leo_abdullah@yahoo.com
রাতে আরামদায়ক ঘুমের জন্য তৈরি তো?
ঘুম আসলে কি করে? পর্যাপ্ত ঘুমের মধ্য দিয়ে মানসিক অবসাদ ও দৈহিক ক্লান্তি দূর হয়। ফলে কাজকর্মে আসে উদ্দীপনা। সময়ে সময়ে আমাদের সবারই কম-বেশি ঘুমের সমস্যা হয়। ঘুমের অভাবে দিনের কাজে অমনোযোগিতা ও অবসন্ন ভাব হয়। অনেকের মাথা ধরে থাকে।
খিটখিটে মেজাজ ছাড়াও চোখের নিচে কালো ছোপ পড়ে এবং এ জাতীয় আরো নানা সমস্যা তৈরি হয়। ছোটখাটো কিছু অভ্যাসে রদবদল ঘটিয়ে কিন্তু সহজেই আমরা রাতে বেশ আরাম করে ঘুমাতে পারি। আসুন দেখি চোখ বুলিয়ে নিই দু’চোখ জুড়ে ঘুম আনানোর ১০টি টিপসে।
১. চা-কফি বাদ দিন। কারণ ক্যাফেইন আমাদের জেগে থাকতে সাহায্য করে।
আপনার ধারণার চেয়েও বেশি সময় এটা দেহে থাকেÑ প্রায় ১৪ ঘণ্টার মতো। তাই বিকালে এক কাপ কফি খেয়ে যদি আপনি মধ্য রাত পর্যন্ত সজাগ থাকেন, সে ক্ষেত্রে ওটাই কারণ। ঘুমাতে যাওয়ার কম করে হলেও চার-পাচ ঘণ্টা আগে থেকে চা ও কফি পান বন্ধ করলে ঘুম আসাটা অনেক সহজ হয়। ক্যাফেইন যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়েই য়ায় সে ক্ষেত্রে কার্র্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন রুটি, বিস্কিট খান যা এর ইফেক্ট কমাতে সাহায্য করবে।
২. মাত্রারিক্ত অ্যালকোহল পান বন্ধ করুন।
প্রাথমিকভাবে যদিও এর ফলে আপনি ঘুমিয়ে পড়বেন কিন্তু ধীরে ধীরে আসলে এটি ঘুমের নানা সমস্যা তৈরি করবে যেমন দুঃস্বপ্ন, ঘাম হওয়া, মাথা ব্যথা ইত্যাদি। প্রতি অ্যালকোহলিক বেভারেজের জন্য এক গ্লাস করে পানি পান করুন। এতে ওই জাতীয় লক্ষণগুলো কমবে।
৩. ঘুমাতে যাওয়ার আগেও কিছু সময় রিলাক্স করুন। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কেবল অসহনীয় অবস্থাতেই নিয়ে যায় না বরং এর ফলে ঘুমের ক্ষেত্রেও মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়।
পুরো দিনের স্ট্রেস ও ঘুমাতে যাওয়া এ দুয়ের মধ্যে কানেকশন ভেঙে ফেলতে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এ ধরনের অভ্যাস ১০ মিনিট থেকে শুরু করে এক ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
অনেকেই স্ট্রেসের বিষয়গুলোকে আগামীকাল কিভাবে ডিল করবেন তার প্ল্যান তৈরির মাধ্যমেই ইতি টানেন আজকের সব দুশ্চিন্তার। এর পাশাপাশি আপনি কিছুটা রিলাক্স সময়ও কাটাতে পারেন হালকা মেজাজের বই পড়ে, মেডিটেশন করে, অ্যারোমাথেরাপি, হট বাথ কিংবা লাইট স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে। এসবই আপনাকে ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করবে।
৪. আপনার জন্য যখন উপযুক্ত সেই সময়েই নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন। প্রতিদিনের ব্যায়ামও রাতের ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক। দেখা গেছে, এক্সারসাইজের সময় ও মাত্রা ঘুমের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। এক্সারসাইজের পর যদি আপনার এনার্জি ও কর্মতৎপরতা বেড়ে যায় সে ক্ষেত্রে রাতে এক্সারসাইজ না করাই ভালো। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সকালে ব্যায়ামের মাধ্যমে ইনসোমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা কমে যায়।
