আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গুন্টার গ্রাসের সাক্ষাৎকার ( দ্বিতীয় পর্ব )

কবি

গুন্টার গ্রাস-এর সাক্ষাৎকার ( প্রথম পর্ব ) এলিজাবেথঃ আপনি কিভাবে 'ফিকশন' আর 'নন-ফিকশন' এর মধ্যে পার্থক্য করে থাকেন? গ্রাস : 'ফিকশন বনাম নন-ফিকশন' এই ধারণাটাই অর্থহীন, অপ্রয়োজনীয়। এটা বই বিক্রেতা প্রাতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। কারণ তারা শিল্পকে নানা ভাগে বিভক্ত করে কেজি দরে বিক্রি করে থাকে। কিন্তু আমি আমার বইয়ের এমন শ্রেণী বিভাজন করতে প্রস্তুত নই। আমার সব সময় মনে হয়েছে বই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা রকম সমিতি আছে যারা নির্দিষ্ট করে দেয় এটা ফিকশন আর ওটা নন-ফিকশন।

এলিজাবেথঃ ঠিক আছে। তবে আপনি যখন আপনার প্রবন্ধ নিবন্ধ আর ছোটগল্প বা উপন্যাস নিয়ে কাজ করেন থাকেন কখন নিশ্চয়ই আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করেন। তাহলে আপনি কিভাবে এদের পার্থক্য করে থাকেন? গ্রাস : হ্যাঁ, এরা পরস্পর থেকে অলাদা কারণ আমি সরাসরি ঘটনার গুলোর মুখোমুখি হই। একে আমি পরিবর্তন করকে পারি না। সাধারণত আমি আমার সাথে কোন ডায়রী রাখি না।

কিন্তু From the Dairy of a Snail লেখার জন্য সব সময় আমাকে একটা ডায়রী সাথে সাথে রাখতে হয়েছে। আমার মনে হয় ১৯৬৭ সালটা খুবই গুরত্বপূর্ণ একটা সাল আমার জন্য। তখন সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক পটভূমির একটা বিশাল পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হয়েছিলো। ১৯৬৯ এর মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ একটা সময় পথে পথে ক্যাম্পেইন করার সময় আমি একটা ডায়রী রেখেছিলাম নিজের সাথে। কলকাতাতে যখন গেছি তখনও একই কাজ করেছি।

আর সেই ডায়রীর একদিন From the Dairy of a Snail রূপান্তরিত হলো। এলিজাবেথঃ একদিকে রাজনীতি আর অপর দিকে আপনার লেখালেখি। এদুটো ভিন্ন বিষয়কে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করে থাকেন? গ্রাস : লেখক মানে নয় আত্মার গভীরতা সন্ধানী কোন বোদ্ধা। দৈনন্দিন জীবনের চাওয়া পাওয়ার সাথে সে সম্পর্কযুক্ত। আর আমার ক্ষেত্রে আমি বলবো লেখা-লেখি, চিত্রকলা আর রাজনীতি এই তিনটি বিষয় কে আলাদা আলাদা শখ হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

তবে প্রত্যেকটিরই আলাদা নিজস্ব গতি ও শক্তি আছে। আমি যে সমাজে বাস করি সে সমাজের কিছু কিছু বিষয় পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করি। আমার লেখালেখি বা ছবি সচেতন ভাবে বা অবচেতন ভাবে রাজনীতির সম্পৃক্ত। তবে আমার লেখার জন্য খুব পরিকল্পনা মাফিক আমি রাজনীতিকে টেনে আনতে প্রস্তুত নই। এমন এমন কোন গল্প লিখি না যা খুব সাদামাটা নির্দিষ্ট বাস্তব কোন রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত।

লেখা লেখি থেকে রাজনীতিকে বাদ দেওয়া প্রায় অসম্ভব কারণ আমাদের যাপিত জীবনের উপরই এর একটা বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। এটা জীবনের আশা ভরসাকে নানা দিক থেকে প্রভাবিত করতে পারে। এলিজাবেথঃ ইতিহাস, পদ্ধতি, গীতি-ভঙ্গিমা -- এমন বিচিত্র বিষয়কে আপানি একত্রিত করেছেন। গ্রাস : ... চিত্রকলা, কবিতা, সংলাপ, উদ্ধৃতি, বক্তব্য, চিঠি -- তুমি দেখবে যখন আমি পৌরাণিক ঢঙে কাজ করি কখন ভাষার যত রকম সক্রিয় রূপ আছে তাতো ব্যবহার করিই সাথে ভাষার নানা উপকরণ এর সাথে যুক্ত হয়। মনে করে দেখ আমার Cat and Mouse আর The Meeting At Telgte খুবই বিশুদ্ধ ফর্মে করা দুটি কাজ।

