পূর্বকথা : ইসরাইল; একটি পরিচিত নাম। যে নামের গায়ে লেপ্টে আছে আছে আরবদের রক্ত, ঘাম আর অনেক অশ্র“র বিন্দুকণা। ইসরাইল; এই নামটির জন্য, ফিলিস্তিনী আরবরা হারিয়েছে তাদের জন্মভূমি; আপনভূমিতে আজ ওরা অবাঞ্ছিত ও অনাহুত। অপরিচিত হয়ে উঠছে ওদের কাছে আজ নিজভূমির মাটি, বালুকণা আর বাতাসের গন্ধ; স্বভূমিতেও ওরা আজ শ্বাস টেনে নিতে পারেনা নিশ্চিন্তিভরে। ইসরাইল মানেই ফিলিস্তিনী আরবদের যত দুর্ভাগ্য আর বঞ্চনার গল্প; ইসরাইলী রাষ্ট্রের প্রতিটি রোঁয়াই শুড় উচিয়ে আছে ফিলিস্তিনীদের দিকে চরম সতর্ক ও ঘৃণাভরে।
এই অবহেলার কেসসার খানিকটা অংশ এই ছোট্র পরিসংখ্যানটুকুর মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে।
কিভাবে আছে ইসরাইলে আরব নারী
ইসরাইল নিজেকে দাবি করে থাকে গণতন্ত্রের একনিষ্ঠ অনুসারী হিশেবে। কিন্তু সেই ইসরাইল সর্ম্পুণরূপে গণতন্ত্রবিরোধীভাবে তার জন্মকাল ১৯৪৮ হতেই (কথিত) ইসরাইলের মাটিতে আরব সংখ্যালঘিষ্ঠদের বিরুদ্ধে চালিয়ে আসছে বর্ণবাদীমূলক আচরণ। অথচ এই ইসরাইল নিজেকে মনে করে মধ্যপ্রাচ্যের এক ও অদ্বিতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ইসরাইলে তরূনী মেয়েদের প্রতি খুবই বৈষম্যবাদী আচরণ করা হয়ে থাকে; আর এই তরূনীদের বড় অংশই হচ্ছে আরব।
১৯৪৮ সালে যুদ্ধ বেধে যাবার অব্যহতী পরেই ফিলিস্তিন হতেই উচ্ছেদ করা হয় অসংখ্য ফিলিস্তিনী নারী-পুরুষকে। অবশেষে দশলাখ ফিলিস্তিনী হতে মাত্র দেড়লাখ ফিলিস্তিনী আরব আপনভূমিতে অবশিষ্ট থাকে। তারা ইহুদীদের অধিকৃত অঞ্চলে বাস করতে থাকে, যে অঞ্চলটি ঐ বছরেই তাদের হাতে চলে গিয়েছিল। মূলত এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই ফিলিস্তিনের শহরগুলিতে আরবরা হয়ে পড়ে সংখ্যালঘু; আর যারা বাস করত, তারা থাকত গ্রামগুলিতে। এর অবশ্যাম্ভি ফল দাঁড়ায় আরবরা আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রতিটি েেত্রই পিছিয়ে পড়তে থাকে।
আর এর পিছনের অন্যতম আরেকটি কারণ ছিল ৪৮সাল হতে ৬৬ পর্যন্ত চলতে অব্যাহত সামরিক শাসন। এই সামারিক শাসন আরবদের যে কোন আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভিমুখ ও পদপেকে দাবিয়ে রাখতে সফল হয়।
কিন্তু, এত সকল বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আরবরা হতোদ্যম হয়নি; তারা অন্যদের মত আপনভূমি ছেড়ে প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলিতে উদ্বাস্তু হিশেবে আশ্রয়ও নিতে যায়নি। বরং তারা আপনভূমি আকড়ে ধরে পড়ে থাকে, এবং অবশেষে ৬৭ সালের পরে তারা নিজেদের জন্য ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র আদায় করে নিতে সম হয়। ইসরাইল সরকার সে সময় তাদের এই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়; কারণ তারা আশংকা করছিল হয়ত তাদের এই দাবির তীব্রতা তাদের রাষ্ট্রিয় স্বার্থের বিপে যাবে।
