আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চ্যাম্পিয়নস লীগ: ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শী হলাম.../ইমন।

জ্বলে উঠার অপেক্ষায় নিভু নিভু প্রদীপ।

গতকাল চ্যাম্পিয়নস লীগের সেমিফাইনাল দেখতে স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে (চেলসি'তে) গিয়েছিলাম। আমি চেলসি'র বিগ সাপোর্টার। এতটুকু বলার পরে কিভাবে চেলসির ভক্ত হয়েছি সেটা বলার প্রয়োজন বোধ করছি। দেশে থাকতে আমি চেলসির খুব একটা নাম শুনেছি বলে মনে পড়ছে না।

প্রথমত আমাদের বাসায় (দেশে) ক্যাবল ছিল না। দ্বিতীয়ত চেলসির ইতিহাসে সাফল্য (১৯৬৪ সালে লীগ জিতেছিল) খুব একটা ধরা দেয়নি। তবে, পত্রিকা মুখস্থ করার প্রবণতা ছিল বিধায় ইংলিশ ফুটবলের টুকিটাকি জানতাম। ইংলিশ ফুটবল (ক্লাব ফুটবলের কথা বলছি) বলতে এক সময় লিভারপুল এবং ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড'কে বুঝতাম। দেশে থাকতে আমি বার্সিলোনার সাপোর্টার ছিলাম, এখনো আছি।

২০০২ সালে লন্ডনে আসার পরে আমার অনেক কিছুই (পছন্দ/ অপছন্দ) পরিবর্তন হয়েছে। চেলসির ক্রেজি ফ্যান হয়ে পরিবর্তনের শুরু। আমার মনে হয় ইংল্যান্ডে বসবাস করলে যে কেউ ফুটবলের ফ্যান হতে বাধ্য। এখানে আসার পরে আমি যে বাসায় উঠেছিলাম সেখানে তৌফিকের সাথে কিছু সময়ের জন্য রুম শেয়ার করতে হয়েছিল। সে তখন চেলসি ফুটবল গ্রাউন্ডে (স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে) হসপিটালিটি এ্যসিসট্যান্ট হিসেবে পার্ট টাইম কাজ করত।

তারপর বাসায় এসে আমার সাথে সে এসবের গল্প করত। তখন ওর কারণেই চেলসি টিভি দেখতে হত। চেলসির খেলা দেখতে দেখতে একসময় চেলসি'কে ভাল লাগতে শুরু করে। তখন 'জোলা' নামের একজন স্ট্রাইকার ছিল যে প্রত্যেকটা ম্যাচে গোল করত। তার জার্সি নাম্বার (২৫) এখনো মনে আছে।

মূলত শুরুটা হয়েছিল এভাবেই। তারপর 'আভ্রাহোমিভিচ' চেলসি কিনে যখন 'হোসে মরিনহো'কে কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তখন থেকে ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে চেলসি যুক্ত হল আরেকটি বড় ক্লাব হিসেবে। ওহ্‌ আমি আর্সেনালের কথা বলতে এতক্ষণ ভুলেই গেছি। এজন্য আর্সেনাল ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আগেই বলেছি আমি 'চেলসি' ভক্ত কিন্তু এটা ঠিক যে ইংলিশ ফুটবলের সৌন্দর্য হল 'আর্সেনাল'।

যে কারণে ওদের খেলার স্টাইলকে স্প্যানিশ লীগের সাথে তুলনা করা হয় (কখনো কখনো ব্রাজিল/ আর্জেন্টিনার স্টাইলের সাথে)। আচ্ছা, এখন তো আবার ফুটবলের এই স্টাইল জিনিসটা কি সেটা ও বলতে হয়। সুন্দর ফুটবল বলতে আমরা ব্রাজিল/আর্জেটিনাকে (দেশ হিসেবে) বুঝে থাকি। ফুটবল লীগের জন্য 'টপ থ্রি' হিসেবে পৃথিবীতে তিন দেশের লীগকে কাউন্ট করা হয়। ইটালিয়ান, ইংলিশ এবং স্প্যানিশ।

