বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে
সময় বিষয়ে সময় করে ভাবা হয় না তেমন। সময়ের নানা অংশ জীবনে একটা প্রভাব রাখে জানি। এজন্যই বুঝি মানুষের জীবনে একেকটা সময়ের আবেদন একেক রকম। সেই আবেদনগুলো ধরাও দেয় ভিন্ন ভিন্ন অনুসঙ্গে। সময় নিযে বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা যায়।
পদার্থবিজ্ঞানীরা আবার একে চলমান সময় বলতেই পছন্দ করেন। আইনস্টাইন যেমনটা শুরু করেছিলেন- আপেক্ষিক সময়। সময় নিয়ে কিছু ভাবতে গেলে বড়জোর আমি আন্তর্জালে একটা জানালা খুলে উকি দেই খোঁজাখুজির জগতে। সার্চ দেই টাইম লিখে। ফলাফলগুলো খুব বেশি তাড়িত করে না আমাকে।
কিছুতে সন্তুষ্ট না হয়ে নিজের নাম দিয়েই সার্চ দেই। যাকে বলা হয় ইগো সার্চিং। এইসব হাবিজাবি কাজগুলো খুব বেশি তাড়িত করে না আমাকে। শুধু কোন কোন অনুসঙ্গে কিছু বিষয়ের ভাবনা থেকে রেহাই দেয়।
তারচেয়ে ঢের শৈশবের সময়গুলো কিংবা স্কুলে কাটিয়ে আসা সেই সময়টাই আমাকে বেশি তাড়িত করে।
আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে নিজের বাড়িতে, নিজের গ্রামে, নিজের চিরচেনা পরিমন্ডলে, নিজের পথ ঘাটে হেটে চলা, বাস করার সমময়গুলোই আমাকে বেশি তাড়িত করে, বেশি করে ভাবায়। মানুষ মাত্রই তার স্মৃতিতাড়না থাকবে। নষ্টালজিয়া শব্দটাকেই আমরা প্রায়শই এক্ষেত্রে যুতসই শব্দ হিসাবে ব্যবহার করি। যদিও নষ্টালজিয়া মানে আক্ষরিক অর্থে হোমসিকনেস জাতীয় কিছু। যা বলতে ছিলাম, মানুষ মাত্রই নষ্টালজিয়া থাকে, শৈশব নিয়ে ভাবনা থাকে।
অনেকেরই সেই সময়টাতে ফিরে যাওয়ার একটা আকুতি থাকে। আমার এ ধরনের আকুতি আছে কিনা ঠিক বুঝতে পারি না। হয়তো ঠিক করে বোঝার চেষ্টা করি না। হয়তো চাই আবার চাই না!
শৈশবের সময়টাতে সকালের ঘুম ভাঙ্গতো মায়ের ডাকে। অলস এই আমি যদিও চাইতাম দেরি করে ঘুম থেকে ঘুম থেকে উঠবো তারপরেও তা হতো না।
এখন আমি ইচ্ছামতো ঘুম থেকে উঠি। অনেক বেলা করে প্রায়শই ঘুম থেকে উঠি। তারপরেও শৈশবের সেই ঘুম থেকে উঠাকে খুব বেশি মিস করি।
জীবনের অনেকটা সময় পর্যন্ত প্রায় সব কাজের জন্যই মায়ের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। আম্মুও ঠিক ঠিক কাজগুলো করে দিতেন।
হয়তো স্কুলে যাবো...বই গোছানো, কাপড় রেডি করা সবই করে দিতেন আম্মু। খুব শৈশবে প্রায়শই আম্মু ছোট্ট ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করতেন, এই যে তোকে সব কাজ করে দিতে হয়, তুই বড় হয়ে চলবি কি করে? সেই ছোট ছেলেটা হেসে জবাব দিত, আম্মু সবসময়তো আমি তোমার সাথেই থাকব। তাহলে চিন্তা কিসের? আম্মু থেমে গিয়ে বলতো...তাইতো তুই সবসময় আমার সা্থেই থাকবি...কিন্তু তারপরেও জীবনে কাজের জন্য তোকে অনেক কিছুই করতে হবে, বাড়ি থেকে দুরে গিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। তখন? ছোট্ট সেই ছেলেটি তখন কিছু না বলে ভাবতো হায় এতো কঠিন কেন বিষয়গুলো!
এসএসসি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত যেই ছেলেটি কোনদিন মাকে ছাড়া কোথাও বেড়াতে যায়নি সেই ছেলেটি পরীক্ষার পরে হঠাৎ করেই বড় হয়ে গেল যেন। মাত্র কিছু দিনের ব্যবধানে বাড়ি থেকে দুরে গিয়ে থাকা শুরু হয়।
যোগাযোগের সহজ মাধ্যমে মোবাইল ফোন তখনো আমাদের কাছে সহজলভ্য ছিল না। ভরসা ছিল একটা সপ্তাহান্তের ছুটি। সেই ছুটিতে দেখা হবে মায়ের সাথে, কথাও হবে। মনে হলো ছোট্র ছেলেটা হঠাৎ করেই অনেক বড় হয়ে গেল। আদতেই কি খুব বেশি বড় হতে পেরেছিল? তাহলে কেনইবা কলেজ হোস্টেলের রুমটাতে পড়ন্ত বিকালে একা একা বসে কাঁদতো ছেলেটি।
খুব বেশি বড় হলে কি কাঁদা যায়!
