আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন এনার্কিস্টের (সেলিম রেজা নিউটন) মত



সমকালীন দেশীয় রাজনীতি বিষয়ে সেলিম রেজা নিউটনের একটি লেখা (Click This Link) বিষয়ে চিন্তা করছিলাম। বলে রাখা ভাল নিউটনের এই anarchist ব্যখ্যার সাথে আমি মোটেও একমত নই। লক্ষ্য করুন উনি বলশেভিক পার্টিকে স্বৈরতান্ত্রিক বলেছেন। স্পেন ও প্যারিসের ছাত্র-শ্রমিক-বিক্ষোভের মত চিরচেনা উদাহরন দিয়ে দুই একজন anarchist র নাম নিয়ে বলেছেন এই দেশে anarchist literature r সাথে পরিচয় মেলা ভার। তথাকথিত বামদের কারো ক্ষেত্রে (যারা Marx না বুঝেই Marxist ) এ অভিযোগ সত্যি হলে হতেও পারে কিন্তু যারা seriously Marx পড়েন তাদের কাছে এটা একটা প্রাথমিক পাঠ।

First International এ Paris Commune এর পর হেগ কংগ্রেসে বাকুনিন আর মার্ক্সের দন্দ্বের কথা কে না জানে? তারপর নানা আন্দোলনের ব্যাখ্যা নিয়ে দুই শিবিরের তর্কের কোনো শেষ নাই। রাজনীতির মনোযোগী পাঠক হলে এসব জানা আহা মরি কোনো ঘটনা না। জানলেও কোনো আন্দোলনের ব্যাখ্যায় তত্তটি যথেষ্টকিনা তা বুঝার উপায় কি?তত্তটি যদি ঐ বিশেষ আন্দোলনের ঐতিহাসিক বাস্তবতার সাথে মিলে এবং আন্দোলনের মধ্যে উঠে আসা প্রশ্নের উত্তর সার্থকতার সাথে দিতে পারে তাহলেই বুঝব সব কুছ ঠিক হ্যায়। এখানেই আমার দাবি নিউটনের ব্যাখ্যার সমস্যা অনেক। যাই হোক কে কি জানে আর না জানে সেই বিচার না করে আমরা দেখি নিউটনের রাজনীতি ব্যাখ্যার সমস্যা কি? প্রথমত,তিনি Chomsky কে আকাশে উঠাইছেন।

Chomsky,যে কোনো বিচারে একজন লিবারেল তথা ব্যক্তি মানুষের চরম মুক্তিই তার লক্ষ্য। যতোই বিদেশ নীতি নিয়ে আস্ফালন করুন না কেনো তিনি আমেরিকান spirit র সমর্থক। তার বিশ্বাসে আমেরিকা"greatest country in the world" ( "Interview with Noam Chomsky, Bill Bennett", May 30, 2002 American Morning with Paula Zahn CNN ) পাঠক Chomsky র নিচের উক্তি দেখুন: "In many respects, the United States is the freest country in the world. I don't just mean in terms of limits on state coercion, though that's true too, but also in terms of individual relations. The United States comes closer to classlessness in terms of interpersonal relations than virtually any society" (Chomsky on Democracy & Education. Routledge) মজার ব্যাপার আমেরিকান রাষ্ট্রযন্ত্র Chomsky র মত বুদ্বিজীবিদের পোষে কারন তারা দেখাতে চায় আমেরিকা is FREE। পাঠক খেয়াল করেন, এভাবেই anarchism মার্কিন রাষ্ট্রযন্ত্রের নায্যতা দেয় মানুষের মনে মুক্তির ধর্মতাত্বিক কল্পনা দিয়ে। সংস্কৃতিগত ভাবে anarchist রাই আসলে মার্কিন।

এখানে Libertarian Socialist এবংNeo Conservative রা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। নগ্ন হয়ে সম্পুর্ন স্বাধীন হয়ে যুদ্ববিরোধী মিছিলের নাটক করতে থাকে anarchist রা আর গুয়ানতানামো কারাগারে পচতে থাকে ইসলামি জিহাদিরা। হে: হে: ভালোইতো তাই না!!! দ্বিতীয়ত,উনি প্রুধো(কথিত আছে ইনি সকল anarchist দের পিতা) বলে আরেক anarchist র নাম লয়েছেন। পাঠক এই প্রুধোর লিখিত 'The System of Economic Contradictions, or The Philosophy of Poverty' র দার্শনিক ও অর্থনৈতিক চিন্তা নিয়ে মার্ক্স ' The Poverty of Philosophy' রচনা করেন। সেখানে মার্ক্স দেখান প্রুধোর চিন্তার মধ্যে বুর্জোয়া ব্যবস্বা থেকে সর্বিক মুক্তির দিক নাই কারন ইতিহাস কি চিজ তা প্রুধো বুঝেন নাই।