এলিজাবেথঃ আপনার শব্দ আর ছবি নিয়ে একত্রিত যে কাজগুলো আছে সেগুলো অনবদ্য। গ্রাস : ছবি আর লেখা এদুটো আমার কাজের প্রাথমিক উপাদান, তবে একমাত্র উপাদান বলা যাবে না। আমার যখন সময় থাকে তখন আমি ভাস্কর্য তৈরি করি। আমার ক্ষেত্রে চিত্রকলা আর লেখালেখি এদুটোর মধ্যে খুব দেওয়া নেওয়ার একটা সম্পর্ক আছে। কখনও কখনও এই সম্পর্ক খুব গভীর হয়ে ওঠে।

তবে কখনও কখনও দুর্বলও হতে পারে। গত কয়েক বছর আমি এদের মধ্যে গভীর একটা সম্পর্ক যে আছে তা অনুভব করছি। Show Your Tongue, এমনই একটা উদাহরণ, এটা আমি কলকাতাতে শুরু করি। ড্রয়িং ছাড়া এই বইয়ের অস্তিত্ত্ব ফুটিয়ে তোলা সম্ভব ছিলো না। কলকাতায় অবিশ্বাস্য দারিদ্রতা, ভাষায় একে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

একমাত্র ড্রয়িং একে ফুটিয়ে তুলেছে নর্দ্বিধায়। এলিজাবেথঃ এই বইটিতে শুধু কবিতাই ছাপা হয়নি, হাতের লেখাও ড্রয়িংয়ের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। এই হাতের লেখা শব্দগুলো কে কি আপনার ড্রয়িংয়ের অংশ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে? গ্রাস : কবিতার কিছু কিছু উপাদান এই ড্রয়িংগুলোর সাথে সরাসরি সংযুক্ত। কবিতা যখন আসা শুরু করে তখন আমি এই ড্রয়িংগুলোর উপর তা লিথতে শুরু করি। ড্রয়িং আর কবিতা একসাথে মিশে এশাকার হয়ে যায়।

যদি তুমি ড্রুয়িংয়ের ভেতরের লেখাগুলো পড়তে পারো তবে ভালো, কেননা তা লেখা হয়েছে পড়তে পারার জন্যই। ড্রয়িংগুলো সাধারণত এঁকে থাকি প্রথম খসড়া তৈরির আগে টাইপরাইটারে বসার আগে। এর কারণ অবশ্য জানা নেই। এই বইটা কলকাতা বিষয়ক। আমি সেখানে দুই বার গিয়েছি।

Show Your Tongue শুরু করার বারো বছর আগে একবার গিয়েছিলাম। সেটাই প্রথম ভারত ভ্রমণ। মাত্র কয়েকদিন কলকাতায় ছিলাম। আমি ফেরার সময় খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তখনই ইচ্ছা ছিলো সেখানে আবার যাবো, দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে থাকবো, অনেক কিছু দেখবো আর লিখবো।

এশিয়া-আফ্রিকার অনেক দেশে আমি গিয়েছি -- কিন্তু যখনই আমি হংকং, ম্যানিলা বা জাকার্তার বস্তিগুলো দেখি, তখন আমার কলকাতার কথা মনে পড়ে। প্রথম বিশ্বের সমস্যা তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে এভাবে মিশে একাকার হয়ে আছে -- এমন দৃশ্য আমি পৃথিবীর কোথাও দেখিনি। তাই আমি আবার কলকাতায় ফিরে গেলাম। আর আমি আমার ভাষা দক্ষতা হারিয়ে ফেললাম। আমি একটা অক্ষরও লিখতে পারিনি।

সেই মুহূর্তে ড্রয়িং খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো আমার কাছে। ভারতের বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলার অন্য রকম প্রচেষ্টা ছিলো এটা। এই ড্রয়িংগুলোর সাহায্যে আমি আমার গদ্য লেখার শক্তি পুনরায় ফিরে পেতে থাকলাম। এটাই হলো এই বইয়ের প্রথম অংশ, খানিকটা নিবন্ধের মত। এরপর তৃতীয় অংশ -- বারো ভাগে বিভক্ত একটা দীর্ঘ কবিতা।

এটা ছিলো কলকাতা বিষয়ক একটা নাগরিক কবিতা। তুমি যদি নাগরিক গদ্য, পদ্য আর ড্রয়িংগুলো দেখো তবে দেখবে এর সব কয়টিই কলকাতা বিষয়ক। তবে তারা পরস্পরের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে যুক্ত। এদের মধ্যে এক রকম গোপন কথোপোকথন আছে, তবে ব্যাপারটা বেশ একটু জটিল। (চলবে...)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.