আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দগ্ধ

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

তাৎক্ষণিক উদ্ভাবন প্রস্তাবিত নাম : দগ্ধ পরিকল্পনা : লুসি তৃপ্তি গোমেজ পরিচালনা : পরিতোষ সাহা অনুসৃজন ও অনুলিখন : শাহজাহান শামীম একটি তীব্র গোঙানির মধ্য দিয়ে একদল হিংস্র প্রাণী আসে। তারা পরস্পরকে আক্রমণ করে ও আক্রান্ত হয় । তাদের মধ্যে চলে পরস্পরকে খাওয়ার প্রতিযোগিতা। কে কাকে কত আগে খেতে পারে তা নিয়ে চলে তীব্র দ্বন্দ্ব। এক সময় বোঝা যায় এটা আসলে একটা বাজার।

বাজারের স্বাভাবিক সোরগোল ও হাকাহাকি চলছে। চারজন দোকানী চারদিকে বসে। একজন তরকারী বিক্রেতা, একজন মাছ বিক্রেতা, একজন চাল বিক্রেতা ও একজন মুদি দোকানী। তাদের দোকানে যথারীতি ক্রেতা আসে। ক্রেতার সাথে চলে দামদর।

ক্রেতা ১ : লাল শাক কত কেজি ? তরকারী বিক্রেতা : ১৬ টাকা কেজি ? ক্রেতা ১ : কন কি ? দুই দিন আগে না কইলেন ১০ট্যাকা কেজি ? তরকারী বিক্রেতা : দুই দিন আগের কথা ভুইল্যা যান। লইলে লন, না লইলে সরেন। অন্যদিকে মাছ বিক্রেতার সাথেও দরদাম চলে। মাছ বিক্রেতা : মাছ কি আমরা বানাই। আড়ত থিকা আনি।

যেই দামে আনি তার থিকা লাভ না করলে খামু কী ? ক্রেতা : তাই বইলা এত দাম ? মাছ বিক্রেতা : দাম কি আমি বানাইছি ? আর এদিকে চালের দোকানে চলছে তর্ক। ক্রেতা : এইটা কোন কথা হইল, আপনেরা যা খুশি তা দাম রাখবেন ? চাল বিক্রেতা : বাজারে দাম বাড়লে আমাগো কি করার আছে ? ক্রেতা : তাই বইলা এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিগুণ হয়া যাইব ? দেশে কি কোন আইন কানুন নাই ? চাল বিক্রেতা : ভাইরে, এত প্যাচাল পাইরেন না, দরকার থাকলে নেন, না থাকলে অন্য কোনখানে যান। মুদি দোকানেও তর্ক থেমে নেই। মুদি : আমরা দাম বাড়াইতে চাই না। যারা দাম বাড়ায় তাগো গিয়া ধরেন।

ক্রেতা : কারা দাম বাড়ায় ? মুদি : যারা মাল স্টক করে, যারা মাল আমদানি করে। ক্রেতা : বাজারে তো দেখা যায় আগুন লাইগা গেছে। কোরাস : আগুন, আগুন, বাজারে আগুন। আগুন, আগুন, বাজারে আগুন। আগুন, আগুন, বাজারে আগুন।

বাজারের আগুনে পুড়ে মরছে সাধারণ মানুষ। তাদের আয়ে সংসার চলে না। ক্ষেতে কাজ করে ফসল উৎপাদন করে যারা, তারাই খাবারের অভাবে ভোগে সবার চেয়ে বেশি। কৃষক মাঠে কাজ করে বাড়ি ফেরে। তারা দুই ভাই।

তারা ুধায় অস্থির হয়ে বাড়ি ফেরে। বাড়ির উঠোনে তখন খেলছিল তাদের ছোট ভাই বোন। বাড়ি ফিরে তারা ভাইবোনেরা খেতে বসে। তাদের মা তাদের জন্য শুধু ভাত ছাড়া আর কিছুই রাঁধতে পারেনি। ভাতের সাথে লবণ আর কাঁচা মরিচ দিয়ে খেতে হয় তাদের।

