আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে... (পর্ব - ৪)

দ্বন্দ্বময় বালুঘড়ি - প্রথম সকাল নাকি গোধুলি!!!

তৃতীয় পর্বের লিঙ্ক - Click This Link কাঠমুন্ডুর পথেঃ ভোর ৪ টায় আমরা রওয়ানা দিলাম কাঠমুন্ডুর পথে। পুরো একটা বাস আমাদের জন্যে তবে পাঠকেরা এতে আহ্লাদিত হবেন না যেন। কেননা এহেন বাসকে মুড়ির টিনের চেয়ে বেশি কিছু বলতে রীতিমত দাতা হাতেম তায়ের মত মহানুভবতার পরিচয় দিতে হয়। আর এই মুড়ির টিনে করে কাঠমুন্ডুর পাহাড়ি পথে লাস্যময়ী নারীর ভালবাসাময় স্পর্শ পান বা না পান; কিন্তু রড, শক্ত কাঠ আর জানালার কাঁচের চুম্বন যে অনুভব করবেন তার গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি। যাই হোক রাস্তায় কি কি হল তা বিস্তারিত নাই বা বললাম কেননা ইতিমধ্যেই সবাই আমাকে নতুন করে মহাভারত রচনাকারীর যে উপাধি দিয়েছেন তা দেখে আমি যারপরনাই ভীত ও সন্ত্রশ্ত।

তাই ঝটপট দু’ একটা গল্প বলেনি যা না বললেই নয়। কাঠমুন্ডুর পথে ফারহান স্যার আমাদের গান শোনালেন “মন শুধু মন ছুঁয়েছে... ও সে তো মুখ খোলেনি...” আর আমরা তাতে গলা মেলালাম- ওওওওওওওওও... ওওওও... ওওওও... কিন্তু স্যার তখনও জানতেন না আরও কার কার গলা মেলানো বাকি এ গানে! তাই কিছুক্ষণ পর যখন সামনে গিয়ে নিজের সিটে বসলেন তখন রোমানা ম্যামের সেকি ঝাড়ি তাকে একা একা ফেলে চলে যাওয়ার জন্যে। আর তাতে স্যারের বাংলা পাঁচের মত মুখটা বেশ দেখার মত হয়েছিল। সেই যে বাংলা পাঁচের মত মুখ করে স্যার সামনে বসলেন আর তার উঠার নাম নেই; যতই তাকে আমরা “ডাইলে আরেকটু লবণ দিতে” পেছনে ডাকি! তবে সত্যি বলতে কি এতদিন স্যারদের বকায় আমাদের লম্বা মুখ দেখেছি কিন্তু আজকে পাশার দান বদলাতে দেখে কেন জানি খুব শান্তি শান্তি লাগছিল। হে হে হে... সাধেই কি আর বলে, “ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে!” জয়তু রোমানা ম্যাম! তারপর পথে দেখা ত্রিশূলী নদীর সাথে।

পান্নার মত ঘন সবুজ বর্ণের দেহ তার। আর সেই পাথুরে নদীর বুকে আঁছড়ে পড়ে কি অদ্ভুত শুভ্র নরম ফেনা গড়ছে পান্না সবুজ জল। দেখার মত দৃশ্য বটে। অবশেষে নদীর হাত ধরে চলতে চলতে আমরা যখন কাঠমুন্ডু পৌঁছলাম তখন ঘড়িতে ৮:০০ টা বেজে কিছু বেশি। যত কান্ড কাঠমুন্ডুঃ কাঠমুন্ডুর হোটেলে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন জাবের স্যার আর অথৈ ম্যাম।

স্যারের সাথে কথা বলে আমরা যখন হোটেলের কামরায় ঢুকলাম তখন আমাদের লম্ফঝম্ফ দেখে কে! জোসসস। বড় বড় খোলামেলা একেকটা রুম, কার্পেট মোড়ানো, পরিষ্কার বাথরুম, টিভি, হিটার সবমিলিয়ে ঝাক্কাস। কিন্তু আমাদের হাসি ভাগ্যদেবীর বেশিক্ষণ সহ্য হল না। কেননা যখন সবাই রুম থেকে রাতের খাবার খেতে বের হল তখন একেকজনের মুখ দেখা মত- কেননা কারও বাথরুমে পানি নেই তো কারও বাথরুমের ফ্ল্যাশ নষ্ট- সব মিলিয়ে ক্যারাব্যারা দশা। একেই বোধকরি বলে, “উপর দিয়া ফিটফাট, ভিতর দিয়া সদর থুক্কু মুন্ডুঘাট!” কাঠমুন্ডু যাব আর ক্যাসিনো বা ডান্সবারে যাব না এত রীতিমত কাশী যেয়ে গঙ্গাস্নান না করে ফিরে আসার মত।

