গত ৬ সেপ্টেম্বর। রাত আনুমানিক ৮টা। কুড়িল ফ্লাইওভার। ঘুটঘুটে অন্ধকার। একটি চলন্ত প্রাইভেটকার থেকে ফেলে দেওয়া হয় একটি দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন নির্বাহী ফারুক আহমেদ ফরহাদকে।
ঘটনার প্রায় আধা ঘণ্টা আগে ওই ব্যক্তিকেই যাত্রী হিসেবে মিরপুর যাওয়ার কথা বলে বনানী-মিরপুর ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখ থেকে উঠায় ছিনতাইকারী চক্র। কিছু দূর যাওয়ার পরই প্রকৃত রূপ প্রকাশ পায় ছিনতাইকারীদের। তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে ফরহাদের পকেটে থাকা ডাচবাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে ৪০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়। পরে তাকে কুড়িল ফ্লাইওভারে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
গত ২২ আগস্ট সকাল ৬টার দিকে মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র সাইফুল ইসলামকে (২৫) গুলি করে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।
এর কিছুদিন আগে মহাখালী ফ্লাইওভার থেকেই অস্ত্রের মুখে বিমানবন্দরগামী একটি প্রাইভেট কার ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন ফ্লাইওভারে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও নীরব কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগীদের অনেকেই উল্টো হয়রানির ভয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি কিংবা মামলাও করছেন না। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি ফ্লাইওভারই রীতিমতো অরক্ষিত হয়ে যাওয়ার পরও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। দেখেও না দেখার ভান করছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্লাইওভারগুলোতে ল্যাম্বপোস্ট না থাকা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদাসীনতার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো যেতে পারে ওই ফ্লাইওভারগুলোতে। ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য এত টাকা খরচ করা হয় কিন্তু সামান্য কিছু টাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয় না। এটা সত্যিই লজ্জাজনক।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, ল্যাম্পপোস্ট নিশ্চিত করা র্যাবের কাজ নয়।
তবে ফ্লাইওভারগুলোর ব্যাপারে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। বাড়ানো হবে টহল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন ফ্লাইওভারের নিচে দিনে-দুপুরেই চলে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি। একই স্থানে নিরাপদে মাদক সেবন করে অপরাধীরা সময় সুযোগ বুঝে অংশ নেয় ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। আবার অনেক অপরাধী সাধারণ দর্শনার্থীর বেশে ফ্লাইওভারের উপরে উঠে শিকারের আশায় অপেক্ষা করতে থাকে।
তার সিগন্যাল পাওয়ার পরই অপর সহযোগীরা মোটরসাইকেলে করে বাজপাখির মতো উড়ন্ত ছিনতাইয়ে অংশ নেয়। মুহূর্তের মধ্যেই মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেট কার ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়। অন্যদিকে, বিভিন্ন ছিনতাইকারী চক্র তাদের কাজের সুবিধার জন্য বিরূপ আবহাওয়াকে বেছে নেয়। মাঝে মধ্যেই তারা বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতিবাজ মেরামতকারীদের ম্যানেজ করে ফ্লাইওভারের ল্যাম্পপোস্ট দীর্ঘদিন ধরে ফিউজ করে রেখে দেয়। অন্য এলাকা থেকে ফ্লাইওভারে নজরদারি কম থাকায় ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের জন্য ইতোমধ্যেই নিরাপদ জোন হিসেবে বেছে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
গত বছর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর এক তরুণীর বস্তাবন্দী লাশ ফেলে রেখে গিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক-উত্তর) উপ-কমিশনারের কার্যালয়ের দূরত্ব মাত্র ৩০০ গজ। আর খিলক্ষেত থানার দূরত্ব মাত্র ৫০০ গজ। অথচ ওই ফ্লাইওভারে অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় স্থানীয়দের অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাংলামোটর এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হোসেন নভেল বলেন, ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোনো শ্রেণী-পেশার মানুষই, এমনকি পুলিশ সদস্যরাও।
ব্যবসায়িক কাজের জন্য মাঝে মধ্যেই আমাকে খিলগাঁও যেতে হয়। তবে ছিনতাইকারীদের ভয়ে কখনো সন্ধ্যার পর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যাওয়ার সাহস পাই না। ছিনতাইকারীরা সবকিছু নেওয়ার পরও শারীরিকভাবে আঘাত করে যায়। তবে সব কিছু জানার পরও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সত্যিই বিষয়টি হতাশাজনক।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, প্রতিনিয়তই যে ফ্লাইওভারের ওপর ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে এটা ঠিক নয়। তবে ফ্লাইওভারের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে টহল বাড়াতে বিশেষভাবে অবহিত করা হবে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দেওয়া উচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।