এছাড়াও আরো নানা লিখায় মার্ক্স প্রুধোকে Critic করেন। যেমন- ১৮৪৬ সালে পাভেল আলেনকভ কে এক চিঠিতে মার্ক্স প্রুধোর চিন্তার দৈন্যতা ব্যাখ্যা করে নিম্নোল্লিখিত মন্তব্য করেন- "Unable to follow the real course of history, Mr Proudhon provides a phantasmagoria which he has the presumption to present as a dialectical phantasmagoria. He no longer feels any need to speak of the seventeenth, eighteenth or nineteenth centuries, for his history takes place in the nebulous realm of the imagination and soars high above time and place. In a word, it is Hegelian trash, it is not history, it is not profane history—history of mankind, but sacred history—history of ideas. As seen by him, man is but the instrument used by the idea or eternal reason in order to unfold itself. The evolutions of which Mr Proudhon speaks are presumed to be evolutions such as take place in the mystical bosom of the absolute idea. If the veil of this mystical language be rent, it will be found that what Mr Proudhon gives us is the order in which economic categories are arranged within his mind. It would require no great effort on my part to prove to you that this arrangement is the arrangement of a very disorderly mind." এখন বলেন চমস্কি, প্রুধোকে নবী মেনে আমাদের মুক্ত হতে হবে? এ নিয়ে আরো বিস্তারিত মজার আলোচনা করা যায়, আপাতত আমরা পরের(৩য়) point এ যাই। নিউটন বলছেন,' অক্টোবর-মহাসঙ্কটের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্যই এইটাঃ জনগণের নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান। এ-দীর্ঘমেয়াদী সুবিস্তৃত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার নিকট থেকে সতর্ক দূরত্ব রচনা করার কৌশলগত যে-অবস্থান গণমানুষ গ্রহণ করেছে, সেটাই বিশেষ করে ২০০৬-এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে ২০০৭-এর জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সময়কালের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আর এখানেই আমাদের দূর্বল গণতন্ত্রের যাবতীয় মুশকিলের বীজ নিহিত।

শাসকশ্রেণী এবং তাদের রাজনীতি সম্পর্কে গণমানুষের এই নির্লিপ্ততা একদিকে যেমন সুচিন্তিত, অন্যদিকে তেমনি দীর্ঘদিনের প্রশিক্ষণের ফলও বটে। এর কারণ ও প্রেক্ষাপট আলোচনা করা এখানে সম্ভব হবে না। কিন্তু এটুকু এমনিতেই বোধগম্য, রাজনৈতিক ক্ষমতা ভাগ-বাঁটোয়ারা করার যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকেই জনগণ নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, কিংবা পুরো প্রক্রিয়াটিকেই হয়তো তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। অথচ বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার উদ্যোগ তাঁরা নেননি। যদি নিতেন, বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো।

আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আগামী দিনে জনগণের সক্রিয়তার ওপরই। ' কথাটা স্ববিরোধী কারন গণমানুষের এই নির্লিপ্ততা যদি সুচিন্তিত অন্যদিকে দীর্ঘদিনের প্রশিক্ষণের ফল হয় তবে 'জনগণের সক্রিয়তা' বা 'বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার উদ্যোগ' এর অভাবের কথা নিউটন কেনো বলছেন?আবার বিকল্প শক্তি হিসেবে সংগঠিত ও সক্রিয় যদি হয়েই যদি বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তন করতে হয় তবে কেনো গণমানুষের এই নির্লিপ্ততার পক্ষে উনি সাফাই গান? এই সাফাই গেয়ে উনি কি ছাত্র/শ্রমিক আন্দোলন (১/১১ পরবর্তি সময়ে) কে redicule করলেন না?আবার এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই তার জেলে যওয়া। যাই হোক তারপরও 'সক্রিয়তার' জন্য নিউটনকে ধন্যবাদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.