সিরিয়ায় ৭২ ঘণ্টাব্যাপী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০টি লক্ষ্যস্থল চিহ্নিত করা হলেও হোয়াইট হাউস থেকে তা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুজন শীর্ষ পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়া অভিযান পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন মার্কিন কর্মকর্তা লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে বলেন, ‘৭২ ঘণ্টার মধ্যে কয়েক দফায় হামলা হবে। প্রতি দফা হামলার পর এর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হবে।
অভিযান শেষ হলে আমরা তা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেব। ’
আরেকজন কর্মকর্তা জানান, এই হামলা খুব বেশি কার্যকর হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে ‘শক্তি প্রদর্শনের মহড়া’ হবে এটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সীমিত আকারে হামলা চালানোর পক্ষে। তিনি কিছু বিমান দিয়ে সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে শুধু বোমা হামলা চালাতে চান।
তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনের পরিকল্পনা হলো বিমান হামলার পাশাপাশি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা। ভূমধ্যসাগরে ইতিমধ্যে অবস্থান নেওয়া পাঁচটি রণতরি থেকে মূল হামলা পরিচালিত হবে। রণতরিগুলো এমন অবস্থানে রাখা হবে, যাতে সেগুলো সিরিয়ার পাল্টা হামলার আওতার বাইরে থাকে।
সিরিয়ায় অভিযানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ওবামা। তারপর মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সিরিয়া অভিযানের বিষয়ে ভোটাভুটি হতে পারে।
ওবামা গতকাল সাপ্তাহিক বেতার ভাষণে সিরিয়া অভিযানের পক্ষে সমর্থন দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এটা আরেকটি ইরাক বা আফগানিস্তান যুদ্ধের মতো যুদ্ধ হবে না। আমি জানি, মার্কিন জনগণ এক দশক ধরে যুদ্ধ দেখতে দেখতে ক্লান্ত। যদিও এরই মধ্যে ইরাক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। আফগানিস্তান যুদ্ধও শেষ হওয়ার পথে।
’ ভাষণে সিরিয়া অভিযানের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন ওবামা।
আসাদকে দায়ী করল ইইউ: ইউরোপের ২৮টি দেশের সংগঠন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার জন্য গতকাল দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে দায়ী করেছে। তবে ওই হামলার অভিযোগ সম্পর্কে জাতিসংঘের তদন্ত দলের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত দেশটিতে হামলা না চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইইউ।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে বলেছেন, আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যেতে পারে। ওলাঁদ মার্কিন হামলার পক্ষে থাকলেও সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, ফ্রান্সের ৬৪ শতাংশ নাগরিকই হামলার বিরুদ্ধে।
পৃথক জরিপে দেখা যায়, জার্মানির জনগণের ৭০ শতাংশই হামলার বিপক্ষে।
সমর্থনের সন্ধানে কেরি: এদিকে সিরিয়ায় অভিযানের পক্ষে সমর্থন আদায়ে ইউরোপ সফরের অংশ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ফ্রান্স গেছেন। প্যারিসে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফ্যাবিয়াসের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এ সময় কেরি বলেন, ‘ফ্রান্সকে পাশে পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ। ’ লরাঁ ফ্যাবিয়াস বলেন, ‘ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশাপাশি অবস্থান করছে।
’
এর আগে গত শুক্রবার লিথুয়ানিয়ায় ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন জন কেরি। বৈঠকের পর কেরি দাবি করেন, সিরিয়া অভিযানের পক্ষে অবস্থান নেওয়া দেশের সংখ্যা এখন দুই সংখ্যার ঘরে পৌঁছেছে। অভিযানের পক্ষে অবস্থান নেওয়া দেশের সংখ্যা বেড়েছে বলে দাবি করেছে ফ্রান্সও।
সীমারেখা অতিক্রম: জন কেরি বলেন, তিনি এবং আরব লিগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একমত হয়েছেন যে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেঁধে দেওয়া সীমারেখা অতিক্রম করেছেন। প্যারিসে গতকাল আরব লিগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ কথা বলেন।
হোয়াইট হাউসের বাইরে বিক্ষোভ: সিরিয়ায় হামলা না চালানোর জন্য গতকাল হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন অন্তত ২০০ মানুষ। এ সময় তাঁরা যুদ্ধবিরোধী নানা স্লোগান দেন এবং সিরিয়া অভিযানের অনুমতি না দিতে মার্কিন সিনেটের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশ্বজুড়ে প্রার্থনা: রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের নেতৃত্বে সিরিয়ায় শান্তির জন্য গতকাল বিশ্বজুড়ে প্রার্থনা দিবস পালিত হয়। সারা বিশ্বের রোমান ক্যাথলিকরা এই প্রার্থনায় অংশ নেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরাকে: সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ইরাকে গেছেন ইরানের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।
দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। ইরান এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট বাশারের পাশে থাকা হাতে গোনা কয়েকটি দেশের একটি। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন সামরিক অভিযান ও দখলদারির শিকার ইরাকও সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের বিপক্ষে। বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।