বোন : মা, শুধু ভাত কি প্রতিদিন খাওয়া যায় ? মা : কী করমু ? তর বড় দুই ভাই যা আইন্যা দেয়, তা-ই রানধি। আমারে আইন্যা না দিলে পামু কই ? বোন : ভাইজান, মারে বাজার কইরা দিতে পার না ? বড় ভাই : বাজার তো করি বইন। জিনিসপত্রের যেই দাম, চাউল কিনতেই সব ট্যাকা শেষ হয়া যায়। বোন : আরও বেশি কইরা কামাই করতে পার না ? মেজ ভাই : আমরা তো বেশি কামাই করতেই চাই। কিন্তু মাইনসে আমাগো কম মজুরি দিলে আমরা কী করমু ? ছোট ভাই : কিন্তু এমনে কইরা আর কয় দিন চলব ? আমরা কি না খায়া মইরা যামু ? বড় ভাই : মা, আমাগো বাড়ির সামনে যে বড় গাছগুলি আছে, কাইট্যা ফালাই।

ভালো দাম পামু। ধার কর্জ শোধ না করলে যে আর বাঁচি না। মেজ ভাই : হ। পরে গাছ লাগায়া নিলেই হইব। মা : তর বাপে বড় শখ কইরা লাগাইছিল এই গাছ।

এই গাছ বেইচ্যা খাইতে হইব এই কথা সে কোনদিনও ভাবে নাই। বড় ভাই : আপাতত দুইটা গাছ বেইচ্যা ধার কর্জ গুলি শোধ করি। মা : (হতাশ) কর, তর বাপের গাছগুলি আর মনে হয় থাকব না। তারা খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ে। পরের দিন তারা লোক লাগিয়ে সবগুলো গাছ কেটে ফেলে।

মা তাদের গাছ কাটা দেখে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর একদিন গাছ বেচা টাকাও শেষ হয়ে যায়। চোখে অন্ধকার দেখে তারা। মা : অহন , অহন কী খাবি তরা ? আর তো গাছও নাই। বড় ভাই : মা, অরা কই ? মা : ছোট দুইডারে কামে দিছি।

আর তো সংসার চলে না। মেজ ভাই : তাই বইলা অগো রে কামে দিবা ? অরা তো ছোট। মা : আমিও চেয়ারম্যান সাবের বাড়িত কাম নিছি। বড় ভাই : মা, এই কাম কইর না। মা : বড় কথা কইস না।

কামাই তো করতে পারস না। তগো আশায় থাকলে না খায়া থাকন লাগব। শোন, তরা এই গেরাম ছাইড়া যা গা । শুনছি শহরে কাম করলে অনেক ট্যাকা পাওয়া যায়। মেজ ভাই : কই যামু, আমরা কি শহর চিনি ? মা : জানি না, শুধু জানি আর তগো ভাত দিতে পারুম না।

না গেলে থাক না খায়া। যা এুণি চইলা যা। যা। তারা দুই ভাই মন খারাপ করে শহরে দিকে রওয়ানা হয়। পরের দিন এসে পৌঁছে ঢাকা শহরে।

বাসের চড়ে বসে তারা আরও অনেক যাত্রীর সাথে। যাত্রী ০১ : (পত্রিকা পড়তে পড়তে) শুনছেন নাকি আনিস ভাই, র‌্যাংগস ভবন শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গছে। রাস্তা হবে ওই জায়গায়। রাস্তা হলে তো ভালই হয় , কী বলেন ? যাত্রী ০২ : ভালো হলেই ভালো। আমাদের দেশে সব ভালো কাজেই শেষ পর্যন্ত আর ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না।

বাসের হেলপার ভাড়া তোলে। তাদের দুই ভাইয়ের কাছে কোন টাকা নেই। বাস ভাড়া না থাকায় তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয় বাসের হেলপার। তারা দুই ভাই অচেনা শহরে নেমে অসহায় বোধ করে। তারা ভয়ে ভয়ে ফুটপাত ঘেষে একটা খালি জায়গায় পৌঁছে।