মনে পড়ে তখন স্কুলে পড়তাম। বন্ধুদের হঠাৎ সিদ্ধান্তে ফুটবল খেলার জন্য গিয়েছিলাম পাশের গ্রামে। আম্মুকে বলে যেতে পারিনি। পরে খেলার কারনে বেশ রাত হয়ে যায়। বাড়িতে ফিরতে বেশ দেরি হয়ে যায়।
ওদিকে বাড়িতে আম্মু চিন্তায় অস্থির। সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করেছে। অবশেষে বাড়ি ফিরলাম যখন কি যে অবস্থা! অথচ এখন আমি প্রতি রাতেই বেশ রাত করে বাসায় ফিরি। কখনো মধ্যরাতেও বাসায় ফিরি। রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে থাকা ঘুমঅলা মানুষগুলো মাঝেমধ্যে মাথা উঠিয়ে তাকায়।
খুব অলস ঘুমঅলা মানুষেরা জিজ্ঞেস করে বসে, কে যায়? আমি উত্তর দেই না। সব কথার উত্তর কেন জানি দিতে ইচ্ছে হয় না। বাসায় এই যে দেরি করে ফিরি, কেউতো আমার খোঁজ করে না আম্মু। কতো রাতে ফিরলাম বিবেচ্য বিয়ষ না মোটেও এখন। রাতে ফিরে একা একা সব কিছু করে ঘুমিয়ে পড়তে হয়।
সময় কি খুব বেশি বয়ে গেল তবে?
স্কুল থেকে ফিরতে ফিরতে ৪টা কিংবা সাড়ে ৪টা বেজে যেত। আমি প্রতিদিনই দেখতাম আম্মু তুমি অপেক্ষা করে আছো। একসাথে খাবে বলে বসে থাকতে না খেয়ে। অথচ দুপুরের খাবারটা আর সবাইতো অনেক আগেই খেয়ে ফেলতো। কেন করতে আম্মু এইসব? এখন এই আমি দুপুরবেলা শেষে পড়ন্ত বিকালে ত্রস্ত পায়ে বাসায় ফিরি।
কই কেউতো একসাথে খাবে বলে আমার জন্য অপেক্ষা করে না? কেউতো ভাত বেড়ে দিয়ে তরকারীটা্ এগিয়ে দেয় না! প্রায়শই দুপুরের খাবার খাই পড়ন্ত বিকালে, কিংবা মাঝেমধ্যেই দুপুরে খাই না। আম্মু তোমাকে এইসব জানতে দেই না আমি। এটাকেই বলে বাস্তবতা।
প্রতিদিন রাতেই তুমি জেনে নেও খেয়ে নিয়েছি কিনা। আমার জবাব প্রতিরাতেই হয়, না খাইনি।
তুমি বলো খেয়ে নিও। এখন দুরে থাকি বলেই কি আম্মু তুই থেকে তুমি হয়ে গেলাম? নাকি ছেলে কিছুটা বড় হয়েছে বলে তুমি সম্বোধন? কই বাড়িতে গেলেতো ঠিকই তুই বলে সম্বোধন করো। আমি বুঝি হয়তো মুঠোফোনের স্বল্প সময়ের কথায় তুমি সম্বোধনেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করো। তোমাকে বলি নি আম্মু, আমি প্রায় রাতেই মধ্যরাতে রাতের খাবাটা খাই। তখন হয়তো তুমি ঘুমের ঘোরে।
মা দিবস বলে একটা দিন আছে সেই দিনটা নিয়ে খুব বেশি সচেতন নও তুমি। কবে দিনটি আসলো, কবে চলে গেল তা তুমি মোটেও খেয়াল করো না। আমিও তোমাকে কখনো আলাদা করে মনে করিয়ে দেই না, আজ মা দিবস। আমার কাছে প্রতিদিনই মায়ের জন্য দিবস, প্রতিদিনই তোমাকে ভাবার দিবস আম্মু। আর এই বোধটা আছে বলেই পৃথিবীর সব মায়েরা আমার অজান্তে হয়ে উঠেছে আম্মু।
অন্য সকল মাকেই নিজের মায়ের মতো করে শ্রদ্ধা করতে পারি।
মা দিবসে তোমাকে আলাদা করে কিছু মনে করিয়ে দেই না আমি। এখনো আমরা ভাবি, আসলে মা দিবসটা ঠিক আমাদের জন্য নয়। আামদের মায়েরা আমাদের অস্তিত্বের খব কাছাকাছি। তাদের জন্য প্রতিদিনই অনুভুতি কাজ করে ।
আলাদা দিনের কোন দরকার নেই। তারপরেও দিবস একটা ডেভলাপ করেছে। মা দিবস বলে একটা দিন প্রচলিত আছে। ইন্টারনেটে মাদার্স ডে সার্চ দিলে অনেক অনেক তথ্য চলে আসে। হয়তো অধিকাংশ রেজাল্টই কর্পোরেট কিছু বিষয়কে বিজ্ঞাপিত করে।
তারপরেও মায়ের জন্য একটা দিন!
কিছুই করার প্ল্যান ছিল না। সব কিছু আগের মতো, আগের দিনগুলোর মতোই হতো। স্বাভাবিক কথাবার্তা। তারপরেও কেন জানি মা দিবসকে ঘিরে একটা লেখা লিখে ফেললাম। আমি জানি এই লেখাটা তুমি পড়বে না আম্মু।
কারণ আন্তর্জালের জগতের কোন জানালা দিয়ে উকি দিয়েও দেখনি তুমি। কোনদিন জানবেও না এই লেখায় গলে গলে পড়া আমার অনুভুতিগুলোকে। আমি বলি এতো কিছুর দরকার নেই, সবকিছু হতে নেই। আমি জানি তোমার অনুভুতিগুলোকে, হৃদয়ের গভীরে ধারণ করি তোমার ভালোবাসা আর মমতাকে।
তারপর উচ্চারন করে ফেলি সেই অনুভুতি নিয়ে- মা দিবসে পৃথিবীর সকল মাকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।