৪
অতঃপর ধণাঢ্য জন এক বলল, তুমি আমাদের দানের বিষয়ে বল
এবং জবাবে সে বলল:
তোমরা আসলে তোমাদের ধনদৌলতের যৎসামান্যই দান কর
তোমরা যখন নিজেদেরকে অকাতরে বিলিয়ে দাও তখনই তোমরা আসলে দান কর।
আগামিকালের দুঃসময়ের আশঙ্কা কিসের তোমাদের? যা জমিয়ে রাখো তা ভিন্ন তোমাদের গচ্ছিত ধন আর কী-ই বা?
এবং আগামিকালের দুঃসময়ের আশঙ্কায় তীর্থনগরচারীদের অনুসরণকারী সুবিচক্ষণ সারমেয় যে মাংসল হাড়গোর লুকিয়ে রাখে পদচিহ্ণহীন বালির গর্ভে, আগামিকাল তার জন্য নিয়ে আসবে আর কী-ই বা?
আদপে অভাবের আশঙ্কা অভাব ছাড়া আর কী-ই বা?
জলভরাট কূপে পিপাসার্তির আতঙ্ক আসলে অপ্রশম্য পিপাসার আর্তি ছাড়া আর কী-ই বা?
যাদের অনেক আছে অথচ দেয় খুব যৎসামান্য তারা দেয় শুধু তাদের সুনাম স্বীকৃতির সংগুপ্ত কামনায়
সেই সংগুপ্ত কামনা তাদের জৌলুস বদান্যতাকে কলুষিত করে যারপরনাই।
এবং অনেকে আছে যাদের সামান্য আছে অথচ সর্ব্বস্ব বিলিয়ে দেয় তারা, তারা বিলিয়ে দেয় অনেক বেশী
তারা জীবনবিশ্বাসী, তাদের বিশ্বাস জীবন ঔদার্য্যে জীবনপ্রত্যাশী
তারা কখনই হয় না কপর্দকশূন্য
তারা পরমানন্দে বিলিয়ে দেয়, বিলিয়ে দেওয়ার আনন্দই তাদের পরম পুণ্য।
আর যারা প্রভূত কষ্টেও সবকিছু বিলিয়ে দেয়, সেই কষ্টকর্ম্মেই তাদের বারিসিঞ্চন দীক্ষালাভ, তাদের কষ্টকর্ম্মের কথা তারা মনেও আনে না
এবং পরমানন্দের প্রার্থী নয় তারা, পুণ্যলাভের কামনাও তারা মনে আনে না
তারা বিলিয়ে দেয় যেমন করে দূর উপত্যকায় মার্টল পুষ্প সৌরভ ছড়ায় বিজন বাতাসে।
তাদেরই করপুটে ঈশ্বর নিজেকে ব্যক্ত করেন, তাদেরই দৃষ্টিচোখে ধরিত্রীর প্রসন্নতায় খলখলিয়ে হেসে ওঠেন তিনি একান্ত অবকাশে।
যাচিত হ’লে বিলিয়ে দেওয়া ভালো, অযাচিত হ’য়ে উপযাচকের দানকর্ম্ম আরও বেশী শ্রেয়
এবং দানদিল মুক্তহস্তের দানগ্রহীর সুলুকসন্ধান দানকর্ম্মের চেয়েও অনেক বেশী আনন্দপুণ্য আরও বেশী প্রেয়।
এমন কী আছে কিছু যা দিয়ে তোমরা থাকতে পারো না অকেশে?
তোমাদের যা কিছু আছে সবকিছুই একদিন তোমাদেরকে দিয়ে যেতে হবে, সেইদিন অবশেষে।
তথাস্তু! এখনই সবকিছু বিলিয়ে দাও। দানগ্রহীর দিনকাল নাই, দানদাক্ষ্যিণের দিনকাল ঋতু সব তোমাদেরই যারা দান কর নির্বিশেষে।
প্রায়শঃই তোমরা বল, ’আমরা দেব, শুধু সৎ পাত্রেই দেব, অপাত্রে না।
’
তোমাদের বাগিচার বক্ষৃরা কখনই এমন বলে না, তোমাদের চারণভূমির পশুরাও না
তারা বিলিয়ে দিয়েই বাঁচে, অন্যথায় তা তো অনস্তিত্বে বাঁচা, এমন বাঁচা তো বাঁচা না।
দিবসযামিনীর বরপুত্র যে নির্বিবাদে গ্রহণ করত পারে তোমাদের সবকিছু, সে তো অপাত্র না।
এবং যে জীবনের উথাল পারাবার থেকে তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারে
সে তোমাদের ঝর্ণা থেকে তার পানপেয়ালা ভরে নিতেই পারে।
দানদাক্ষিণ্য গ্রহণে যে বীরত্ব ও সদিচ্ছা তার চেয়ে বৃহত্তর ও মহোত্তর মরুভূমি কি আর দান-বদান্যতায় আছে?
তোমরা কে এমন আছো যে মানুষ বক্ষ বিদীর্ণ করে তার দর্প-অহঙ্কারের আবরণ উন্মোচন করে দেবে আর তোমরা দেখতে পাবে তার অনাবৃত সত্তার স্বরূপে নির্লজ্জ্ব দর্প অহঙ্কার বেআব্র হ'য়ে পড়ে আছে?
তার আগেই নিজেদের যাচাই করে নাও তোমরা বদান্যতার যোগ্য কি না, আসলে তোমরা দান-অনুগ্রহের অনুষঙ্গ ভিন্ন আর কিছু না।
বস্তুতঃ জীবনই জীবনের দয়িতা, বদান্য বলে ভাবলেও আসলে তোমরা বদান্যতার স্বাক্ষর মাত্র, আর কিছু না।
আর তোমরা গ্রহীতা সকল, আসলে সবাই তোমরা গ্রহীতা, তোমরা কৃতজ্ঞতার ভারে শুধু শুধুই ন্যুব্জপৃষ্ঠ হও,
তোমরা নিজেরা ও যে দান-অনুগ্রহী সকলেই তোমরা কেন সেই যূপকাষ্ঠে শুধু শুধুই ন্যুব্জপৃষ্ঠ হও।
তার চেয়ে বরং দাতার দান-দাক্ষিণ্যের ডানায় ভর করে সবাই একসঙ্গে উঠে দাঁড়াও,
কেননা তোমাদের দানগ্রহণের মনস্তাপে তাদের মহানুভবতা শুধুশুধুই সংশায়িত হ’য়ে ওঠে, তাদের মাতা হলেন বিপুলাবক্ষ ধরিত্রীমাতা আর পিতা হলেন পরমপিতা ঈশ্বর পরমেশ্বর, তোমরা বিদিত হও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।