পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
এই শতককে যদি কল্পনা করেন নারী হিসেবে , তবে তার বয়স হয়েছে মাত্র পনের । সদ্য কিশোরী এই আলতো যৌবনা দিনটিকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অন্যান্য বছরের মত সাজ , সজ্জা , আড়ম্বরের কোন সুযোগ এই বার ছিলো না । বাড়িতে কেউ নেই । আমি আর আমার জান কুরবান আব্বু । অথচ এই উৎসবটি আমার সবচাইতে প্রিয় ।
এমন কি ঈদ কিংবা নবান্নের পার্বনের চেয়েও । এই দিনটা আমি পরিপূর্ণ উপভোগ করতে পছন্দ করি পরিবারের সকলের সাথে । ভোর বেলায় ছায়ানটের সুগম্ভীর সুর অন্তরের গভীরে যেই জাগরনী নাদের সৃষ্টি করে , তার কোন তুলনা নাই !
আমি গলা মিলিয়ে গাইতে চাই ,
মন জাগো মঙ্গললোকে !
আর তারপর সূর্যের প্রথম কিরনের সাথে , হাজার হাজার সাদা জমিনে লাল ছায়া ফেলে উদ্ভাসিত দিনকে বলতে চাই ,
অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে !
সারা দিন শাড়ি পরনে , চুড়ি ঘেরা হাতে ঢোল আর বাঁশি বাজিয়ে চিৎকার করে বলতে চাই , "শুভ নববর্ষ" । সব্বাইকে । যাকে চিনি তাকে , যাকে চিনি না , তাকে আরো বেশি আপন সুরে ! তারপর মেলায় মেলায় ঘুরে কদমা, বাতাসা , খাজা , গজা , নাড়ু , মোয়া খাওয়া ।
নাগর দোলায় চড়ে নগর ভুলে সেই সে ছোট্ট বেলার গ্রামে ভেসে যাওয়া । সারাটা দিন গান আর গান । কবিতা আর কবিতা । সুযোগ পেলে রাস্তায় রাস্তায় ঢোলক , কাঁসা , ঝাঁঝরের সাথে দুই পাক নেচে নেওয়া । আহা ! আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে , থাকো তুমি হৃদয় জুড়ে , ওগো আমার বাংলাদেশ !
এইবার সব ভন্ডুল ।
পরিবারের অর্ধেকের বেশি অনেক অনেক দূরে । মামণি নাই । দুলাভাই নাই । আপুর মুখটা হাড়ি , তার জন্মদিন আবার পয়লা বৈশাখ । আমার বিষন্নতা ঢাকা ডুবিয়ে পদ্মা , মেঘনা , যমুনা ভাসিয়ে নিলো ।
কিন্তু আব্বু আর আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম , পরাজয়ে ডরে না বীর ! তো কি হয়েছে যদি মামণি না থাকে ? নিজেই কোমরে শাড়ি পেঁচিয়ে রেঁধে ফেললাম , চাপিলা মাছ , ভেটকি মাছ , মুরগী , গরুর মাংস আর কিমা , সাথে সবজি আর সালাদ । কি ভাবে যেন ডাল ভর্তা , চাটনি আর খিচুড়িও হয়ে গেলো । দই আগেই ছিলো । আপু নিয়ে এলো কয়েক রকমের পিঠা ।
কিন্তু , ভর্তা করার জন্য বাসায় কোন শুটকি ছিলো না ।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো । ডালে দেওয়ার জন্য মনে করে আম পর্যন্ত কিনে রেখেছিলাম । কিন্তু , শুটকি বাদ পড়ে গেলো । রাগের চোটে মিট বল আর বিফ স্টেক বানাইলাম রাত জেগে । খামোখাই ।
কোন দরকার ছিলো না । ফ্রিজ পুরা খালি । এত খাবার যে কে খাবে ! মানুষই তো নাই। ফলে , দারোয়ান , ড্রাইভার , ছুটা বুয়াকে দিয়ে দিলাম । ওরা একটু মজা করে খাক ।
বুঝতেই পারছেন , পয়লা বোশেখের বেশির ভাগ সময়টাই রান্নাঘরে কাটলো । তবে , চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠান ছিলো । সেখানে ১৩ই এপ্রিল আবৃত্তি করলাম সুনীলদা আর আমার কবিতা । পরে পড়ি কি মরি করে গিয়েছিলাম বন্যাদির (রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা ) স্কুলে । দাওয়াত পত্র পাঠিয়ে ডেকে নিয়ে গেলো , না গেলে ঠিক বকা খেতাম ।
কিন্তু গিয়েও কি বেঁচেছি ? বকা তো খেলামই , সাথে গরম গরম খিচুড়ি আর পান্তোয়া । গান শুনে মন প্রান ভরে গেলো । উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের গুরুর কাছে রাম , শাম , যদু ঝাড়ি খেতে খেতে আমি শেষ । কেন আর যাই না , কেন আর গাই না (আম্মাআআ) ! নিকোলিনের সামনে আমার মান সম্মান খান খান হয়ে গেলো ।
কিরণ আনন্দে আহ্লাদে আটখানা ।
আমাকে কেউ বকতে পারে , এই প্রথম দেখলো কিনা (খাইয়ালামু) । আমি শুধু চোখে চোখে তাকে বললাম , কালকে দেখাব মজা ! সাথে সাথে ঘুষ -- পিজা হাটে ইবোনি -আইভরি খাওয়া হলো । এক সময় ঘোমটা পরতাম , দেখাতে গেলাম কেমন লাগতো তখন আমাকে । কোন ফাঁকে ছবি তুলে ফেললো টম ভাই । আমার খুব ইচ্ছা ঘোমটা পরবো , এম এস এনে তাকে বলার সাথে সাথে ফাজিল , বদমাশ , বান্দরটা বলে আমি যদি কোন দিন বোরখা ( ঘোমটা আর বোরখা কি এক?) পরি তাহলে ও আমাকে খুন করে নিজে আত্মহত্যা করবে ।
আশ্চর্য ! ছবিটা দেখে আপনারাই বলেন , এর ভিতর খারাপ কি পাইলো ?
কিরণ , টম , লীলা , রীফ , সাকি , অদি --- সবাই ঐকমত্য প্রকাশ করেছে , ( তাও আবার আমার টাকায় ইবোনি আইভরি খেতে খেতে ) আমাকে নাকি "মোল্লা নাসিরুদ্দিনের মত লাগছে । "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।