বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাহবাগে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ মানুষগুলোর বীভৎসতা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ভয়াবহতাকেও হার মানিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক, নার্স এবং অন্য দুর্ঘটনায় দগ্ধ রোগী ও তাঁদের স্বজনদের মুখে মুখে এখন শাহবাগের বীভৎসতার কথা।
ওই ঘটনায় দগ্ধ ১৯ জনের মধ্যে মারা গেছেন ছাত্র নাহিদ মোড়ল ও পোশাককর্মী রবিন মাতবর। একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। গতকাল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে খুদে সাংবাদিক সুস্মিতা সেনকে।
বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে ১৪ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাঁদের সুচিকিৎসার জন্যও নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসাধীন ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জনের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কাউকেই আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।
চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ’
বার্ন ইউনিটের দোতলা ও চারতলায় রাখা হয়েছে দগ্ধ ব্যক্তিদের। দোতলার একটি কক্ষে গিয়ে দেখা গেল কিছু দগ্ধ ও বীভৎস মুখ। হাঁপাচ্ছেন কেউ কেউ।
কেউ কুঁকড়ে উঠছেন যন্ত্রণায়, জ্বালাপোড়ায়। সবার চোখ বন্ধ। স্বজনেরা হাঁ করতে বললেই মুখ খুলে দিচ্ছেন কেউ কেউ। আর হাঁ-মুখে খাবার পুড়ে দিচ্ছেন স্বজনেরা।
আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে রিয়াজ হোসেনের মুখে খাবার পুরে দিচ্ছেন মা আয়েশা খাতুন।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জেই রিয়াজের বাড়ি। সদরঘাটে চুমকি-পুঁতির দোকানে চাকরি করেন। মায়ের জন্য কিছু জিনিসপত্র কিনতে সেই দিন বাসযোগে কারওয়ান বাজারে যাচ্ছিলেন রিয়াজ।
আয়েশা বললেন, রিয়াজের বাবা খলিলুর রহমান চলাফেরা করতে পারেন না। পাঁচ সন্তানের পরিবার তাঁর।
রিয়াজই তাঁদের সম্বল।
শরীরের জ্বালাপোড়ায় কোনো স্বস্তি পাচ্ছেন না স্যানিটারি ব্যবসায়ী আবু তালহা। একবার বসছেন, একবার শুয়ে পড়ছেন। পাশের বেডে আছেন মাহবুব আলম। বাসের চালক।
চোখ বন্ধ অবস্থায় বললেন, ‘আমি দেখছি, দুইডা পোলা আইল্যান্ডে দাঁড়াইয়া বাসের সামনে কী একটা যেন ছুইড়া মারছে। ’
কাপড় দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুমা আক্তারের দুই হাত। দগ্ধ মুখ। মুখের দিকে অসহায় দৃষ্টি স্বামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবুর রহমানের।
ভাই মো. রাহাজুলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে কী যেন ভাবছিলেন রাকিব।
কাছে গিয়ে ‘এখন কী অবস্থা’ বলতেই ইশারায় উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলেন তিনি। চিকিৎসক বলেছেন, রাহাজুল যেন কথা না বলেন।
আইসিইউতে রাখা হয়েছে ঢাকা কলেজের ছাত্র ওহিদুর রহমান, সরকারি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম মৃধা ও এএসআই নূরুন্নবীকে।
গতকাল দুপুর ১২টায় বার্ন ইউনিট থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় খুদে সাংবাদিক সুস্মিতা সেনকে।
চারতলায় গিয়ে কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, দোকানের কর্মচারী মো. শামীম ও আমজাদ হোসেনের স্বজনদের সঙ্গে।
দগ্ধ এ তিনজন যন্ত্রণায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। স্বজনেরা জানালেন, আতঙ্কে ভুগছেন তাঁরা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।