১৩.
একজন বাগ্মীবক্তা বলল, তুমি আমাদের স্বাধীনতা বিষয়ে বল
এবং জবাবে সে বলল:
নগরের দ্বারে এবং আগুনের পাশে আমি তোমাদের আভূমি প্রণত হ’য়ে স্বাধীনতার আরাধনা করতে দেখেছি
যেমন করে ক্রীতদাসরা তাদের অত্যাচারী প্রভুর সামনে নতজানু হয় আর তার প্রশস্তি করে যে প্রভু তাদের নিত্য নিধন করে, (এমনও তো আমি দেখেছি)।
দেখেছি দেবালয়ের নীপবাসে নগরদূর্গের ছায়া-উপচ্ছায়ায় তোমাদের সবচেয়ে স্বাধীন যারা তারা স্বাধীনতার জোয়ালে বাঁধা আর হাতে তাদের স্বাধীনতার হাতকড়া
হৃদয় আমার তাই বিদীর্ণ হয়েছে রক্তাক্ততায়, একমাত্র তখনই শুধু স্বাধীন হ’তে পারবে তোমরা যখন তোমাদের ইচ্ছালাগাম অদম্য হ’য়ে উঠবে মুক্তির আকাঙ্খায় বাধাবন্ধন হারা
আর যখন লক্ষ্য ও ইচ্ছাপূরণে স্বাধীনতার দস্তুর ভাবনার আবহে তোমরাও হ’য়ে উঠবে বাধাবন্ধন হারা।
তোমরা তখনই যথার্থ স্বাধীন হবে যখন তোমাদের দিবস হবে দুর্ভাবনাহীণ আর যামিনী হবে অভাবহীণ দুঃখভারহীণ
এইসব কিছুই তোমাদের জীবন জুড়ে থাকে হয়ত’ বা নিত্যদিন, তবুও তোমরা উঠে আসবে নিরাবরণ নিরাভরণ বাধাবন্ধহীণ।
এবং কী করেই বা তোমরা দিবসযামিনীর ঊর্ধ্বে উঠে আসবে যদি না তোমরা তোমাদের বোধোদয়ে যে শৃঙ্খলে আবদ্ধ কর তোমাদের দ্বিপ্রহরকে তাকে ভাঙ্গতে পারো অবহেলায়?
বস্তুতঃ তোমরা যাকে স্বাধীনতা বল তা-ই তোমাদের জোরালো শৃঙ্খল যার আংটা ঝলমলে দিবসালোয় তোমাদের চক্ষু ধাঁধিয়ে দিয়ে যায়।
তোমাদের সত্তার ভগ্নাংশসমূহ আর কী-ই বা যা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তোমরা স্বাধীন হ’তে পারো?
যে অন্যায় বিধানকে তোমরা রদ করতে চাও সেই বিধান তোমাদের নিজেদের হাতে ললাটের লিখন বলেই ভাবতে পারো
আইনের বিধান পুড়িয়ে কিংবা সমুদ্রসিন্ধুর জল বিচারকদের ললাটে ঢেলেও তোমরা সেই বিধানকে মুছে সাফ করতে পারো না
এবং যদি কোন স্বৈরাচারীকে তার সিংহাসন থেকে উৎখাত করতে চাও তবে পরখ করে দেখ তোমাদের অভ্যন্তরে গড়ে তোলা সিংহাসনকে তোমরা আগেই ভেঙ্গে ধসিয়ে ধূলিসাৎ করতে পারো কি না
স্বেচ্ছাচারীরা কী করে শাসন করবে স্বাধীন আর আত্মগর্ব্বীদের, স্বেচ্ছাচারীরা নিজেরাই যে নিজেদের স্বাধীনতায় স্বেচ্ছাচারী আর আত্ম-অহমিকায় নিজেরাই নির্লজ্জ্ব অহঙ্কারী?
যে উদ্বেগকে ঝেড়ে ফেলতে চাও তোমরা তা তো তোমাদের স্বেচ্ছারোপিত, তোমাদেরই নিজেদের মনে গড়া মনচারী
এবং যে শঙ্কা যে ভয়কে নিরসন করতে চাও তোমরা সেই ভয়ের সিংহাসন তো তোমাদের অন্তর অন্দরাবাসেই, তা তো ভয়াল ভয়ঙ্করের করতলগত নয়, (বৃথাই তুমি শঙ্কিত ভীতচারী)।
বস্তুতঃ সবকিছুই সতত তোমাদের সত্তায় অর্ধ্ব-আলিঙ্গনে সঞ্চরমান, কাঙ্খা ও শঙ্কা অনুরাগ ও বিরাগ প্রণতি আর যা সবকিছু থেকে তোমরা পালিয়ে যেতে চাও কেনই বা
এই সবকিছুই তোমাদের অন্তরে আলো-ছায়ার মত দোহারবন্ধনে জড়িয়ে আছে (কেমন করে তোমরা পালাবেই বা)
যখন সেই ছায়াসব বিশীর্ণ হ’য়ে সড়ে যায় আলোর রেশ থাকে না আর, সেই ছায়া জেগে ওঠে পুনর্বার অন্যকোন আলোকের ছায়া হ’য়ে
আর তোমাদের স্বাধীনতাও তেমনই তার শৃঙ্খল হারিয়ে আবার স্বাধীনতা হ’য়ে ওঠে অন্যতর কোন মহোত্তর স্বাধীনতার শৃঙ্খলবেড়ী হ’য়ে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।