৫. শোয়ার সময় বেডরুমটিকে রাখুন কোলাহলমুক্ত, অন্ধকার ও আরামদায়ক। অনেক মানুষই আছেন যাদের সামান্য আলো বা শব্দেই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। কানে এয়ারপ্লাগ বা তুলো, জানালায় পর্দা দিয়ে, এয়ার-কন্ডিশনার চালিয়ে যেভাবে সম্ভব রুমের মধ্যে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে নিন। রাতে ঘুম থেকে জাগার দরকার হলে ভারি আলোর বদলে হালকা আলো ব্যবহার করুন। ঘুমানোর জন্য ঘরের আদর্শ তাপমাত্রা হলো ৬৮ থেকে ৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
তাপমাত্রা ৭৫ ডিগ্রির ওপরে বা ৫৪ ডিগ্রির নিচে হলে তা ঘুমের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
৬. পর্যাপ্ত খান, ঘুম হবে পর্যাপ্ত। ক্ষুধার্ত অবস্থায় বিছানায় ঝাপ দেবেন না। অবশ্য ঘুমাতে যাওয়ার আগে খুব বেশি ভারি খাবারও পেটে পড়া উচিত নয়। অতিরিক্ত ভরা পেট আপনাকে জাগিয়ে রাখতে পারে।
কিছু খাবার ঘুমের জন্য সাহায্য করে। যেমন দুধে আছে ট্রাইটোফেন নামক উপাদান যা ঘুম বাড়ায়। ঘুম বর্ধক এমন অন্য খাদ্যের তালিকায় রয়েছে কুমড়ো, ডাটা শাক, বাদাম, ডিম, আখরোট, পিচ ফল, আলু, কলা ইত্যাদি।
সম্ভব হলে রাত ৮টার পর থেকে যে কোনো ধরনের পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন। এর ফলে রাতে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে দৌড়াতে হবে না।
৭. নিকোটিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করুন। ঘুমের আগে একটা সিগারেট যদিও এটা আরামদায়ক অনুভূতির জানান দেয় (?) কার্যত এটা আপনার রক্তের ধারায় উদ্দীপনা তৈরি করে। নিকোটিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আসলে ক্যাফেইনের মতোই। নিকোটিন শরীরে থাকে ১৪ ঘণ্টার মতো এবং এটা আপনাকে জাগিয়ে রাখতে পারে অনেক রাত পর্যন্ত। পুরোপুরি ছাড়তে না পারলেও অন্তত ঘুমের আগে ও মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।
৮. হালকা তন্দ্রা বা ঝিমানো ভাব এড়িয়ে চলুন। ইংরেজিতে একে বলা হয় ন্যাপিং। ন্যাপিং ক্ষেত্রবিশেষে সমস্যাটিকে বাড়িয়েই তোলে, কারণ হালকা ঘুম থেকে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই আমরা অসময়ে। ন্যাপিং যদি করতেই হয় তবে সেটা শর্টকাট করুন। রাতের আট ঘণ্টার ঘুমের পর দিনে ১৫-২০ মিনিটের হালকা তন্দ্রা আমাদের আরো সক্রিয় করে তোলে।
৯. পোষা প্রাণীদের বিছানা থেকে দূরে রাখুন। আদরের পোষা বিড়াল বা কুকুর ছানাটি কি আপনার সঙ্গেই ঘুমায়? এর ফলেও রাতে আপনার ঘুম ভেঙে যেতে পারে। কারণ অ্যালার্জি বা পোষা প্রাণীটির নড়াচড়া। ফিডো ও কিটি বিছানার বদলে মেঝেতেই চমৎকারভাবে থাকতে পারে।
১০. ঘুমানোর আগে বিছানায় টিভি দেখা, খাওয়া, বা ইমোশনাল ইসু নিয়ে আলাপ করা থেকে বিরত থাকুন।
নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে যান। বিছানায় বিক্ষিপ্ত কার্যকলাপ চালিয়ে গেলে সেটা আপনার ঘুমিয়ে পড়াকে আরো কঠিন করে তুলবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।