দুঃখটাকে দিলাম ছুটি, আসবে না ফিরে
গতকাল রাতে বাসায় ফিরেছি রাত সাড়ে দশটার পর। সারাদিন পত্রিকাটা ভাল করে পড়া হয়নি। একটু ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে নয়া দিগন্তে চোখ বুলাচ্ছিলাম। বক্স করা একটা নিউজে চোখ আটকে গেল। নিউজটা পুরাপুরি পড়লাম।
তসলিমা নামে এক মহিলার চার সন্তান ছিল। এখন আছে দুটি। বাকী দুটি বিক্রি করেছেন অন্যদের খাদ্যের যোগান দিতে। অভাবের কারণে এমনটি করতে হয়েছে। শেষেরটি বিক্রি করেছেন পাঁচ হাজার টাকায়।
তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অভাবের কারণে কি বাকীদেরও বিক্রি করে দিবেন? ডুকরে কেঁদে উঠে বলেছিলেন জীবন চলে গেলেও আর এমন ভুল করবো না॥
নিউজটি পড়ার পর থেকে আমি স্বাভাবিক হতে পারছলামি না। বাসায় কেউ ছিল না, অনেক্ষণ কাঁদলাম। খুব কষ্ট লাগল। খুবই অসহায় বোধ করছি। এখনও আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারছি না।
কেমন একটি অপরাধবোধ তাড়া করে ফিরছে।
আমার মেজ মামার ৪ মেয়ে। বড় মামার কোন সন্তান নেই। মেজ মামার শেষের সন্তান হওয়ার আগে কথা হয়েছিল এটি বড় মামাকে দিয়ে দেয়া হবে। মেজ মামীকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজীও করানো হয়েছিলো।
সন্তান জন্মের পর মামী আর সেই কথা রাখতে পারেন নি।
একটা সন্তান জন্মের পর মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা পেল না... যেটা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। তাও সেটা কেবল অভাবের কারণে। সেটিও বড় কথা নয়, মানুষকে বিক্রি করা হচ্ছে নামমাত্র মুল্যে। এটা মানুষের জন্য কত ভয়াবহতম অবমাননা।
আমি খুবই লজ্জিত, নিজেকে খুবই মুল্যহীণ মনে হয়েছে। মানুষ কত বড় বিপদে পড়লে এরকমটি করতে পারে? আমাদের সোসাইটি অন্নের খুব স্বাভাবিক চাহিদা নিশ্চিত করতে পারেনি। স্রষ্টা ব্যাপারগুলোকে কিভাবে দেখেন? আমি জানি না তাঁর কোন বান্দাকে এভাবে অপমান করার বেদনা তার কাছে কেমন? তবে কিছুটা আঁচ করতে পারি। কোরআনের কোন একটা আয়াতে আমি দেখেছিলাম যেখানে বলা হয়েছে, স্রষ্টা আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময়ে যেসব মেয়ে শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো তাদের উদ্দেশ্যে কিয়ামতের দিন বলবেন, কোন অপরাধে তোমাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়েছে? (এক্সাক্ট মনে নেই)। স্রষ্টার বর্ণনাভঙ্গি দেখে বুঝেছিলাম তাঁর ক্রোধটা কতখানি? যারা তাদেরকে শাস্তি দিত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না করে যাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়েছে তাদের কাছেই জানতে চাচ্ছেন স্রষ্টা।
অর্থাৎ, যারা তাঁর সৃষ্টির সাথে ন্যাক্কারজনক কাজ করে তাদের জিজ্ঞাসা করার প্রশ্নই আসে না। স্রষ্টার দৃষ্টিভঙ্গিটা সেদিন আমি বুঝেছি। ইসলাম যে হোল হিউম্যানিটির জন্য আশীর্বাদ তা বুঝতে এতটুকু বাকী ছিল না আমার।
হাদীসে এসেছে, সেই ব্যক্তি আমাদের দলভূক্ত নয় যে পেটভরে আহার করে আর তার প্রতিবেশী অভূক্ত থাকে। একেবারেই মানুষ সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী কে সেটা দেখতে বলা হয়নি।
তসলিমার আশেপাশে কি এমন কেউই ছিল না? তাঁকে এরকম একটা কাজ করতে হল! আমি আসলেই খুব দুর্বল, আমার আসলে কিছুই করার নেই। আমার পাশে এরকম তসলিমা নেই তো! আমি কিছূই জানি না। আমার কিই বা করার আছে।
আমরা হিউম্যানিটির জন্য আসলে কিছুই করতে পারলাম না, মুক্তির আসা নাই। স্রষ্টা সব নেয়ামত সম্পর্কে কড়ায় গন্ডায় হিসাব নিবেন।
আমি আমার মুক্তি নিয়ে বড়ই চিন্তিত। হে আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করে দিও...... আমি এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।