“হয় তুমি ইসলাম গ্রহণ করবে নয় আমাকে তালাক দেবে”
“যদি একটাও না দেই?”
“তাহলে আমাকে দিতে হবে। ”
“কোনটা দেবে?”
“আমারতো দেবার ক্ষমতা একটা আমি তোমাকে তালাক দিলাম। ”
“আর মিলন?”
“ও আমার ছেলে, আমার কাছেই থাকবে। ”
“ও.কে। ”
অহিদ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে অনেক দিন আগে।
ইচ্ছে ছিল ভালো একটা চাকরির। কিন্তু হলো না। নিঝুমের সাথে পরিচয় হয় এক নাটকীয় কায়দায়। তারপর এগিয়ে গেল অনেক দূর, জীবনের বন্ধন পর্যন্ত।
নিঝুম পিতা-মাতার একমাত্র মেয়ে।
মিরপুর ২ নম্বরের এইচ ব¬কে নিজস্ব বাড়ি। একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল। ওর এক বান্ধবী অহিদ সাহেবের অফিসের ঠিকানা দিয়েছিল। বলেছিল, “লোকটা ভালো। তোকে পছন্দ করলে একটা ভালো চাকরি দিতে পারে।
”
পরের দিন অহিদ সাহেবের অফিসে গেল। কথা হলো। চাকরির অশ্বাসও পেল। বললেন, “আগামী পরশু আসেন। ”
সেদিন অফিসে আসার জন্য নিঝুম তাকে ফোন করল।
অহিদ বলল, সে এখন অফিসের বাইরে; মিরপুরে। সময় হলে তাকে ফোন দেবে।
অফিসে লোকজন কম। অহিদ নিঝুমকে ফোন করল। নিঝুম অফিসে এলো।
“আপনার কি চাকরির বিশেষ দরকার। ”
“কেন?”
“জানতে যাচ্ছি। ”
“তেমন নয়, শখ। ”
“শখ করে কেউ চাকরি করে নাকি?”
“আমি করব। ”
“কাজে খুব আগ্রহী দেখছি।
”
“তা কোন ধরনের কাজ পছন্দ করেন?”
“একটা হলেই হয়। ”
“বিয়ে করে সংসারী হোন। ”
“আমাকে কেউ বিয়ে করবে?”
“চেষ্টা করছেন কি?”
“তা করিনি তবে বুঝতে পারি। ”
“সুন্দরী মেয়েরা বেশি বোঝে। ঠিক না বুঝলেও পুরুষেরা তার কথার মূল্য দেয়।
”
“আমি বুঝি সুন্দরী?”
“তাই নয়তো কি? আমি কি ভুল দেখেছি”
রূপের প্রশংসায় নিঝুম একটু হাসে। সকল মেয়েরাই রূপের প্রশংসায় হাসে, খুশি হয়। তবু নিঝুম প্রতিবাদ করে। প্রতিবাদের ভাঁজে ভাঁজে মন উদ্বেলিত হয়। একটা আনন্দ আনচান করে।
চাকরির কথা সেদিন আর হয় না। পরের দিন নিঝুম টেলিফোনে করে। বলে, “কেমন আছেন?”
“ভালোই। ”
“কালতো কিছুই হলো না। ”
“কে বলল, কিছুই হয়নি? অনেক হয়েছে।
ধরুণ আপনার চাকরিটা হয়ে গেছে। ”
“কিভাবে ধরব?”
“আমিতো কথা দিয়েছি। ”
“কাল আফিসে আসি?”
