আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাটপার যখন BUET এর ফার্স্ট বয়



বেশ ক'বছর আগের কথা। তখন আমরা 4/2 'র ছাত্র। BUETএর সিনিয়র। গায়ে একটা ইয়ে ইয়ে ভাব। সারাক্ষণ Rag Corner এ বসে গুলতানি মারতাম আর জোরে জোরে গান বাজিয়ে নিজেদের কর্ততৃ্ব প্রতিষ্ঠার একটা প্রবল চেষ্টা চালাতাম।

জুনিয়র মেয়েদের দিকে ভাবের চোটে এমনভাবে তাকাতাম যেন তাদেরকে আমি থোরাই কেয়ার করি (অথচ মনে মনে হায় হায়, ভাবের চোটে তো আমার আম-ছালা সব গেল ) সেরকম এক সকাল বেলা Rag Corner এ বসে আছি। আমাদের মেকানিক্যালের এক বন্ধু এসে জিজ্ঞেস করল "তোদের ফার্স্ট বয় কে রে?" বললাম। সে তখন বলল যে গতকাল ডেল ক্যাফেতে তার জনৈক জিতুর সাথে মোলাকাত হয়েছে যে নিজেকে ইলেকট্রিক্যালের ফার্স্ট বয় হিসাবে দাবি করে। শুনে মাথা অর্ধেক নষ্ট হল। এরপর সে জানাল যে নাকি আবার 1/1, IPE'র জনৈকা সুন্দরির সাথে প্রেম করে।

শুনে মাথার বাকিটা যা ভাল ছিল তা-ও গেল। ব্যাটা নিজেরে ফার্স্ট বয় বলিস ভাল কথা, কিন্তু চাপা মাইরা আমাদের ছোট বোনের () দিকে হাত বাড়াবি ক্যান? সচেতন বড় ভাইরা () তৈরি হয়ে গেল "ছোট বোন" রক্ষা মিশনে। পরদিন আমাদের ক্লাস ছিল ১১টা পর্যন্ত। সেখান থেকে সোজা Rag Cor ner আসা মাত্র খবর পেলাম যে সেই ফার্স্ট বয় ডেল ক্যাফেতে বসে চুটিয়ে প্রেম করছে। ২/৩ জন অতি উৎসাহি নিয়ে সাথে সাথে আমি রওনা দিলাম ঐদিকে।

মেকানিক্যালের সেই বন্ধু দেখিয়ে দিল সেই ছেলেকে। সামনে যাওয়ার পর বুঝলাম আমাদের কিছু বলার সাহস নাই, হুদাই ফাল পাইরা চইলা আসছি। ক্যাফের ১ দরজা দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বের হয়ে আসলাম । পরে সাহস সন্চয় করে আবার গেলাম... - ভাই আপনার পরিচয় ? - আমি জিতু (চরম confident) - জিতু কে ? - এখানে না বাইরে চলেন কথা বলি। - না, এখানেই বলতে হবে।

- আসেন-ই নারে ভাই, সিগারেট খেতে খেতে কথা বলি। বলে সে আমাদের প্রায় টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এল আর বান্ধবীকে বলল হল-এ চলে যেতে। আমরা বাইরে আসলাম। ওকে বললাম যে ভাই শুনলাম আপনি নাকি ইলেকট্রিক্যালের ফার্স্ট বয়, তো আমরাও তো ইলেকট্রিক্যালেই পড়ি তাই জানতে আসলাম ঘটনা কি। তখন সে বলল যে সে EEEতে 1/1 এ ভর্তি হয়েছিল; পরের সেমেস্টারে সে scholarshipপেয়ে জাপান চলে যায়।

এবং সে 1/1এ section B থেকে প্রথম হয়েছিল। ঘটনাক্রমে আমরা সবাই ছিলাম section Aএর ছাত্র। 1/1এ section B থেকে কে প্রথম হয়েছিল সেটা 4/2 তে বলা খুব কঠিন। তাই সবাই একরকম হাবলা হয়ে গেলাম এবং কি করব না করব না বুঝে উঠতে পেরে কিছুক্ষণ ভোদাই-এর মত দাঁড়িয়ে রইলাম। এরপর সরি-টরি বলে তাকে আসন্ন RAG অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিয়ে চলে আসলাম।

বিকালে পাওয়ার স্টেশন পরীক্ষা ছিল। লাইব্রেরি চলে গেলাম আমরা পড়তে; এই পরীক্ষা count করতেই হবে, নাইলে গেছি। ঘন্টাখানেক পর section B-এর কয়েকজন এল। ওরা নিশ্চিত করল যে পোলা আমাদের পুরাই আবুল বানাইছে। ও আস্তা ১টা টাউট।

সাথে সাথে দৌড় দিলাম আবার। পাওয়ার স্টেশনরে গুল্লি মারি। জিতুকে পাকরাও করলাম। Rag Cor nerএর মাঝখানে বসিয়ে একদম পুলিশ-মার্কা জেরা শুরু করলাম। আশেপাশে প্রায় ৫০ জন।

আমরা ওর ID দেখটে চাইলাম। এক পর্যায়ে পকেট থেকে ১টা ID বের হল যেটাতে স্টুডেন্ট নং ছিল ১০/১২ ডিজিটের, যেখানে স্বাভাবিক ৭ ডিজিট। ব্যাস আর পায় কে! সে স্বীকার করল যে সে ভূয়া। ইলেকট্রিক্যালের ফার্স্ট বয় পরিচয় দিয়ে সে ঐ মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতো আর প্রেম করতো। আমাদের সামনে তখন পবিত্র দায়িত্ব আমাদের ছোট বোন () কে রক্ষা করা।

টাউট-টাকে দিয়ে ঐ মেয়েকে ফোন করে Rag Cor nerএ আনালাম; জিজ্ঞেস করলাম সে ঐ ছেলেকে নিয়ে কি জানে। মেয়ে দেখি লজ্জায় শেষ। বেচারি মনে করেছিল যে আমরা ওর প্রেমিকের বন্ধু, ওর সাথে দেবর-ভাবিসুলভ রসিকতা করছি। তখন আস্তে আস্তে বলা হল পুরা কাহিনী। নকল ID দেখালাম।

মেয়েটার জন্য বেপারটা আসলে খুব কষ্টকর ছিল। কিন্তু আমরাই বা কি করতে পারি? আমাদের একটা পবিত্র দায়িত্ব আছে না । আমরা তখন ঐ ঠগকে DSW অফিসে সোপর্দ করলাম এবং বীরের মত পাওয়ার স্টেশন পরীক্ষা দিতে গেলাম (বড়সড় ডাব্বা মারছিলাম ১টা পরীক্ষায় )।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.