্ধ্ব? না। তারা মাঠেই নেমেছে যখন, তখন সম্মিলিত একটি প্লাটফর্মে আসত পারত। ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ জানালে অন্তত জনগণের মনে তাদের ব্যাপারে শ্রদ্ধবোধ বাড়ত। রাসূল ইস্যুতেও ইসলামি দল ঐক্যবদ্ধ কর্মসুচি পালন করতে পারে না_ এমন বদনাম রটত না।

কিন্তু তারা এ ইস্যুতেও বিরোধী শিবিরে কথা বলার সুযোগ করে দিলেন। এই দলগুলো কেন এক হতে পারল না, নেতৃত্বের লোভ ‘নবীপ্রেম’ থেকে কেন বড় হয়ে ওঠল তার আলোচনা এখানে করব না। ইসলামি ও সমমনা ১২ দলের ব্যানারে ২৩ সেপ্টেম্বর যে হরতাল হল; তার প্রতি গণমানুষের সমর্থন থাকলেও নিদারুণ নির্লিপ্ত ছিল ইসলামি দলগুলো। একটি বিশেষ ইসলামি দলের সাথে ১২ দলের ‘কানেকশন’ রয়েছে এমন অভিযোগে এই কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকল অনেকগুলো ইসলামি দল। প্রায় একই অভিযোগে সরকারও ১২ দলের কর্মসূচিতে ১৪৪ ধারা জারি করল।

আপনি কার বাড়াবাড়ি নিয়ে কথা বলনে? শেষ করা আগে বলি, ইসলাম, মুসলমান, আল্লাহ ও রাসূলকে নিয়ে বিদ্রুপ, সমালোচনা ও বিদ্বেষপূর্ণ কাজ হবেই। এটা অতীতেও হয়েছে। এখন যা হচ্ছে নতুন নয়। আমাদের ভাবতে হবে, কীভাবে ও কোন পন্থায় এসব নিম্নরুচির ও পরিকল্পিত শত্র“তার মোকাবেলা হবে। শুধু বিােভ মিছিল ও সমাবেশ আর জ্বালাও-পোড়াও করে যে এসবের প্রতিরোধ সম্ভব নয় তা তো স্পষ্ট।

নোমান বিন আরমান : সাংবাদিক, বিশ্লেষক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.