আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজোড়া চোখের জন্য (ছোট গল্প)

নতুন করে পেয়েছি তোমাকে আবার পেয়েছি, আপন করে নেয়ার সময় এসেছে আজ। রাতের মত অন্ধকার নিস্তব্ধ তোমার ছায়া আগলে রেখেছি এতদিন, তোমার চঞ্চলতা বুঝিনি। রিকশা থেকে নামলাম হসপিটালের সামনে। বড় বড় করে লেখা 'Health-Aid Hospital'। হসপিটালের বাইরে বড় বড় ব্যানারে ত্রিশ-চল্লিশ জনের মত ডাক্তারের নাম, ডিগ্রি লেখা।

তার মধ্যে আমার ডাক্তারের নামও দেখতে পেলাম। Dr. MD. Kabir Hossain, MBBS (DMC), FCPS (Medicine), Cardiology (London)। তিনি আগে বসতেন মগবাজার ওয়ারলেস্ মোড়ের একটা ছোটখাট হসপিটালে। কি জানি হঠাৎ কি হল, ধানমন্ডির এমন একটা নামকরা হসপিটালে জায়গা পেয়ে গেলেন। হসপিটালের ভিতরে ঢুকলাম।

বিশাল হসপিটাল। রিসেপশনে একজন অল্পবয়স্কা তরুণী বসে আছে। তার কাছে গিয়ে ডাক্তারের নাম বলতেই ডিরেকশান দিয়ে দিলেন। বললেন, 'দু'তলায়'। দু'তলায় গিয়ে দেখলাম রীতিমত মানুষের বাজার।

এত মানুষ যে একসাথে অসুস্থ হয় তা ভাবা মুশকিল। এর মধ্যে রোগীর স্বজনের সংখ্যাই বেশি হবে। আমার আগে থেকে টোকেন নেয়া ছিল। টেলিফোনে টোকেন নেয়ার সুবিধা আছে। টোকেন নম্বর তের।

ছট্ করে গিয়ে মনিটরে দেখে এলাম এখনো দুই নম্বর চলছে। কোথাও এতটুকু বসার জায়গা নেই। একজন লোক উঠে যেতেই দেরি না করে সেখানটায় বসে পড়লাম। আচ্ছা, সবক্ষেত্রেই কি আনলাকি থার্টিন ব্যাপারটা আছে। এই যেমন আজ আমার টোকেন নাম্বার তের।

তার মানে কি এই যে, ডাক্তার আমার ভুল চিকিৎসা করবেন? সময় কাটানোর জন্যে সবাই কিছু একটা করছে। পত্রিকা পড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। আমার মুখোমুখি সিঁড়ির কাছে এক ভদ্রলোক ব্যাগ থেকে পড়ার জন্য পত্রিকা বের করলেন। সাথে সাথে পাশের কয়েকজন বললেন, ‘আঙ্কেল, অমুক পাতাটা দেখতে পারি?’ তিনি যে পাতাটা পড়ছিলেন ওটা বাদে বাকী পাতাগুলো অন্যেরা নিয়ে নিলেন। ভদ্রলোকের চেহারায় রীতিমত বিরক্তি।

তারপরও সমস্যা ছিল না। ভদ্রলোকের দু’পাশ থেকে দু’জন তাঁর মুখের সামনে হেলে তাঁর হাতের পাতাটাও যে পড়ছেন। এ জায়গায় আমার খুব হাসি পেয়ে গেল। আমার পাশে বসে আছেন গোঁফওয়ালা মাথায় হ্যাট পরা মাঝবয়সী এক লোক। তিনি আমার হাসি শুনে ট্যারা চোখে তাকালেন।

আমি সহজ হওয়ার জন্য তাঁকে জিজ্ঞাস করলাম, আপনার টোকেন নম্বর কত? তিনি এমনভাবে তাকালেন যেন এ ধরণের প্রশ্ন তিনি জীবনে শুনেননি। মানব চরিত্র বুঝা মুশকিল। ভদ্রলোক আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। আমার মুখোমুখি দু’জন মেয়ে বসে আছে। তাদের একজন শাড়ি পরা।

এতক্ষণ তাদের চেহারা খেয়াল করিনি। মেয়েগুলো নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। এমনভাবে কথা বলছে যেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু। কাছে গিয়ে শুনলে দেখা যাবে কসমেটিক্স অথবা টিভির সিরিয়াল। এদের একজনকে চেনা মনে হল।

