(বি.দ্র. এই লেখা লেখার জন্য মূল লেখক হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর কোনো মতামত নেয়া হয় নাই। )
আমার কথা শুনে লাবণ্য ভ্যাবদা মেরে গেছে। তার চোখেমুখে স্পষ্ট বিস্ময়ের ছাপ। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। চোয়াল ঝুলে পড়ি পড়ি করতে করতে এখন সম্পূর্ণ চোয়ালটাই সামনের দিকে ঝুলে পড়েছে।
তার মানে অল্প ভ্যাবদা না, পুরোপুরিই ভ্যাবদা মেরে গেছে।
কী বললেন, আপনি গাঞ্জা খান! আর সে জন্য আপনি আমার কাছে টাকা চাচ্ছেন ?
জি, আমি গাঞ্জা, হিরোইন সব খাই। তবে ইয়াবা এখনো খাওয়া হয় নাই। শুনেছি ওটা নাকি নেশা দ্রব্যের বাজারে নতুন সংস্করণ, ঘবি ঊফরঃরড়হ। খাব ভাবছি কিন্তু পকেটে টাকা নেই।
আপনি যদি দয়া করে ইয়াবা কেনার টাকাটাও গাঞ্জার টাকার সাথে দিয়ে দিতেন তাহলে খুব সুবিধা হতো।
প্লিজ, আমার সাথে আপনি ফান করার চেষ্টা কখনোই করবেন না। আমি ফান একদমই পছন্দ করি না।
জি আচ্ছা, আমি ফান করবো না। তবে একটা কাজ করতে পারবেন?
কী কাজ ?
খুব ছোট একটা কাজ।
খুব বেশি জটিল কিছু না। আমাকে ৫০০ টাকা দিতে হবে। সেই টাকা দিয়ে আমি হিরোইন কিনবো। নিজের জন্য না। দিওয়ানা মাসুদকে হিরোইন কিনে দেবার কথা ছিল কিন্তু আমার কাছে হিরোইন কেনার কোনো টাকাই নেই।
আমার পাঞ্জাবির তো পকেটই নেই টাকা থাকবে কি করে বলুন ?
আপনি কিন্তু আবার আমার সাথে ফান করার চেষ্টা করছেন। প্লিজ আপনি চলে যান। আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না।
আপনি সত্যিই টাকা দিবেন না ? কাজটা কিন্তু ঠিক হলো না।
কাজটা ঠিক হলো না মানে! কি বলতে চান আপনি ?
লাবণ্য এখন রাগে ফুঁসছে।
তাকে আর বেশি রাগানোটা ঠিক হবে না। শুনেছি সে খুব বেশি রেগে গেলে তোঁতলানো শুরু করে এবং তারপর পায়ের স্যান্ডেল খুলে ছুড়ে মারে। আমি তার পায়ের স্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে আছি। খুব দামি স্যান্ডেল। মনে হয় না এই স্যন্ডেলের বাড়ি খেয়ে তেমন কিছু হবে।
কমদামি স্যান্ডেলের বাড়ি খেয়ে মজা আছে। বেশি দামি স্যান্ডেলের বাড়ি খেয়ে কোনো মজাই নেই। কারণ বেশি দামি স্যান্ডেল সবসময় খুব বেশি মোলায়েম হয়ে থাকে। মোলায়েম স্যান্ডেলের বাড়ি খেলে বাড়ি খেলাম কি না খেলাম তা বুঝতে পারবো না। যে জিনিস বোঝা যাবে না তা উপলব্ধি করাটা নেহায়েত বোকামি।
হিমু সাহেব, আপনি কোনো দিনও আর আমার এখানে আসবেন না। যদি কোনোদিন দেখি ত ত ত তবে আপনাকে গুন্ডা দিয়ে মেরে ত ত তক্তা বানিয়ে ফেলবো।
জি আচ্ছা।
আপনি এখনো আছেন ? বের হয়ে যান। বের হয়ে যান বলছি।
আমি বের হয়ে এলাম। সে এখন তোঁতলাতে শুরু করেছে। তোঁতলানো হ্যাজ বিন স্টার্টেড। লাবণ্য দেখতে খুব সুন্দর। প্রকৃতি তাকে নিজ হাতে গড়েছেন বলে আমার ধারণা।
প্রকৃতি যাদের নিজ হাতে গড়েন তারা খুব সুন্দর হয়। তবে সুন্দরী মেয়েরা একটু বোকা টাইপের হয়ে থাকে। আর বোকা মেয়েরা অল্পতেই রেগে যায়। রাগলে লাবণ্যকে অসম্ভব সুন্দর মনে হয়। এই তথ্যটা কি সে জানে ? একদিন তাকে জানাতে হবে।
কবে জানাবো এটা এখনো ঠিক করতে পারছি না। জানাবো কি না তাও জানি না। এখন কোথায় যাওয়া যায় তাই ভাবছি। দিওয়ানা মাসুদের কাছে গেলে কেমন হয় ? আজ বসন্তের প্রথম দিন। বসন্তের প্রথম দিনে সব মেয়েরা বসন্ত বরণ উৎসব পালন করে।
সবাই হলুদ শাড়ি পড়ে বাইরে বের হয়। তখন প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজে ওঠে। আমার পাঞ্জাবির রঙও হলুদ। বসন্তের প্রথম দিনটাকে আমার খুব ভালো লাগে। এদিন নিজেকে প্রকৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে হয়।
নিজেকে প্রকৃতির অংশ ভাবতে আমার খুব ভালো লাগে।
এ্যাই হিমু। এ্যাই হিমুউউউ।
আমি পেছন ফিরে তাকালাম। হিমু, হিমুউউউ বলে চিৎকার করতে থাকা মানুষটিকে দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু কাউকেই চোখে পড়ছে না।
কিরে, এভাবে কি দেখছিস ? আমাকে চিনতে পেরেছিস ?