“না, না। সামনের মাসেই একটা পোস্ট খালি হবে। ”
প্রতিদিন দুজনের একবার করে কথা হয়।
ধীরে ধীরে চাকরির কথাটা বাদ পড়ে যায়। দুজন এখন প্রতিদিনই দেখা করে। অহিদ সাহেবকে জীবন সঙ্গী হিসাবে পাবে এ জেনে নিঝুম নিজেকে নিয়ে দারুণ গর্ব করে। কোন একদিন কাজী অফিসে গিয়ে সম্পর্ক চিরদিনের করে নেয়। কথাটা কেউ জানে না।
একদিন নিঝুম মায়ের কাছে ধরা পড়ে যায়। মা তার মাতৃত্বের মূর্তি বুঝে ফেলে। নিঝুম সব স্বীকার করে। মা অহিদকে ফোন করে বাসায় নিয়ে আসে। নিঝুমকে নিয়ে যেতে বলে।
হঠাৎ করে মা-বাবাকে বুঝতে পারবে না বলে অহিদ সময় নেয়। মা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিশ্চূপ হয়ে যায়।
অহিদের যাওয়া আসা ক্রমাগত বেড়ে ওঠে। নিঝুমও যেন এমন একটি জীবন চেয়েছিল। যে জীবনে কেবল সুখ হাতছানি দিয়ে যায়।
সেদিন দুপুরে নিঝুম ফোন করল। বলল, বাড়িতে কেউ নেই। তার একাকী ভালো লাগছে না।
অহিদ কলিংবেল চাপতেই নিঝুম দরজা খুলে দিল। ও এতো সময় অপেক্ষায় ছিল।
কখন উড়ে আসবে তার জীবনের সুখ পাখি।
“এতো দেরী করলে যে?”
“কৈ? তুমি ফোন করতেইতো এলাম। ”
“না, না। তোমার দেরী হয়েছে। ”
“অচ্ছা বাবা হয়েছে।
”
নিঝুম হেসে পড়ল। এ যেন সে হিমালয় জয় করে নিয়েছে। দরজা বন্ধ করে অহিদের পাশে বসল। ওর চোখে মায়াময় হাসি। অহিদের কাঁধের উপর দিয়ে হাত দিয়ে, “তুমি আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকো? আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারি না।
”
“আমি তো পাশেই আছি। ঠিক ছায়ার মত। ”
“জানো? তোমার জন্য আমি সব করতে পারি। ”
“মিথ্যে প্রতিশ্র“তি দিচ্ছো কেন? পাশে আছি কিছু সময় জড়িয়ে ধর, আদর কর। তাতেই আমি খুশি।
”
“মিথ্যা কথা বলছি? তুমি কি করতে বলবে বল, আমি তাতে রাজী। ”
“পারবে না। ”
“মরতে বলবে? একবার বলও না? তাতেও আমি রাজী। ”
“আমার জন্য বাঁচতে। সারা জীবন আমার পাশে থাকবে।
”
“এক জন্মে কেন, আমি হাজার জনম তোমার পাশে থাকব। ”
অহিদ হাত বাড়িয়ে, “কথা দাও। ”
নিঝুম হাতে হাত রেখে, “কথা দিলাম। মৃত্যু পর্যন্ত তোমার পাশে থাকব। একসাথে মরলে তোমার সহযাত্রী হব।
হাত ধরে যাব পরপারের শেষ প্রন্তে। ”
“তারপর?”
“তারপর বলব, ফিরে এসো, আমরা ফিরে যাই পুরাতন পৃথিবীতে নতুন রূপে। ”
অহিদের মোবাইল বাজল। নিঝুম মোবাইলটা ধরে দেখল, শান্তা মিত্র। ফোন কেটে দিল।
আবার ফোন এলো। নিঝুম রিসিভ করে অহিদের কানে ধরল। অহিদ বলল, “এখন কথা বলতে পারব না। পরে ফোন কর। ”
নিঝুম লাইনটা কেটে দিয়ে বলল, “কে ইনি?”
“অফিসের লোক।
”
প্রসঙ্গটা বাদ দিল। আবার শুরু হলো কথা। দুটি আবেগময়ী হৃদয় পাশে থাকলে যা হয়।
অহিদ বাথরুমে ঢুকল। আবার ফোন এলো।
শান্তা মিত্র। নিঝুম কানে ধরে, “হ্যালো, বলুন। ”
“আপনি কে?”
“আপনি কাকে যাচ্ছেন?”
“দেবাশীষ মিত্রকে। ”
“উনি এখানে থাকেন না। ” বলে ফোনটা কেটে দিল।
অহিদ মাথা বের করে জিজ্ঞেস করল, “কে ফোন দিয়েছিল?”
