সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সিরিয়ায় হামলা করলে তারা ‘ব্যর্থ’ হবে। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে এটিকে তিনি পশ্চিমাদের ‘কাণ্ডজ্ঞানের প্রতি অসম্মান’ বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা গতকাল সোমবার সিরিয়ায় বেসামরিক লোকদের ওপর রাসায়নিক হামলার অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছেন।
রাজধানী দামেস্কের কাছে গত সপ্তাহে সরকারি বাহিনীর রাসায়নিক হামলায় এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে বলে বিদ্রোহীরা দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা অভিযোগ সত্যি হলে বাশার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
রাশিয়ার ক্রেমলিনপন্থী দৈনিক এলজেভেসতিয়ার কাছে বাশার দাবি করেন, তাঁর সেনারা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেননি। সেখানে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হলে সরকারি বাহিনীরও প্রাণহানির ঝুঁকি ছিল।
সাক্ষাৎকারে বাশার বলেন, সিরিয়ায় হামলা করলে যুক্তরাষ্ট্র পরাজয়ের সম্মুখীন হবে, যেমনটি হয়েছে ভিয়েতনাম থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধের ক্ষেত্রে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, হোয়াইট হাউস ও প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন কিছুদিন ধরে যে তৎপরতা শুরু করেছে, তাতে মনে হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি সিরিয়ায় স্বল্পমাত্রার সামরিক পদক্ষেপের নির্দেশ দিতে পারেন।
জন কেরি গত কয়েক দিন ওয়াশিংটনের মিত্রদের সঙ্গে ফোন করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ওবামাকে বলেন, সবকিছু দেখে এই উপসংহারে পৌঁছানো গেছে, দামেস্কই ওই রাসায়নিক হামলার জন্য দায়ী। ওলাঁদের দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, দুই প্রেসিডেন্ট ওই নজিরবিহীন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি যৌথ জবাবের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
‘চরম পরিণতির’ ব্যাপারে লাভরভের সতর্কবাণী: রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ সিরিয়ায় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে জন কেরির প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এই উদ্যোগ ‘ভয়াবহ পরিণতি’ ডেকে আনবে। লাভরভ গত রোববার কেরিকে টেলিফোনে বলেন, ওয়াশিংটন থেকে যেসব মন্তব্য আসছে তাতে মস্কো ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।
ঘটনাস্থলে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা: বাশার সরকার রোববার জাতিসংঘের পরিদর্শকদের ওই এলাকা যাওয়ার অনুমোদন দেয়। পরিদর্শকেরা নমুনা সংগ্রহ করতে গতকাল ঘটনাস্থলে গেছেন। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাঁদের যুক্তি, অব্যাহতভাবে গোলাবর্ষণ করায় ঘটনাস্থল ‘দূষিত’ হয়ে গেছে।
সময়ক্ষেপণের সময় নেই জাতিসংঘের: জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, রাসায়নিক হামলার অভিযোগ তদন্ত করে সময় ক্ষেপণের সময় নেই।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে গতকাল তিনি বলেন, প্রতিটি ঘণ্টার মূল্য আছে।
নিরাপত্তা পরিষদের সর্বসম্মত সমর্থন ছাড়াই হামলা সম্ভব: ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ বলেন, গোলন্দাজ বাহিনী বোমাবর্ষণের মাধ্যমে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ নষ্ট করে দিতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের সর্বসম্মত সমর্থন ছাড়াই সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার জবাব দেওয়া সম্ভব।
কয়েক দিনের মধ্যেই সিরিয়ায় হামলা?: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ‘কয়েক দিনের মধ্যেই’ সিরিয়ার বিরুদ্ধে যৌথ সামরিক হামলা শুরুর পরিকল্পনা করছে বলে দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকা খবর দিয়েছে। তবে হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা এ ধরনের খবর নাকচ করে বলেন, প্রেসিডেন্ট (ওবামা) এখনো সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেননি।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ওবামা গত শনিবার তাঁর শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি সিরিয়ায় ‘নির্বিচারে’ রাসায়নিক হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে একটি ‘সিদ্ধান্ত’ নেবেন।
জর্ডানে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা: এদিকে পশ্চিমা ও মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা গতকাল জর্ডানের রাজধানী আম্মানে পৌঁছেছেন। সিরীয় সহিংসতার আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন বলে জানান জর্ডানের কর্মকর্তারা।
জর্ডানের সেনাপ্রধান মেশাল মোহাম্মদ আল-জবান এবং মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার ২০ দেশের জন্য মার্কিন কমান্ড ‘সেন্টকমে’র প্রধান জেনারেল লিলয়ড অস্টিন এই বৈঠক আহ্বান করেন।
এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।