আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসঙ্গ : বাঙলা বই হতে 'বঙ্গবাণী' ও 'মাগো ওরা বলে' বাদ দেয়ার নির্বুদ্ধিতা এবং কথিত তেরোজন 'ভারতীয়' কবি সম্পর্কে ছাগুদের বৃথা আস্ফালন

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়। অবশেষে সংসদীয় কমিটির নির্দেশে নবম-দশম শ্রেণির বাঙলা বইয়ে কবি আবদুল হাকিমের 'বঙ্গবাণী' ও আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ'র 'মাগো ওরা বলে' কবিতা দুটি পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটি ধন্যবাদ পেতে পারে, সাথে এনসিটিবির কাছে দাবী জানাই এইরকম নির্বোধ পুস্তক প্রণেতা টীমকে বহিষ্কারের। কবি আবদুল হাকিম হলেন মধ্যযুগের সেই কবি, যে নিজেকে মুসলমান না বলে বাঙালি বলতেই গর্ববোধ করতেন, যেই সময়ে কিনা মুসলমানমাত্রই নিজেদের বাঙালি বলতে চাইতো না, নিজেদের আরব-ইরানের মানুষ ভাবতো। আবদুল হাকিম এই শ্রেণির মানুষদের কটাক্ষ করে লিখেছিলেন তার বিখ্যাত 'বঙ্গবাণী' কবিতাটি।

একজন খাঁটি বাঙালির পূর্বপুরুষের কবিতা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের মতোন দুঃখজনক ঘটনা সম্ভবত শিক্ষাব্যবস্থায় আরেকটি ঘটেনি। আমার মনে পড়ছে না বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষপটে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ'র 'মাগো ওরা বলে' এর মতোন আরেকটি কবিতা নবম-দশম শ্রেণির বইতে আছে কিনা। একইসাথে আরেকটি গুজব উঠেছে এনসিটিবি 'ভারতীয়' তেরোজন কবির কবিতা বইয়ে ছাপাতে যাচ্ছে। এই তেরোজনের নাম আমি জানিনা, শুনেছি জ্ঞানদাস, ভারতচন্দ্র, বঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, যতীন্দ্রমোহন বাগচী, হেমচন্দ্র এদের মধ্যে আছেন। ছাগলের পাল যথারীতি এই নিয়ে ল্যাদানো শুরু করেছে।

এই কবিদের সবার জন্ম অবিভক্ত ভারতে, সেই সূত্রে এরা কোন দেশের একার নয়, তারা একইসাথে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের কবি। জ্ঞানদাস ও ভারতচন্দ্র হলেন মধ্যযুগের কবি। বাঙলা সাহিত্য সম্পর্কে অল্পস্বল্প পড়াশুনা থাকলে মঙ্গলকাব্য সম্পর্কে কারো না জানার কথা না, বাঙলা সাহিত্যের প্রথম যেই অন্ধকার যুগ, সেই যুগ কাটিয়ে উঠে জ্ঞানদাস ও ভারতচন্দ্রের মতোন কবিদের মঙ্গলকাব্যের আলোয়। আমি অনেকদিন ধরে মনেপ্রাণে চাচ্ছিলাম জ্ঞানদাস, ভারতচন্দ্রদের কাব্য ইশকুলের ছেলেমেয়েরা পড়ুক, প্রাচীন বাঙলা সাহিত্য সম্পর্কে জানুক। আমি প্রচণ্ড খুশি তাদের কাব্য বইয়ে আসায়।

উনিশশ তেইশে কল্লোল পত্রিকার মাধ্যমে আধুনিক বাঙলা কবিতার যে ধারা শুরু হয়েছিল, বিষ্ণু দে ছিলেন সেই ধারার অন্যতম লেখক। বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত তিনি কল্লোল পত্রিকায় লিখতেন। আর যতীন্দ্রমোহন বাগচীর জন্ম ১৮৭৫ সালে, দেশভাগের একবছর পরেই তিনি মারা গেছেন। তার কবিতা বাঙলা বইয়ে নতুন নয়, কাজলা দিদি কবিতাটি এখনও ইশকুলের বাচ্চাদের মনখারাপ করে দেয়। জসীমউদ্দীনের 'কবর' কবিতাটি য্যামন করে।

আর বঙ্গলাল? তিনি হলেন নজরুলের সমসাময়িক কবি। শুনেছি আরও একজন কবির কবিতা আছে, তিনি হেমচন্দ্র। তার জন্ম ১৮৩৮ এ, মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯০৩ এ। তিনি রোমিও-জুলিয়েট অনুবাদ করেছিলেন। তো, এই মূর্খ ছাগলের পাল কী উদ্দেশ্যে লেদিয়ে যাচ্ছে অ্যাখনো অজানা থাকার কথা না।

আজ যদি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা নতুন করে ছাপানো হতো তাহলে তারা 'দেশ বিক্রি হয়ে গ্যালো' বলে ম্যাৎকার করে উঠতো। এই ছাগলদের বলি, বাঙলা ভাষা, বাঙলা সাহিত্যে তোদের অ্যাতোই যখন চুলকানি, তখন উর্দু মলম লাগিয়ে পাকিস্তান যাস না ক্যানো? মঙ্গলকাব্যে যখন এতোই বিদ্বেষ, কবি আবদুল হাকিমের মতোন জিজ্ঞেস করি, নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন' যাস? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।