কৃষ্ণশুভ্রারা বেঁচে থাকুক দূরে সুদূর স্বপ্নসীমান্তে
****ক্যাডেট নাম্বার ৯৯৯ ভাইয়ার লেখা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে এই লেখাটি লিখতে। জানি আমি কতটা পারব এই রোমাঞ্চকর ঘটনাকে জীবন্ত করে ফুটিয়ে তুলতে। এই ঘটনার প্রত্যেকটি চরিত্র সত্য। তবে নাম গুলো কে পরিবর্তন করা হয়েছে।
২০০১ সাল,সোহরাওয়ার্দী হাউস,মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ
রাত দশটা ,পোর্চ
সারাদেশে ক্রিকেটের জোয়ার চলছে।
কয়েকদিন আগে মাত্র বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। ক্রিকেটিয় উম্মাদনার আচড় থেকে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ ও বাদ যায়নি। আর এইসব উম্মাদদের মধ্যে বদ্ধ উম্মাদ
তারা দুইজন পিয়াল আর পুলক। পিয়াল পাকিস্তানের অন্ধ সমর্থক। বাংলাদেশ ছাড়া সে আর একটা দলকেই সমর্থন করে পাকিস্তান।
পুলক ঘোর শ্রীলংকার সমর্থক। সে জয়সুরিয়ার নামে পাগল।
পাকিস্তানের আরেক সমর্থক রাফাত। তার ভালবাসা ওয়াকার ইউনিস। সেলিম আরেক ক্রিকেট পাগল তার ভাললাগা শ্রীলংকা আর অস্ট্রেলিয়া।
আরেকজন মাশফিক। সে নিজে ভালো খেললেও খেলাটা ঠিক বুঝেনা বলেই সবাই মনে করত। কারণ সে অসংলগ্ন কথা বলত বেশি আর সে ছিল সুবিধাবাদী দক্ষিন আফ্রিকার সমর্থক।
আর সবচাইতে রহস্যময় সাপোর্টার রাজন। সে যে কোন দল সমর্থন করে তা আজও সবার কাছে রহস্য।
শোয়েব আখতারের বোলিং দেখে সে নাচছে একদিন তা দেখে তাকে পাকিস্তানের সাপোর্টার যদি কেউ ভাবেন ভুল করবেন। কেননা এই শোয়েব লারার হাতে মার খেলে সে নাচে। ভাববেন না সে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কেননা তার কাছে লারার চেয়ে আলেক স্টুয়ার্ট তার বেশি প্রিয়। নাহ,তাই বলে ইংল্যান্ড না কেননা শচীনের বেধড়ক বাড়ি গফ দের উপর পড়লে সে হয় রোমাঞ্চিত। আবার নিউজিল্যান্ড ভারতে তাকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষেই দেখা যাবে।
আবার জয়ার মার খেয়ে যখন কেয়ার্নসরা মুখ লুকায় তখনো সে উচ্ছসিত।
এমনি সব পাগলে ভরা এই সোহরাওয়ার্দী হাউস। প্রায় প্রতি দিন থার্ড প্রেপের পড় কিংবা ছুটির সন্ধ্যায় অবসরে ঝড় বয়ে যায় ক্লাশ টুয়েলভের রুম গুলোতে। বিষয় অবশ্যই ক্রিকেট। আজ অবশ্য কোন ঝড় বয়ে যাচ্ছে না।
সবাই আজ একাট্টা। পাকিস্তান শ্রীলংকার কালকের ম্যাচ দেখতেই হবে। আপাত গুরুত্বহীন এই ম্যাচ গুরুত্ব পাওয়ার কারণ একটাই। খেলা দেখার পারমিশন মেলেনি। কিন্তু কী ভাবে তারা রাতে টিভি দেখবে।
টিভির রুম তালা মারা থাকে সেটা নিয়েই আজ এ জরুরী মিটিং।
মিটিং শেষ হলো। মোটামুটি সবাই যে যে যার যার কাজ বুঝে নিল। পুলকের মেজাজ খিচড়ে আছে কেননা সবচেয়ে লো প্রোফাইল অথচ ঝুকি পুর্ন কাজ তার। রাফাতকে দেয়া হলো বোরিং কাজ।
আর বাকি সবাই রোমঞ্চিত চিত্তে ঘুমাতে গেল পরেরদিনের উত্তেজনা মাথায় রেখে।
সকাল ৮:১৫ কমন রুম
নিজাম ভাই স্টোর রুমে যাব খুলে দেন। -পুলকের আওয়াজে ঘুরে দাড়াল হাউস বেয়াড়া নিজাম। তার হাত ভেজা। আবার ওদিকে পুলকের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কী করবেন?-তার প্রশ্ন পুলকের দিকে।
আমার জুতা বদলাব । প্লিজ তাড়াতাড়ি করেন।
করিডোর মুছতে মুছতে নিজাম পুলকের দিকে চাইল। তাকেও তাড়াতাড়ি একটু বাসায় গিয়ে বাজার করতে হবে।
আর পুলক তো অত্যন্ত বিশ্বস্ত। সে সরল বিশ্বাসে চাবির গোছা পুলককে দিয়ে বলল আপনি নিয়ে নেন আর চাবি দিয়ে যায়েন। আমি খুলে দিতে গেলে দেরি হয়ে যাবে।
চাবির গোছা পেয়ে চুমা দিল পুলক। স্টোরে যাওয়ার ভান করল।
আর এই ফাকে নিজেদের একটা চাবি গোছায় ভরে আসল টিভির রুমের চাবি খুলে নিল।
সে সফল। রিস্কি এবং লো প্রোফাইল কাজটি এতটা সহজে হবে বোধ করি সে এখন ও বিশ্বাস করতে পারছে না। পকেটে চাবি নিয়ে সে একাডেমিক ব্লকের দিকে রওয়ানা হল।
(চলবে............)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।