জি না ম্যাডাম, আপনাকে আমি এখনো চিনতে পারিনি।
কি বলিস তুই এসব! রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে করতে কি তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি।
ঠিক বুঝতে পারছি না। হলেও হতে পারে।
আমি তোর মাজেদা খালারে ছাগল।
ও খালা। তুমি দেখছি খেয়ে দেয়ে হেভি মোটাতাজা হয়ে গেছ। ব্রয়লার মুরগীও তো ফেল।
আমার সাথে ফাঁজলামি করবি না। আমি তোর ইয়ার দোস্ত না যে তুই আমার সাথে ফাঁজলামি করবি।
আমি তোর খালা।
আমি খুবই স্যরি।
হয়েছে হয়েছে, আর স্যরি বলতে হবে না। এখন রিকশায় ওঠ তো। তোকে আমি অনেকদিন ধরেই খুঁজছি।
তোর মেসে লোক পাঠিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তুই কোথায় থাকিস তা কেউ বলতে পারে না। তোর খুব প্রয়োজন। চল, আমার সাথে এখন তুই আমার বাসায় যাবি।
খালু সাহেব তো আমাকে দেখতেই পারেন না।
আমাকে বলেছে এর পর আমাকে দেখলে নাকি সে আমাকে কুত্তার মতো গুলি করে মারবে। আমি যাবো না।
যাবি না মানে! তোর চৌদ্দগুষ্টি যাবে! তোর খালুর মতো একটা রোগা পটকা শুটকি মাছকে তুই ভয় পাস ? ফুঁ দিলেই তো উড়ে যাবে। ওঠ, তাড়াতাড়ি লাফ দিয়ে রিকশায় ওঠ।
আমি লাফ দিয়ে রিকশায় উঠলাম।
এই একটা ব্যাপার আমি খুব ভালো পারি। লাফ দিয়ে শুধু রিকশা নয়, সোফা, চেয়ার, বিছানা সব কিছুতেই লাফ দিয়ে চড়তে আমার খুব মজা লাগে। লাফ দিয়ে রিকশায় চড়ায় খালা হতভম্ব হয়ে গেছেন। তার হতভম্ব ভাব কাটতে কিছুটা সময় লাগবে। মানুষের হতভম্ব ভাব কাটতে ঠিক যতটুকু সময় লাগে খালার তার চেয়েও দুইগুণ বেশি সময় লাগে।
রিকশাওয়ালা এখন আমার দিকে ভিতু ভিতু চোখে তাকাচ্ছে। রিকশাওয়ার দিকে তাকিয়ে আমি বত্রিশটা দাঁত বের করার মতো করে একটা হাসি দিলাম। মানুষের হাসির সময় বত্রিশটা দাঁত দেখা যায় না। আর তা ছাড়াও আমার এখনো বত্রিশটা দাঁতই ওঠেনি। আমার হাসি দেখে রিকশাওয়ালা বোধহয় আরও বেশি ভয় পেয়ে গেছে।
মানুষ অদ্ভুত সব কারণে ভয় পায়। হাসি দেখে কারও ভয় পাবার কথা নয়। আনন্দ পাবার কথা। কিন্তু রিকশাওয়ালা কঠিন ভয় পেয়ে গেছে এবং সাথে বিভ্রান্তও।
হিমু, এ্যাই হিমু ! কিরে অমন করে কী ভাবছিস ?
ভাবছি তোমার আমাকে হুট করে প্রয়োজন পড়লো কেন ।
খুব বড় সমস্যায় না পড়লে তো তুমি আমাকে ডাকো না।
সে কি রে ! আমি তোর খালা না ? খালারা তো মায়ের জাতের। আমিও তো তোর মায়ের মতো।
হু।
তোর জন্য দারুণ একটা সারপ্রাইজ আছে।
কী সারপ্রাইজ ?