আরে তাইতো এ যে শিমু। ছোট খালার মেয়ে। আমি ডাকলাম, ‘এই শিমু!’ দু’জনেই তাকাল একসাথে। আমি এগিয়ে গেলাম। ‘কিরে তুই এখানে? কেন এসেছিস্?’ ‘ও আমার বান্ধবী পারুল।

আমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে। আমরা ওর বাবাকে নিয়ে এসেছি। ’ এতক্ষণে মেয়েটিকে ভাল করে দেখলাম। হালকা নীল পাড়ের কাল একটা শাড়ি পড়েছে। চেহারায় এত ঔজ্জ্বল্য আমি আর দেখিনি।

চোখগুলো কেমন অসহায়। যেন ভরসা খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না। ‘তোমাদের ভার্সিটিতেই তো পড়ে। কখনো দেখনি?’ ‘কই নাতো!’ আমি পারুলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে তোমার বাবার? চোখ নামিয়ে বলল, হার্ট অ্যাটাক। আমি খুব অস্বস্তিবোধ করলাম।

কি বলব ভেবে পেলাম না, ‘কিভাবে হল?’ পারুল বলল, ‘ডাক্তার বলেছেন সিগারেট থেকে। ’ বুকের ভিতর ধুক করে উঠল। ডাক্তারের কথাগুলো আমার মনে পড়ল। গত সপ্তাহে ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন, ‘আপনি যে হারে ধূমপান করেছেন। আপনি যে বেঁচে আছেন এটাই এখন সৌভাগ্যের ব্যাপার।

আপনি আপাতত এই ঔষুধগুলো খান। আর আগামী সপ্তাহে আসুন। ভাল না লাগলে কিছু টেস্ট দিয়ে দেব। ’ ‘উনি কি খুব বেশি ধূমপান করতেন?’ আমি মূর্তের মত জিজ্ঞাস করলাম। ‘হ্যাঁ খুবই।

আমরা নিষেধ করলে শুনতেন না। ’ বলতে বলতে মেয়েটা কেঁদে ফেলল। ‘আরে কিছুই হবে না। উনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন। চিন্তা করো না।

’ শান্ত্বনার সুরে বললাম। ‘উনি কত নম্বর কেবিনে আছেন?’ শিমুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলাম। যদিও আমি একজন অপরিচিত লোক হয়ে তাকে দেখতে যেতে পারি না। তার স্বজনরা নিশ্চয়ই ভিতরে আছেন। শিমু হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল, ‘এইতো ২০৫ নম্বরে।

তুমি এখানে কেন এসেছ, সাদি ভাই?’ ‘তেমন কিছু না, একটু চেকআপ করানো এই আর কি! ঐ যে আমার সিরিয়াল এসে গেছে। বাসায় যাস্। একেবারে ভুলেই গেছিস। ’ ‘যাব। তুমিও এসো।

’ পারুলের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আসি। ’ ডাক্তার একগাদা টেস্ট দিলেন। কোনটাই বাদ রাখলেন না। টেস্টগুলো করাতেও একগাদা টাকা খরচ হল। বাবা নিজেও সিগারেট খান।

তারপরও তিনি আমার উপর খুব রেগে আছেন। সিগারেট খেয়ে খেয়ে অসুখ বাঁধিয়ে এতগুলো টাকা খরচ হল। মা তার একমাত্র ছেলের জন্য খুব কাঁদলেন। **************** বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি পড়ছে। বর্ষার প্রথম বৃষ্টি।

বৃষ্টির মধ্যেই অনেকদিন পর ভার্সিটিতে গেলাম। ক্লাস ছিল না। লাইব্রেরীতে কিছু রেফারেন্স বই দেখতে হবে। লাইব্রেরি থেকে বেরুতে বেরুতে চারটা বেজে গেল। বৃষ্টি আগের মত বিড়াল কুকুরে পড়েই যাচ্ছে।

থামার কোন লক্ষণ নেই। বৃষ্টির মধ্যে একটা রিকশাও পাওয়া গেল না। হাটতে হাটতে টিএসসি পর্যন্ত চলে এলাম। ভিজে নেয়ে একাকার। শরীর একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে।