মেজ ভাই : ভাইজান, এইডা কই নিয়া আইলা। এইখানে তো কিছুই চিনি না আমরা। বড় ভাই : ঘাবড়াইস না। আইছি যহন, একটা না একটা ব্যবস্তা হইবই। মেজ ভাই : কোন কাম পামু কই ? বড় ভাই : পামু, এত মাইনসে যহন কাম পাইছে আমরাও পামু।

তাদের পাশে একটি ফুটপাতের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে চার নির্মাণ শ্রমিক। হঠাৎ তাদের একজনের চোখ যায় দুই ভাইয়ের দিকে। শ্রমিক ০১ : ওই ধোড় দুইটারে দেখ। শ্রমিক ০২ : দ্যাখ, কেমন আবুলের লাহান চায়া রইসে। শ্রমিক ০১ : চল, শালাগো একটু খেল দেহায়া আহি।

তারা তিনজন তাদের দুই ভাইকে ঘিরে ধরে। দুই ভাই ভয় পেয়ে যায়। শ্রমিক ০১ : কি আবুল , কই থিকা আইলি ? মেজ ভাই : আমার নাম আবুল না। শ্রমিক ০২ : ওই হইল, তগো সবার নাম আবুল। লঞ্চের পাছা ধইরা আইচস না ? বড় ভাই : আমরা বাসে আইছি।

শ্রমিক ০৩ : ও তরা তাইলে মফিজ। শ্রমিক ০১ : কী কাম করছ ? চুরি না ছিনতাই ? মেজ ভাই : আমরা চোর না। শ্রমিক ০১ : তরা ভালো মানুষ ? চেহারা তো চোরের লাগান। তিন শ্রমিক হো হো করে হাসে আর ওদের বিরক্ত করতে থাকে। অন্য শ্রমিকও চায়ের দোকান থেকে উঠে আসে।

বোঝা যায়, সে এই দলটির নেতা। শ্রমিক ০৪ : এই এহেনে কী হইছে ? গ্যাঞ্জাম কিয়ের ? বড় ভাই : উনি কয় , আমরা নাকি চোর। শ্রমিক ০৪ : তাই নাকি , তা কী চুরি করছস ? মেজ ভাই : আমরা চোর না। এহেনে আইছি একটা কামের লিগা। শ্রমিক ০৪ : কাম ? কী কাম ? বড় ভাই : যে কোন কাম।

শ্রমিক ০১ : (শ্রমিক Ñ০৪ কে) বস, আমারে না কইছিলেন, একটা লোক পাইলে ছুটি দিবেন। অরে রাইখ্যা আমারে ছুটি দেন। শ্রমিক ০২ : আমারে না কইছিলেন ছুটি দিবেন। শ্রমিক ০১ : (শ্রমিক Ñ০২ কে) আমি সব সময় দেখছি, আমি ছুটি চাইলেই তুইও ছুটি চাস। শ্রমিক ০২ : অরা তো দুইজন।

শ্রমিক ০১ : অগো মনে করেন, একটু কম ট্যাকা পয়সা দিবেন, বাকি ট্যাকা .... শ্রমিক ০৪ : দাড়া আগে অগো লগে কতা কইতে দে। বিল্ডিং ভাঙ্গনের কাম। পারবি তরা। বড় ভাই : পারমু। মেজ ভাই : না পারলে দেহায়া দিবেন।

শ্রমিক ০৪ : ট্যাকা পয়সা কম পাবি, কাম শিখলে বাড়ায়া দিমু নে। বড় ভাই : আমাগো খাওন পাইলেই হইব। ওরা দুই ভাই বিল্ডিং ভাঙ্গার কাজে লেগে যায়। ঢাকার বিখ্যাত র‌্যাংগস ভবন। তারপর একদিন অসতর্ক মুহূর্তে বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে মারা যায় ছোট ভাই।

বড় ভাই আহাজারি করে। ওদিকে ছোটভাইয়ের লাশ আটকে থাকে দালানের ভেতর। এক সময় তার লাশ কাক শকুনে খায়। যখন লাশ বের করা হয়, তখন সেটা লাশ নয় হয়ে গেছে মানুষের কংকাল, পঁচা কংকাল। সমাপ্ত।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।