সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
যদি অন্য ধর্মের কেউ উদার হয়, বেশ আনন্দিত হই আমরা। আহলাদে উচ্ছসিত হয়ে তার গুনগান গাইতে গাইতে সে উদারতার সুযোগ গ্রহন করি। কিন্তু নিজের বেলায় লবডঙ্কা। নিজের অবস্থান ছেড়ে এক পা ও নড়তে চাই না। অর্থাৎ আমাদের নিজেদের যা করার নেই, তার প্রত্যাশা অন্যদের কাছে আমাদের রয়েছে।
যদি তারা তা করেন, তাহলে আমরা খুশী, নাহলে বেজার হই।
জার্মানীতে একসময় ছিল হেলমুট কোলের রক্ষনশীল সরকার। তখন ফ্রান্সে ছিল মিতেরার সোস্যালিষ্টদের আধিপত্য। তখন দুদেশের রক্ষনশীল আর সোস্যালিষ্টদের মাঝে ভাল সম্পর্ক। জার্মানীর সত্যিকারের রাজনৈতিক তখন ফরাসীদের সাথেই।
কোল থাকাকালীন সময়েই মিতেরা বিদায় নিলেন, ফ্রান্সেও রক্ষনশীল দল সরকার গঠন করলো। যদিও জার্মানী ও ফ্রান্সের দুটো রক্ষনশীল দলই ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে একই জোটের ভেতরে, তারপরও দু'দেশের ভালো সম্পর্কে অনেকখানিই ভাটা পড়লো। তার কয়েক বছর পর জার্মানীতে এলো গেরহার্ড শ্রোডার এর সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক সরকার। তখন আবার দু'দেশের রাজনৈতিক ও বানিজ্যিক সম্পর্ক আগের মতোই ভাল। ইরাক প্রশ্নে এই দু'দেশ রাশিয়ার সাথে মিলে আমেরিকার বিপক্ষে নীতিগতভাবে হলেও, প্রতিপ দাঁড় করাতে পারলো।
এটা একটা উদাহরণ মাত্র। মোদ্দা কথা হচ্ছে, আমরা নিজেদের দিকে কেউ তাকাতে চাই না, বরং সবসময় অন্যদের কাছে প্রত্যাশার চোখ আমাদের। আমরা দেশের বাইরে এসে বৃটিশদের, জার্মানদের বা অন্য দেশগুলোতে অন্যদের রক্ষনশীল, জাতীয়তাবাদী, বিদেশীদের প্রতি শত্রুতাভাবাপন্ন চরিত্র দেখে সমালোচনায় মুখর হই, অথচ আমরা নিজেরা হলে কি করতাম, ভাবতে চাই না। আমেরিকায় দেখেছি, ভারতীয় ও আমাদের দেশীয়রা কালোদের প্রতি সাদাদের মতোই বর্ণবিদ্বেষী। জার্মানীতে দেখেছি, ইউনি ক্যাফেতে আমারই বাংলাদেশী বন্ধুরা কালোদেরকে কিভাবে এড়িয়ে চলে।
পুর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের অবসানের পর যখন ওখানকার নাগরিকরাও জার্মানীতে আসা শুরু করলো, তখর আমাদের দেশী ভাইদের যেসব মন্তব্য শুনেছি, তাতে আমার ভেতরে এই বিশ্বাস তৈরী হয়েছে যে, আমরা বাংগালীরা যদি জার্মান হতাম, তাহলে প্রত্যেকেই নাজীই হতাম।
ধর্মের কথা বলতে গেলেও একই কথা বলতে হয়। আমরা নিজেদের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ মনে করি। অন্য ধর্মের মানুষকে খারাপ বলতে তাই এক মুহুর্তও দ্বিধা করি না। অন্য ধর্মের লোকদের কাছে আমাদের ধর্মান্ধদের প্রত্যক্ষ বা নিদেপক্ষে পরোক্ষ প্রত্যাশাও রয়েছে, যাতে তারা আমাদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বকে মেনে নেন।
একই দাবী অন্যধর্মাপন্থীদেরও আমাদের কাছে। যুগ যুগ ধরে এ দাবীর প্রচন্ডতায় পৃথিবীব্যাপী বিধংসী যুদ্ধ। আমরা ভুলে যাই, "ধর্ম মানুষকে বড় করে না, মানুষের কর্মই বড় করে মানুষকে"। হয়তো এ চাওয়ার পরিমান অনেক বেশী বিস্তারিত ও কিছু কিছু লোকের বোধ, বুদ্ধি ও শিক্ষার বাইরে হবার কারণেই তারা ধর্মকে আকড়ে ধরে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানে প্রয়াসী হয়। এদেরকে পৃখিবীতে অরাজকতা, হত্যা ও যুদ্ধের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করলে ভুল করা হবে না বলেই আমার বিশ্বাস।
আমরা ইতিহাস থেকে শিখি না, ররং ইতিহাসকে আরো বেশী কলঙ্কিত করাতেই বেশী সচেষ্ট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।