প্রচন্ড ক্ষিদে পেটে কিন্তু অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে করল না। হাকিম চত্বরে ঢুকে এক কাপ চা খেলাম। অন্য সময় এখানকার চাটা আমার অত ভাল লাগে না। আজ আশ্চর্য রকমের ভাল হয়েছে চাটা। হাকিম চত্বর থেকে বের হয়ে ভিজতে লাগলাম।

বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে ভিজতে একটুও খারাপ লাগছে না। আমার পাশে একটা কাকও আমার মত ভিজছে। পালকগুলো ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। কাকটাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে অন্য কোন পাখি।

প্রথম দেখলে যে কেউ অন্য কোন পাখি ভেবে ভুল করতে পারে। আচ্ছা, কাকেরা কি বর্ষা বুঝে? বর্ষার প্রথম বৃষ্টি বুঝে? বোধহয় বুঝে….. ‘সাদি ভাই!’ একটা মেয়েলী কন্ঠ আমার নাম ধরে ডাকল। কন্ঠের উৎস আবিষ্কার করলাম একটা রিকশা। রিকশার প্লাস্টিকের পর্দা তুলে মেয়েটি বলছে, ‘কি ব্যাপার এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছেন কেন?’ রিকশার কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম পারুল। ঐদিন শিমুর সাথে হসপিটালে দেখেছিলাম।

গভীর চোখজোড়া দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ কপালে কাল একটা টিপ পড়েছে। টিপটা না থাকলে বোধহয় এই বর্ষায় তাকে মানাতই না। বললাম, ‘কি করব রিকশা পাচ্ছিলাম না। ’ ‘আমি বাসায় যাচ্ছি।

কলাবাগান। আপনি কোনদিকে যাবেন?’ ‘ধানমন্ডি। ’ ‘ও তাহলে উঠুন। আপনাকে নামিয়ে দেব। শুধু শুধু ভিজবেন না।

’ আমি রিকশায় উঠলাম। মাঝে মাঝে কিছু কিছু ব্যাপার নাটকীয় হয়। এই বৃষ্টির মূহুর্ত্যে কোন মেয়ে একটা স্বল্প পরিচয়ের ছেলেকে তার রিকশায় উঠার আমন্ত্রণ জানাবে এটা কেউ আশা করতে পারে না। ‘তোমার বাবা কেমন আছেন?’ ‘এখন অনেকটা সুস্থ। তবে ডাক্তার বলেছেন সপ্তাহখানেক হসপিটালে থাকতে হতে পারে।

’ একটুক্ষণ থেমে পারুল আবার বলল, ‘আপনি একটা সত্যি কথা বলবেন?’ ‘কি সত্যি কথা?’ ‘আপনি ঐদিন হসপিটালে কেন গিয়েছিলেন?’ এবার বোধহয় আর লুকাতে পারলাম না। বললাম, ‘সে তেমন কিছু না। হার্টের সমস্যা ছিল। সেরে গেছে। ’ ‘সত্যি বলছেন?’ চোখে চোখ রেখে পারুল বলল।

এই মেয়ে এমনভাবে কথা বলছে যেন আমি তার অনেক পরিচিত। বুকের কাছটায় খচ্ করে লাগে। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। বললাম, হ্যাঁ সত্যি বলছি। রিকশা কাটাবন পর্যন্ত চলে এসেছে।

পারুল বলল, ‘আপনি কবিতা লেখেন তাই না?’ তার কথা শুনে বুঝতে পারলাম শিমু আমার সম্পর্কে পারুলকে এসব কথা বলেছে। বললাম, ‘কে বলেছে? শিমু? তেমন কিছু না। এই একটু একটু চেষ্টা করি আর কি। ’ ‘হ্যাঁ শিমু বলেছে। আপনি কিন্তু অনেক ভাল লেখেন।

আমি আপনার কবিতা পত্রিকায় পড়েছি। তখন অবশ্য আপনাকে চিনতাম না। ’ একটুক্ষণ থেমে পারুল আবার বলল, ‘আপনি কি এখন বাসায় যাবেন?’ ‘হ্যাঁ বাসায় যাবো। ’ ‘আচ্ছা আপনার কি এখন বাসায় না গেলে খুব সমস্যা হবে? আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে। চলুন এখানটায় কিছু খাই।