এভাবেই আরবরা অবশেষে বেশ কিছু েেত্র ইহুদীদের সাথে সমঅধিকার লাভে সফলকাম হয়। সত্তর দশকের মাঝের দিকে আরবরা নিজেদের নানা অধিকার নিয়ে সরব হয়ে উঠে; এ নিয়ে তারা প্রতিবাদ ও বিােভ ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ে। ৩০/৩/৭৬ সালের বিােভ তারই একটি প্রকাশমাত্র; এই দিনটি পরবর্তিতে ‘ভূমি দিবস’ হিশেবে আখ্যা পায়।
এত সব বাদ-প্রতিবাদ, বিােভের পরও আরবরা আজ অবধি স্বাধিকার পূর্ণরূপে লাভ করতে সম হয়নি। ইসরাইলের জন্মসাল হতে এখনো আরব নারীরাও পুরুষদের মতই এই বর্ণবাদী ও বৈষম্যবাদী আচরণের আজো নির্মম শিকার হয়ে আসছে।
বেসরকারী নানা প্রতিবেদন ও অভিসর্ন্ধভ হতে এই তথ্যগুলি বের হয়ে আসে।
((Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination against Women
: 1991)
) অনুসারে ইসরাইল নারীদের ব্যাপারে সকলপ্রকার বৈষম্য দূরীকরণে প্রতিশ্র“তবদ্ধ ছিল। এই ঘোষনা অনুসারে ইসরাইল নারীদের সমঅধিকার দিতে বাধ্য ছিল এবং যে কোন েেত্র পুরুষদের মতই অধিকার দেবার কথা ছিল। কারণ নারী-পুরুষের মাঝে এই ধরণের বৈষম্য থাকাটা মানবের সার্বজনীন অধিকারগুলিরই নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু ইসরাইলের পরিবেশ-পরিস্থিতি অন্য রাষ্ট্রগুলি থেকে অনেকটাই বিপরিত।
আর এই বিপরিত চিত্রটা অনেক বেশী ধরা পড়ে নানা েেত্রই ইসরাইলী নারী এবং আরব নারীদের অধিকারগুলির তূলনামূলক বিচার করতে গিয়ে। আর সম্ভাব্য একটি কারণ হতে পারে ইসরাইলে ফিলিস্তিনীদের অধিকার সংরণ করে এমন কোন সংবিধান কিংবা আইন রচিত হয়নি। তবুও যে বিষয়টি বেশী চোখে পড়ে, তা হল ইহুদী নারীদের তূলনায় আরব নারীদের ুন্ন অধিকার।
একটি পরিসংখ্যানে চোখ বুলালে বিষয়গুলি পরিষ্কার হয়ে আসবে। ২০০৩ সালের সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে ইসরাইলের মোট নাগরিকের ২০% হচ্ছে ফিলিস্তিনী নাগরিক।
অথচ সরকারী চাকুরীতে কেবলমাত্র তাদের অংশগ্রহণের হার হচ্ছে মাত্র ৫.৫%। অবাক করা বিষয়ই বটে ! অন্যদিকে রাষ্ট্রের শ্রমবাজারে ফিলিস্তিনী নারীদের মোট অংশগ্রহণের হার ২০০৩ সালে ২% হতে নেমে আসে ১.৭% শতাংশে। আর সেটাই ২০০৪ সালে কমে এসে দাঁড়ায় ১.৩% শতাংশে। এ থেকেই বুঝে আসে কীভাবে ইসরাইলে ফিলিস্তিনী নারীদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। আর এগুলির পরিসংখ্যানগুলির কোনটিই বেসরকারী নয়; সরকারী।
এভাবেই ফিলিস্তিনী নারীদের অধিকার বিভিন্ন েেত্রই ইহুদী নারীদের তূলনায় ুন্ন হয়ে আসছে।
হ্যা, কোন েেত্র েেত্র আরবী নারীদের অর্ন্তভূক্তির হার ছিল ইহুদী নারীদের তূলনায় বেশী। কিন্তু, বিশেষ বিশেষ েেত্র। যেমন শিা ত্রেগুলিতে আরব নারীদের হার হচ্ছে ৩৮%; অন্যদিকে ইহুদী নারীদের হার এই েেত্র তূলনামূলক কম- ১৯%। কিন্তু অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়ী ত্রেগুলির চিত্র হচ্ছে সম্পূর্ণ এর বিপরীত।