“শান্তা মিত্র। দেবাশীষকে চায়। ”
অহিদ মাথা টানতে টানতে, “ এ সব আজে-বাজে ফোন রিসিভ কর না। ”
খাবার সময় অহিদ কেঁপে উঠল। বলল, “কিসের মাংস?”
“ভয় হচ্ছে?”
“তা কেন?”
“খাসির মাংস।
তুমি আগে বললে গরুই রান্না করতাম। ”
“ঠিকই করছো। ”
“দেখতে হবে না কে করেছে। ”
খাওয়া শেষ অহিদ অফিসের জন্য বেরিয়ে এলো। বিকেলে নিঝুমের সেই বান্ধবী এলো।
ওর চলা ফেরার ভাব দেখে সেও টের পেল। বলল, “একি করছিস?”
“বলিস না, গোপনে কাজটা করছি। ”
“বরকে?”
“অহিদ। ”
নিপা অবাক হয়ে গেল। তলে তলে এত দূর তা সে আজ টের পেল।
দিন পার হয়ে যাচ্ছে। নিঝুমকে হাসপাতালে আনা হলো। অহিদ তার পাশে পাশেই আছে। নিঝুম বলল, “যদি মরি পরপারে তোমার জন্য অপেক্ষা করব। ”
নিঝুমের একটা ছেলে হলো।
অহিদ আগেই নাম ঠিক করে ছিল ‘মিলন। ’ নাম মিলনই হলো।
ধীরে ধীরে মিলন নিঝুমের আপন হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে মিলনই ওর সব।
সেদিন নিপা এলো।
নিঝুমের ছেলের চেহারা দেখে মন ভরে গেল। খেলনা কেনার জন্য বাইরে এলো। নিঝুমকে বলল, “এই আসছি। ”
নিউমার্কেটে এসে অহিদ সাহেবের সাথে দেখা হলো। নিপারতো ঠোঁট ভরা হাসি।
অহিদ সাহেবের কাছে গিয়ে বলল, “কি মিঞা? বান্ধবীকে বিয়ে করলেন জানালেন না। ছেলে হলো তাও জানালেন না। কি দারুণ হয়েছে আপনার ছেলে। ”
“আপনি কি বলেন? আমারতো মেয়ে হয়েছে। ”
“নিঝুমের ছেলেকে আমি নিজে দেখে আসছি।
”
“নিঝুমকে?”
“আপনার স্ত্রী। ”
“আমার স্ত্রীর নাম সোহানা। ”
নিপা দ্রুত ফিরে এলো। নিঝুমকে সব কথা বলল। তার স্বামী তাকে স্বীকার করেনি।
তার স্বামীর আরো একটা স্ত্রী আছে যার নাম সোহানা। তাদের একটা মেয়েও আছে। নিঝুম কিছু বিশ্বাস করতে পারল না। সঙ্গে সঙ্গে অহিদকে ফোন করল। ফোন বন্ধ।
নিপাকে নিয়ে অহিদের অফিসে গেল। অহিদ সাহেবকে দেখে নিঝুম থমকে গেল। এ কার চেহারা? এ কোন অহিদ? নিঝুম অহিদ সাহেবের কাছে গেল। জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি.. .. .. ?”
“হ্যাঁ, আমি অহিদ। আপনি?”
“নিঝুম।
”
“আপনার সাথে নাকি আমার গোপনে বিয়ে হয়েছে? একটা ছেলেও নাকি আছে?”
“আপনাকে আমি চিনি না। কিন্তু অহিদ আমার স্বামী। এ অফিসও নাকি তার। ”
“আপনার কোথাও যেন একটা মস্ত ভুল হয়েছে। আগে নিজেকে শক্ত রাখুন।
বাসায় যান। ”
নিঝুম রুমের বাইরে এসে দাঁড়াল। অহিদ সাহেব বলল, “শাহীন, দেবাশীষ আজ আসেনি?”
নিঝুমের হঠাৎ নামটা যেন মনে পড়ে গেল।
“না, স্যার। ”
“ফোন কর।
”
“ফোন করেছিলাম। মোবাইল বন্ধ। ”
২০ জুলাই ২০১২ইং
নিজবাড়ি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।