জীবনটা যদি স্বপ্ন হত, স্বপ্নভঙ্গ মানেই মৃত্যু । মন্দ হত না !!!! সেদিন দুপুরে খুব বৃষ্টি নেমেছিল । আর আমি ছোটবেলা থেকেই বৃষ্টি ভয় পেতাম । তবে আব্বুর স্কুলে পড়ার সুবাদে আমার ভয় বা খুশি কোনটারই বহিঃপ্রকাশ ছিলনা । আব্বু টিফিনের সময় অফিসের একটা কাজে আটকে গেলেন ।
বাধ্য হয়ে তাই মাথায় ছাতা ধরে ঢিপঢিপ করে হাঁটছিলাম আর ভাবছিলাম যেন বিজলী না চমকায় । কাদা-পানি মাড়িয়ে হাঁটতে সেদিন আমার জান বের হয়ে যাচ্ছিল ।
হঠাত আমার চোখে পড়ল আমি যে রাস্তা ধরে হাঁটছি একই রাস্তায় মধ্যবয়সী একজন মহিলা বিশাল লাগেজ নিয়ে হাঁটছেন । তার সঙ্গে আমার বয়সী একটি মেয়ে এবং ছোট একটি ছেলে । তাদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে এসেছেন ।
আমার টিফিনের সময় চলে যাচ্ছিল বলে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে খেতে বসলাম । দরজায় নক শুনে আম্মু দরজা খুলেই আমার নাম ধরে দাক দিলেন, মনে হল আম্মু খুব খুশি । আমি কাছে যেতেই লক্ষ্য করলাম রাস্তায় দেখা সেই মহিলা আমাদের বাড়িতেই এসেছেন । তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কতক্ষণ আদর করলেন । আমি জানলাম উনি আমাদের অতিথি এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে উনি আমার ফুপু হন ।
আমার দাদার দুই বিয়ে ছিল । কিন্তু দুপক্ষের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক না থাকায় আমি কাওকেই চিনিনা । সেদিন আমার খুব আনন্দে কেটেছিল , দিশা আর আমার প্রথম পরিচয় ।
তারপর থেকে দিশা আর আমি খুব ভাল বন্ধু । স্কুল বন্ধ হলেই ফুপু দিশার অত্যাচারে আমাদের বাড়িতে আসতে বাধ্য হতেন ।
আমার প্রত্যেক টা ছুটিই দিশার সঙ্গে কাটত । আমাদের বাড়ির পাশে একটা বড় দীঘি ছিল , সেখানে পা ঝুলিয়েই কেটেছে আমাদের অনেক গল্পময় দিন । ফুপু থাকত জেলা শহরে নিজের বাড়িতে , ফুপার বড় ব্যাবসা । ওরা খুব সুখী শুধু ফুপার একটু নেশার ধাত ছিল । দিশার যখন চলে যাওয়ার সময় আসত তখন আমি সারাদিন মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতাম, কথা বলতাম না কারো সঙ্গে ।
আবার স্কুল ছুটি হলে দিশার সঙ্গে দেখা হবে । ততদিন আমি দিশার জন্য কার্ড বানাতাম, গিফট কিনে রাখতাম ।
প্রতিবছর বন্যার পানিতে আমাদের দীঘি নদীর মতো বড় হয়ে যেত । আমি আর দিশা ঠিক করলাম নৌকায় করে দীঘির ওই পাড়ে যাব । একজন মাঝি ডেকে রওনা হলাম ।
যাওয়ার সময় আমরা দুজন পানিতে পা ডুবিয়ে, পানি ছিটিয়ে মজা করছিলাম । হঠাত দেখলাম ওর পায়ের নূপুর জোড়া ওর সঙ্গেই রিনঝিন করে বাজছে । আমার পায়ে কিছু নেই, মন খারাপ হয়ে গেলো । বাড়িতে এসে বায়না ধরলাম আমাকে দিশার মতো নূপুর বানিয়ে দিতে হবে ।
আমি ক্লাস টেন এ উঠলাম ।
আম্মূ আমাকে নূপুর বানিয়ে ও দিয়েছিলো কিন্তু সেটা পরে আমি দিশার সঙ্গে নৌকায় করে বেড়াতে যেতে পারিনি । ফুপা নেশা করে সবাইকে পথে বসিয়ে দিয়েছে । আমি পড়াশোনার জন্য বাইরে চলে আসি । একবার ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে শুনলাম ওর বিয়ে হয়েছে , ওর স্বামী ও নেশা করে । একবার অন্য একটা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো আর দিশাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো ।
ও আমাদের বাড়িতে এসেছিলো , পরনে একটা ছেঁড়া শাড়ী ছিল । আম্মূ ওকে আমার পুরোনো একটা জামা দিয়েছে । আমার খুব কান্না পেল, পরদিন হোস্টেলে ফিরেই আমি জুয়েলারি দোকানে গিয়ে আমার নূপুর জোড়া বিক্রি করে ফেলেছি । দিশার সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি । কোথায় আছে কেমন আছে কিছুই জানিনা ।
দোয়া করি ও যেন ভালো থাকে । আর কোন দিশার বাবারা যাতে দিশাদের জীবন নষ্ট ণা করে ...। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।