সেখানে ইহুদী নারীদের অংশগ্রহণ হচ্ছে ১৭%; আর আরব নারীদের কেবলমাত্র ৭%। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে সেই সনাতন প্রসঙ্গÑ আরব নারীরা হচ্ছে ফিলিস্তিনী। এভাবেই ইসরাইলে আরব নারীদের ইহুদী নারীদের তূলনায় যতটা না রয়েছে, কার্যেেত্র তার চেয়েও অধিক সংখ্যালঘু হিশেবে রেখে দেয়া হয়। আর এই বিষয়টির সবচে বেশী সুবিধা নেয় ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলি। তারা নিছক এই ধরণের বৈষম্যবাদী আচরণেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং নারী শ্রমিকদের মজুরী কম সহ নানা ধরণের অপমানমূলক ও অন্যায় শর্তাবলী জুড়ে দে যেগুলি পূর্ণতই আর্ন্তজাতিক নীতির বিরোধী।
কর্মেেত্র ইহুদী ও আরব নারীদের মধ্যে যে ধরণের বৈষম্য চলে থাকে, তার একটি প্রকৃষ্ট উদারহণ হতে অন্য একটি সরকারী পরিসংখ্যান। সেখানে দেখা যায় রাষ্ট্রিয় বিভাগগুলিতে ৯৭.৩% আরব মহিলা কাজ করে থাকে। তাদের মধ্যে ৮২% ই হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগে; আর নিম্নোক্ত মন্ত্রনালয়গুলিতে একজন আরব নারীর অংশগ্রহণ নেই। যেমন Ñ শিা মন্ত্রনালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, যোগাযোগ মন্ত্রনালয়, গণপূর্ত মন্ত্রনালয়, রিয়েল এষ্টেট মন্ত্রনালয় ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় ইত্যাদী। আর ধর্ম ও স্থানীয় পল্লী উন্নয়ন - এই দুইটি মন্ত্রনালয়ে কেবলমাত্র একজন করে আরব নারী কাজ কর্মরত।
শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে কেবলমাত্র দুইজন আরব নারী রয়েছেন।
আর বিচার বিভাগের পরিসংখ্যান মোতাবেক, সেখানে নারীদের মোট অর্ন্তভূক্তির হার হচ্ছে ৪০.৯%; যার মধ্যে ১৯৮জন হচ্ছে ইহুদী নারী (৮০.২%) আর ৬ জন হচ্ছে আরব নারী (২.৪%)।
প্রাথমিক শিার েেত্রও আরব ও ইহুদী নারীদের মধ্যে রয়েছে চরম বৈষম্য। ২০০৩ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে আরব নারীদের মধ্যে নিররতার হার হচ্ছে ১৪.৭%; যেখানে ইহুদী নারীদের সে হার কখনোই ৪.৫% এর বেশী হয় না।
উচ্চ শিার স্তরগুলিতেও একই দৃশ্য দেখা যায়।
উদারহণস্বরূপ আরব নারীদের মধ্যে কেবলমাত্র শতকরা ৭.১% নারী ১৬ কিংবা ততোধিক বছর শিার সুযোগ পেয়ে থাকে। অন্যদিকে ইহুদী নারীদের মধ্য হতে শতকরা ১৯% নারীই উচ্চ শিার পুরো সময়টুকুই শিার জন্য ব্যয় করতে পারে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ত্রেগুলিতে অবস্থা আরো করুণ। আরব নারীদের মোট বয়সের হার ইহুদী নারীদের থেকে গড়পরতা ৪ বছর কম হয়ে থাকে। আর পেছনের অন্যতম কারণ হচ্ছে নারীদের অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সুবিধাগুলি না পাওয়া; আর এই ক্ষেত্রেও আরব নারীদের হার ইহুদী নারীদের থেকে বেশী।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইসরাইলের স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি জরিপে জানা যায়, শতকরা ৩১% আরব নারী স্তন্য ক্যান্সারের জন্য পরীা করাতে সম হয়েছে; অন্যদিকে ইহুদী নারীদের েেত্র তার পরিমাণ ছিল শতকরা ৪৯.৫%। ২০০১ সালের এ জরিপের ক্ষেত্র ছিল কেবলমাত্র শহর; গ্রামগঞ্জ এর আওতার বাহিরে ছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।