কথায় আছে “শুভস্য শীঘ্রম”! তাই সেই রাতেই আমরা বেড়িয়ে পড়লাম খোঁজ নিতে। জানা গেল কাঠমুন্ডুতে দু’ধরনের ক্লাব আছে। ডান্সবার যা “ফ্রি ফর অল!” এবং ডিস্কোবার- যেখানে প্রবেশ মূল্য এবং সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে বগলদাবা করে ঢুকতে হয়। হে হে হে... আকালমান্দকে লিয়ে ইশারাই কাফি... নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন যে আমরা ডান্সবারের পথই ধরলাম। কিন্তু বাঁধ সাধল আমাদের পুরুষমহল।

তাদের একটাই কথা আগে তারা সরেজমিনে দেখে আসবে হালচাল তারপর আমাদের ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে (কত বড় অপমান!)। পাঠক আশা করি এবারও বুঝতে পারছেন যে সে দফায় আমাদের আর ডান্সবারে যাওয়া হয়নি কেননা আমাদের ছেলেরাই কোনমতে জান বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছিল। বারের ওয়েট্রেসগুলো নাকি রীতিমত গায়ে উঠে আসে (একে তো আমাদের যেতে দিল না তার উপর এমনতর কথা শুনে আমরা না বলে পারিনি, “তোরা তো মামু খুশিই হইছস!!! আবার ভাব খাস!!! ভরংবাজ সবদি!!! গররর...”)। আমাদের সবচেয়ে লক্ষ্মী ছেলে হিসেবে খ্যাত নাঈমের নাকি প্রায় কোলে চড়ে বসেছিল এক লাস্যময়ী নারী। হি হি হি... তারপর কি হয়েছিল তা আজও এক ইতিহাস! তবে এ ঘটনা নিয়ে এখনও আমাদের মুখে মুখে ফেরে একটাই অনুকাব্যঃ “কাঠমুন্ডুর ডান্সক্লাবে খায়নি নাঈম বিয়ার, তারপরেও হইল কাইত শুইনা ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’!” তবে কাঠমুন্ডুর প্রথম রাতের সবচেয়ে জটিল ঘটনাটা ছিল ফারহার স্যারকে নিয়ে।

আমরা তখন স্যারকে সিল দিয়ে ফিরছি হোটেলে। স্যাররা আগে আগে আর আমরা পিছনে। হঠাৎ এক মাতাল এসে স্যারকে প্রায় জড়িয়ে ধরে বলল, “কাম উইথ মি! লেটস ডান্স!” আমরা তো টাস্কি! স্যার দেখলাম বেশ গম্ভীর মুখে জবাব দিলেন, “আই এম নট দ্যাট কান্ডা পারসান। আই এম উইথ মাই ওয়াইফ!” হা হা হা... সেই দফায় ম্যামকে দেখিয়ে স্যার বাঁচলেও আমাদের ত্যাঁড়ছা হাসি থেকে বাঁচতে পেরেছিলেন কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ! হে হে হে... রাত তখন ক্রমশ বাড়ছে। আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাঠমুন্ডুর ডান্স বারগুলোতে তারুণ্যের জোয়ার।

উচ্চস্বরের হাসাহাসি আর মিউজিকের শব্দ তখন রাস্তা পর্যন্ত এসে পোঁছেছে। আমরা একদল হতাশ তরুণ- তরুণীর দল তখন ক্লান্ত পায়ে হোটেলের কামরায় ফিরছি আর দূরে কোথায় হয়ত বাজছে... "You can dance- every dance with the guy Who gives you the eye, let him hold you tight You can smile- every smile for the man Who held your hand ‘neath the pale moon light But don't forget who's takin' you home And in whose arms you're gonna be So darlin' save the last dance for me.”

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।