’ আমি হেসে বললাম, ‘সত্যি বলতে কি তোমাকে এ কথাটাই আমি বলতে চাচ্ছিলাম। আমার পেটে শকুন ঢুকেছে। ’ পারুল হাসতে হাসতে বলল, ‘চলুন তবে। ’ রিকশা থামালাম সায়েন্সল্যাব-এ। তখনও তুমুল বৃষ্টি।

এভাবে যদি কালও বৃষ্টি হয় ঢাকা শহর তলিয়ে যাবে। আমরা একটা দেশী রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। এ দোকানে খুব ভাল পেয়াজি আর সিঙ্গারা হয়। পারুল আজ পরেছে একটা পাতা রঙের গাঢ় সবুজ শাড়ি। শাড়ি ছাড়া এ মেয়েকে অন্য কোন কাপড়ে এত ভাল লাগবে এটা বিশ্বাস করা যায় না।

নারী পুরুষের মধ্যে ভাল লাগার ব্যাপারগুলি সৃষ্টি হয় অন্যরকম কিছু বিষয় থেকে। পারুল কি শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু পরে না? অবশ্যই পরে। তবে এই বয়সের মেয়েরা উপলক্ষ ছাড়া শাড়ি বলতে গেলে পরেই না। কিন্তু পারুল যে পড়ে। তার শাড়ি পড়ার এই ব্যাপারটাই বোধহয় আমাকে এত বেশি আকৃষ্ট করছে।

দোকানের ভিতর গান বাজছে। আশ্চর্য এসব দোকানে রবীন্দ্র সংগীত বাজবে এটা অবিশ্বাস্য। “এমন দিনে তারে বলা যায়… এমন ঘন ঘোর বরিষায়… এমন দিনে মন খোলা যায়… এমন মেঘস্বরে বাদল ঝড় ঝরে তপন হীন ঘন তমশায়… এমন দিনে তারে বলা যায়…” পেয়াজি আর সিঙ্গারা চলে এসেছে। পারুলের হাতে তুলে দিলাম। হাত সরিয়ে আনতেই তার হাতের সাথে একটুখানি লেগে গেল।

মনে হল বিদ্যুতের শক্ খেলাম। ক্ষিদে পেটে খাবারের কথাই ভুলে গেছি। পারুল বলল, ‘কি ব্যাপার খাচ্ছেন না কেন?’ আমি বললাম, ‘ও হ্যাঁ খাচ্ছি। তুমি নাও। ’ খেতে খেতে পারুলের দিকে তাকালাম।

সে এতক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নিল। আমি বললাম, ‘আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে পারুল। ’ পারুল আমার চোখে চোখ রাখল। এদিকে দোকানের সিডিতে বাজছে “এমন দিনে তারে বলা যায়… এমন ঘন ঘোর বরিষায়… এমন দিনে মন খোলা যায়…” ****************** আজ রোববার।

টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে বাবার সাথে ডাক্তার কবির হোসেনের কাছে যাওয়ার দিন। এই শরীরে কি বয়ে বেড়াচ্ছি জানি না। আমি আমার রুমে চুপচাপ শুয়ে আছি চোখ বন্ধ করে। দরজায় নক। দরজা খোলা।

ফিরে দেখি শিমু। হাসি হাসি মুখে রুমে ঢুকে একটা চেয়ার টেনে বসল। ‘কি ভাইয়া ঘুমুচ্ছ নাকি?’ আমি বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বললাম, ‘আরে না এমনি শুয়ে আছি। ভাল লাগছে না। কবে এসেছিস্?’ ‘একটু আগে।

ভাল লাগবার তো কথা না। ’ এটা বলে শিমু মুখ চেপে হাসতে লাগল। ‘মানে কি?’ ‘মানে কিছুই না। পারুল একটা মেসেজ দিয়েছে। ’ শিমুর মুখে পারুলের কথা শুনে খুব লজ্জা লাগল।

জিজ্ঞাস না করেও পারলাম না, ‘কি মেসেজ?’ ‘বলছি বলছি। এত অধৈর্য হচ্ছ কেন?’ এটা বলে আবার মুখ চেপে হাসতে লাগল। ‘আমি কেন অধৈর্য হব?’ আমি অস্বস্তি কাটানোর চেষ্টা করলাম। ‘তুমিই ভাল জান। শোন আগামীকাল আমরা সাতজন বন্ধু-বান্ধব মিলে বান্দরবান যাচ্ছি।