ইটালিয়ান ফুটবলকে পসেসিভ কিংবা ডিফেন্সিভ ফুটবল বলা হয়। স্প্যানিশ ফুটবলের ট্যাক্টিস এবং 'সর্ট পাসের' কারণে সুন্দর ফুটবলের দেশ বলা হয়। যেমনটা দেখা যায় ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে। ইংলিশ ফুটবলকে এ্যটাকিং ফুটবল বলা হয়। যেখানে ধাক্কাধাক্কি (আপটু এ লিমিট) জায়েজ আছে।

যে কারণে অনেকে ইংলিশ ফুটবল পছন্দ করেন না। কিন্তু তাতে কি? এবারের চ্যাম্পিয়নস লীগের সেমিফাইনালে তিনটা ইংলিশ ক্লাবের অংশগ্রহণ এবং ফাইনালে 'অল ইংলিশ' ক্লাব হয়ে ইতিহাস রচনা করে তাদের কোয়ালিটির কথা পৃথিবীকে আরেকবার জানিয়ে দিল। যাইহোক আসল কথায় ফিরে আসি। চেলসি সাপোর্টার হয়ে এ বছর বেশ কিছু খেলা দেখতে স্ট্যাডিয়ামে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। গত শনিবার আমার টিমের কাছে 'ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড'কে খুব কাছে থেকে হারতে দেখেছি।

চেলসি চেলসি করে গলা ফাটানো সেদিন বিফলে যায় নি। মাইকেল বালাক যখন প্রথম গোল করে, আমি 'ইয়েসসস' বলে এমন জোরে চিল্লাইছি সামনের সিটে বসা একটা ছোট মেয়ে ভয় পেয়ে আমার দিকে পাঁচ মিনিট তাকিয়ে ছিল। পরে ম্যাচ শেষে তাকে স্যরি বলেছি। খেলা দেখার সময় আমি 'সাব্বাশ' 'সাব্বাশ' বলে চিল্লাই। হাজার হোক আমি বাঙ্গালী।

পাশের সিটে বসা এক ভদ্রলোক আমাকে জিগ্গেস করে 'হোয়াই আর ইউ সেয়িং সাব্বাশ'। আমি বলি 'ইট মিনস ওয়েল ডান'। এরপর থেকে সে নিজেও সাব্বাশ বলে চিল্লানো শুরু করেছিল। পরে সাব্বাশের সাথে 'বাঘের বাচ্চা' ও যুক্ত করেছিলাম। হা হা হা।

সেদিন নাটকীয়তাই ভরপুর ম্যাচে চেলসিকে জিততে দেখে অনেক ভালো লেগেছিল। বাসায় এসে সফিকে (সে ম্যান ইউ সাপোর্টার) অনেক চেতাইসি। আচ্ছা, আমি তো এতক্ষণ ইতিহাসের কথা বলতে ভুলেই গিয়েছি। পরশুদিন ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড বার্সা'কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগে 'অল ইংলিশ ফাইনাল' ইতিহাস গড়েছে (যদিও আমার মোটেও পছন্দ হয়নি)। গতকাল চেলসি লিভারপুলকে হারিয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান পেল।

কারণ এর আগে চেলসি কখনো চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনাল খেলেনি। সে ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শী হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। গতকালের খেলায় নাটকীয়তার কমতি ছিল না। তবে আমার আগে থেকেই কেন জানি মনে হয়েছিল এবার চেলসি জিতবে। যদিও চ্যাম্পিয়নস লীগে লিভারপুল অনেক সফল ক্লাব।

শেষ মুহুর্তেও তারা যে কোন কিছু করে ফেলতে পারে। তারপরও একটা বিশ্বাস ছিল না জিতুক অন্তত স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে চেলসি হারবে না। ঠিক, তারা হারে নি বরং দেখিয়ে দিয়েছে ফাইনাল খেলার সামর্থ্য তাদের আছে। থ্যাংকস টু দ্রগবা। তার দু দুটো গোল চেলসিকে জয় এনে দিয়েছে।

কাম'ন চেলসি, ডু ইট ওয়ান মোর টাইম বাই বিটিং ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড মেক এ্যনাদার হিস্ট্রি। (লেখাটিতে ইংরেজীর আধিক্য থাকায় ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। )

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.