ইসরায়েল গতকাল শুক্রবার সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়েছে। এক ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স আজ শনিবার জানায়, লেবাননের হিজবুল্লাহদের জন্য পাঠানো একটি ক্ষেপণাস্ত্রের চালানের ওপর বিমান হামলা করা হয়েছে।
ইহুদি রাষ্ট্রটির পদক্ষেপ থেকে এটা পরিষ্কার হয়েছে, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের হাতে পৌঁছাক, সেটি ইসরায়েল চায় না। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দীর্ঘদিনের মিত্র হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। প্রায় দুই বছর ধরে সিরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তাতে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, সরকার রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত হিজবুল্লাহর হাতে তুলে দেবে।
ওই অঞ্চলের একটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত লক্ষ্য করে হামলা পরিচালিত হয়নি।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবারের হামলার লক্ষ্য ছিল সম্ভবত একটি ভবন। ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সভাপতিত্বে মন্ত্রী পর্যায়ের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় হামলার অনুমতি দেওয়া হয়।
এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, বৃহস্পতি ও শুক্রবারের মধ্যে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো সিরিয়ায় হামলা চালায়। তবে বিমানগুলো সম্ভবত সিরিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি।
ইসরায়েলের বিমানবাহিনী অনেক দিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের কাছে এক বিশেষ ধরনের বোমা আছে। এক স্থানের বিমান থেকে সেগুলোকে ছুড়ে দিলে তা কয়েক কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। যদি ইসরায়েলের দাবি সত্যি হয়ে থাকে, তবে নিজ আকাশসীমা ব্যবহার করেই দেশটি সিরিয়ায় হামলা চালাতে সক্ষম হবে।
লেবানন সরকার বলেছে, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর মধ্যে জরুরি তত্পরতার আভাস দেখা গেছে। লেবাননের নিরাপত্তা বাহিনীর এক সূত্র রয়টার্সকে জানায়, সম্ভবত ইসরায়েল আকাশ থেকে সিরিয়া ও লেবাননের মধ্যে অস্ত্রের চালান পর্যবেক্ষণ করছিল।
ওই চালানটি সিরিয়ার সরকারের কাছ থেকে হিজবুল্লাহর কাছে যাচ্ছিল। হিজবুল্লাহরা ২০০৬ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে ৩৪ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে এসেছে।
মার্কিন অভিযান এখনই নয়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গতকাল শুক্রবার বলেছেন, সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের অভিযান চালানোর উপযুক্ত সময় এখনো আসেনি। তবে চলমান গৃহযুদ্ধে সিরীয় সরকার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য ওবামা একটি প্রস্তাব হাজির করেছেন।
সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে বিতর্ক জোরালো হয়ে উঠলেও সিরিয়ার সঙ্গে যেকোনো বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি ওবামা।
সিরিয়ায় সেনা অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি এমন কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। ’ তিনি আরও বলেন, ওই অঞ্চলের নেতারাও তাঁর সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওবামা এখন কোস্টারিকায় অবস্থান করছেন।
সিরিয়ার সরকারবিরোধী সমর্থকদের বক্তব্য হলো, যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিতে দেরি করছে। এ প্রসঙ্গে ওবামা বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করছি না।
সিরিয়ার ওপরে যত দিক দিয়ে চাপ প্রয়োগ করা যায়, আমরা সবই করছি। ’
কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট লরা চিনচিলার সঙ্গে যৌথভাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বারাক ওবামা বলেন, সিরিয়ার সরকার সত্যিই রাসায়নিক বোমা ব্যবহার করেছে কি না, তা নিশ্চিত হতে আরও কিছু প্রমাণ লাগবে।
রাসায়নিক অস্ত্র চায় না হিজবুল্লাহ
ইসরায়েলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আজ শনিবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাসায়নিক অস্ত্রের মজুতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন এবং লেবাননের হিজবুল্লাহরা ওই সব অস্ত্রের মালিক হতে চায় না।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কৌশলবিদ আমোস গিলার্ড রয়টার্সকে আরও বলেন, ‘সিরিয়ার কাছে অনেক রাসায়নিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র আছে। তবে এখন সবই সিরীয় সরকারের দখলে।
’ তিনি বলেন, ‘হিজবুল্লাহর কাছে রাসায়নিক অস্ত্র নেই। তারা এ ধরনের অস্ত্র চায় না। তারা চায় এমন কিছু, যা দিয়ে পুরো দেশের (ইসরায়েল) ওপরে হামলা চালানো যাবে। ’
গিলার্ড সম্ভবত হিজবুল্লাহর কাছে থাকা ৬০ হাজার ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য।
গিলার্ড বলেন, ‘যারা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তারা নিজেরাই তাতে মরে। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।