তিন দিনের ট্রিপ। ’ শিমু দুষ্টুমি করে কথার ধরণ পাল্টাল। হাসতে হাসতে বলল, ‘পারুল ম্যাডামের খুব ইচ্ছা আপনিও যেন সেখানে যান। তিনি আপনার জন্য অপেক্ষা করবেন। সকাল নয়টায় চট্টগ্রামের ট্রেন।

তারপর চট্টগ্রাম থেকে বাস। ’ শিমু চলে যাওয়ার পর আবার শুয়ে পড়লাম। নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হল। হয়ত আমি এসবের যোগ্য নই। আমার বোধহয় সময় শেষ হয়ে এসেছে।

জানি না আমার পৃথিবী আর কদিনের। আমি আর বাবা ডাক্তার কবির হোসেনের রুমে বসে আছি। আমাদের বিপরীত পাশে বসে ডাক্তার মনোযোগ দিয়ে রিপোর্ট দেখছেন। রিপোর্ট দেখা শেষ করে তিনি আমাদের দিকে তাকালেন। বাবা বললেন, ‘কি ব্যাপার?’ ‘আপনার ছেলে এ যাত্রায় বেঁচে গেছে।

যা অনুমান করেছিলাম তা কিছুই হয়নি। রিপোর্ট একদম পরিষ্কার। ’ ডাক্তার দ্রুত বলে গেলেন। আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পারুলের কথা মনে পড়ল।

ইচ্ছে করছিল এক্ষুণি তার সাথে দেখা করি। বাবা চোখ থেকে চশমা খুলতে খুলতে বললেন, ‘আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব, ডাক্তার সাহেব। ’ ‘আমাকে ধন্যবাদ দেয়ার তো কিছু দেখছি না। আপনার ছেলে শেষ মূহুর্ত্যে হলেও সিগারেটটা ছাড়তে পেরেছে বলেই বেঁচে গেছে। একটা ব্যাপার কি জানেন? আমাদের দেশে যারা ধূমপায়ী তারা এটার ব্যাড এফেক্ট জেনেই ধূমপান করে।

যদিও তাদের দশ ভাগই কোন না কোন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ’ এটা শুনে বাবা একটু নড়েচড়ে বসলেন। ডাক্তার আমার দিকে তাকালেন। ‘আপনাকে আগে যে ঔষধ দিয়েছি তা টানা দু’মাস চালিয়ে নিতে হবে। এর সাথে আরো একটা ঔষধ লিখে দিচ্ছি।

’ এই বলে তিনি প্রেসক্রিপশন নোটবুকটা টেনে নিলেন। রাতে ব্যাগ ঘুচিয়ে ফেললাম। খুব ভালো ঘুম হল। সকালে ঘর থেকে বেরুতেই সাড়ে আটটা বেজে গেল। ট্রেন ধরা মুশকিল হয়ে যাবে ভেবে খুব টেনশন হচ্ছিল।

স্টেশনে পৌঁছে দেখি নয়টা পাঁচ বাজে। তড়িঘড়ি করে ফ্ল্যাটফর্মে ঢুকে গেলাম। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। চলতে শুরু করেছে। গতি বাড়ছে।

আমি ফ্ল্যাটফর্ম ধরে দৌড়াতে লাগলাম। দেখলাম ট্রেনের একটি জানালায় এক জোড়া চোখ, সে চোখে ভরসা হারানো দৃষ্টি। আমি দৌড়াতে দৌড়াতে ট্রেনের একটা দরজা ধরে উঠে গেলাম। সে সময় মনে হল সে চোখ জোড়া ভরসা খুঁজে পেয়েছে। (লেখাটি প্রকাশিত হয়েছেঃ ফেসবুক গ্রুপ "বাংলা কবিতা গল্প উপন্যাস" (বর্তমান নাম ইচ্ছে দেয়াল ) ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম সাহিত্য বিষয়ক ই-বুক প্রকাশ করে।

যার উদ্যোক্তা ছিল বন্ধু রায়হান, রনি পারভেজ এবং সাথে ছিলাম আমি। ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.