Shams
টেনশন শুরু হয়ে ছিল স্কুলের শেষ বছরগুলোতে। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই যেন খাবি খেতে থাকা। কিছুই যেন সামাল দেয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা সময় নেহাতই কম বলে মনে হয়! রেগুলার ক্লাস চলছে। তার ওপর পাঁচখানা টিউশন, হোমওয়ার্ক, প্রাকটিক্যাল খাতা লেখা, পাশাপাশি অ্যাডমিশনের প্রস্তুতি।
ক্রিকেট তো কবেই বাদ পড়েছে। গোসল, খাওয়া-দাওয়ার সময়টুকুও যেন বড় কষ্ট করে বের করা। একদিকে যন্ত্রের মতো তাল মেলানোর চেষ্টা, অন্যদিকে কোনও কিছুই গুছিয়ে উঠতে না পারার মনঃকষ্ট। অথচ ছাত্র হিসেবে পরীক্ষার ফলাফল বরাবরই বেশ ভালো ছিল। সেদিন তো দাদু একদিন দাবা খেলতে চাইলেন, মন চাইলেও পাঁচ মিনিটের বেশি সময় দিতে পারলাম না ফিজিক্সের পড়া বাকি থাকার চাপে।
বালির মতো ঝুরঝুরে সময় মুঠো থেকে গলে পড়ে যাচ্ছে। কোনও কাজই সময়ে করা হয়ে উঠছে না। ‘অবসর’ বলে তো কিছুর অস্তিত্বই নেই। প্রতিদিন আমরা সবাই ১৪৪০টি ফ্রেশ মিনিট পাই। কম নয়।
কম তখনই মনে হয়, যখন সময়ের ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পরিকল্পনার অভাবে প্রচুর সময় অপচয় হয়। তখনই দেখা যায়, যত পরিশ্রমই করি না কেন, ঠিক মনমতো ফল মিলছে না কিছুতেই।
আগামী দিনে টেনশন বাড়বে না কমবে, তা নির্ভর করছে সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনার উপরে। এ ব্যাপারে সে কেমনভাবে উদ্যোগী হয়, তার ওপরই নির্ভর করছে তার ক্যারিয়ারের সূচক কোনমুখী হবে।
ক্যারিয়ার গঠনের সময় আমরা নানারকম পরিশ্রম-প্রস্তুতি গ্রহণের কসুর করি না ঠিকই, কিন্তু এই একটা সময় ব্যবস্থাপনার বিষয়ে উদাসীনতা দেখিয়ে সবকিছু গুলিয়ে ফেলি। পরিশ্রম হয়ে যায় পণ্ডশ্রম। নদীর স্রোতের সঙ্গে বহমান সময়ের তুলনায় আমরা ছোটবেলা থেকেই পড়ে আসছি। আমাদের যা কিছু কাজ, সব এই স্রোতের সঙ্গে মিলিয়েই করে নিতে হয়। এ জন্য পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-বুড়িগঙ্গার তীরে যেতে হবে না, নিজের ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটার দিকে কিছুক্ষণ অপলক তাকালেই বোঝা যায়, কী দ্রুত গতিতে সময় আমাদের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
জীবনে কিছু করতে চাইলে, প্রতিদিনের ১৪৪০টি মিনিটকে রুটিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কোন সময় কোন বিষয়ে কতটা পড়তে হবে, অল্প সময়ে সুন্দরভাবে সঠিক কাজটা কীভাবে করতে হবে, পরিকল্পিত সময় ব্যয় করার পর বেঁচে যাওয়া সময় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কোন খাতে দিলে এগিয়ে থাকা যাবে এবং সময় ব্যয়ের স্বাধীনতা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে_ এই কৌশলগুলো আয়ত্তে এলে টেনশন যে শুধু দূর হবে তাই নয়, বরং উচ্চ মাধ্যমিক, অ্যাডমিশনের প্রস্তুতিতে সবাইকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া যাবে। এতে সময় জুটবে বিকালে গলির ক্রিকেটে এক-দু’ ওভার হাতও ঘোরানোর আর রাতে খোশ মেজাজে বসে দাদুর ঐতিহাসিক সব গল্পও শোনার । বাজারে টাইম ম্যানেজমেন্টের বইয়ের কোনও অভাব নেই। নেটেও পাওয়া যাবে আনলিমিটেড টিপস।
তবে সবার আগে প্রয়োজন জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে একটা সেকেন্ডও অপচয় না করার পণ। সব কাজের একটা তালিকা তৈরি করে ফেলাই হল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কাজটা উদ্ধার হলে তবেই পেন্সিলের টিক। শুরুতে এতদিনের অভ্যাস-অলসতাগুলো বাধা দেবে। তবু এক-দু’পা করে জীবনটাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে টাইম ম্যানেজমেন্টের আওতায়।
উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়ার জীবন মানেই একজন পূর্ণবয়স্ক, পেশাদারের জীবনই। সেই একই চাপ, একই ব্যস্ততা, একইভাবে লক্ষ্য পূরণের দিকে দৌড়ে যাওয়া, পাশাপাশি নিজের জন্যও বাড়তি কিছু অবসর বাঁচিয়ে রাখা। কাজেই এভাবে রুটিন বানিয়ে সময়কে মুঠোর মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয় আজীবন। কাজ এবং অবসর দু’টোই কিন্তু সমান প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।