সারপ্রাইজের কথা আগে বলতে হয় না রে ছাগল। বাসায় গেলেই জানতে পারবি।
খালা আমাকে প্রথম থেকেই ছাগল ছাগল বলে ডাকছে। ব্যাপারটা জটিল। ছাগল হলে আমার চারটা পা থাকতো।
কিন্তু আমার দুটো পা। রাম ছাগল হলে ছাগলী দাড়ি থাকতো। আমার ছাগলী দাড়ি নেই। ছাগল ঘাস খায়। আমি খাই না।
ছাগল ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে ডাকে। আমি ডাকি না। তাহলে খালা কেন আমাকে ছাগল ছাগল বলে ডাকছে ? ছাগলের মতো কোনো কাজ কি আমি করেছি ? চিন্তার ব্যাপার। ছাগল আর আমার কাজের মধ্যে মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। কিন্তু ছাগলের সাথে আমার কোনো কাজেরই মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
মিল যখন খুঁজে পাচ্ছিই না তখন অবশ্যই ছাগলের মতো একটা কাজ করতে হবে। তাহলে খালার কথা সত্যি প্রমাণিত হবে।
রিকশা এখন খালার বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি লাফ দিয়ে রিকশা থেকে নামলাম। লাফ দিয়ে রিকশায় উঠেছিলাম তাই লাফ দিয়েই রিকশা থেকে নামলাম।
লাফালাফিতে কাটাকাটি। রিকশাওয়ালা এখনো আমার দিকে ভ্যাবলার মতো তাকাচ্ছে। ভ্যাবলাটাকে আরো একটু বেশি ভ্যাবলা বানিয়ে দিব কি না ভাবছি। রিকশাওয়ালার সামনে গিয়ে জোড় গলায় ভ্যাঁ করে শব্দ করলে কেমন হয় ? বুদ্ধিটা খারাপ না। লোকটা এ ধরনের কাজে আরও বেশি বিভ্রান্ত হয়ে যাবে।
আর সেই সাথে খালার কথাটাও সত্যি বলে প্রমাণিত হবে।
আমি রিকশাওয়ালার একেবারে মুখের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর গলায় যথা সম্ভব জোড় এনে ভ্যাঁ করে জোড়ে একটা চিৎকার দিলাম। আমার এরকম উদ্ভট কাজে রিকশাওয়ালা চমকে উঠেছে। রিকশাওয়ালার সাথে সাথে দুটো কুত্তাও বোধহয় চমকে উঠেছে কারণ তাদের একসাথে ঘেউঘেউ করার শব্দ এখন আমার কানে আসছে।
কুত্তা দুইটা নিশ্চই বিদেশী হবে। আমাদের দেশের কুত্তাগুলোর সাহস অন্য রকম। এমনকি লোমহীন নেউলি কুত্তাগুলোও মাঝেমধ্যে দুঃসাহসিক সব কাজ করে বসে। তারা সহজে চমকায় না। বিদেশী কুত্তাগুলো সামান্যতেই চমকে ওঠে।
এদের এমনি এমনি চমকানোর রোগ আছে। বিদেশী কুত্তা দুইটা গেটের কাছে বাঁধা। তারা আমাকে অতি আগ্রহ ভরে দেখছে। আমিও আগ্রহ ভরে তাদের দেখছি। কুত্তা দুইটা খুবই ছোট।
তাদের গা লোমে ভর্তি। মুখটা সম্পূর্ণ লোমে ঠাঁসা। চোখগুলো ছোট ছোট। দেখলেই বোঝা যায় ভিতু টাইপের।
আমি খালাকে বললাম. খালা এইগুলা কী ?
খালা বললেন, কেন, কুকুর।
বিদেশী কুকুর। তোর খালুর বন্ধু রহিম সাহেব ফ্রান্সে থাকেন। তিনি তোর খালুর জন্মদিনে এই দুইটা কুকুর তাকে গিফ্ট হিসেবে পাঠিয়েছেন। সুন্দর না ?
না, একদম বাজে। এগুলোর চেয়ে আমাদের দেশী কুত্তা অনেক ভালো।
তাদের অসম্ভব রকম সাহস থাকে। তোমার বিদেশী কুত্তাগুলো একদম কা-কুত্তা।
কী বাজে কথা বলিস ? কা-কুত্তা আবার কী ?
যেসব পুরুষের সাহস নেই তাদের বলে কাপুরুষ, আর যেসব কুত্তার সাহস নেই তাদের বলে কা-কুত্তা।
দ্যাখ হিমু, আমার সাথে বাজে কথা বলবি না। আমি বাজে কথা একদম অপছন্দ করি।
ঠিক খালুকে যেমন অপছন্দ কর তাই না ?
দ্যাখ হিমু.....!
খালা আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছেন। তাকে এ মুহূর্তে রাগানোটা বোধহয় ঠিক হবে না। আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম। খালাও আমার পিছে পিছে আসছেন। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে খালা দরজার তালা খুললেন এবং তারপর আমি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলাম।
খালু সাহেব বাসায় নেই। থাকলে তাকেও ভড়কে দেয়া যেত। ভড়কে দেওয়ার খেলাটা আপাতত বন্ধ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।