আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিনের উস্কানি অব্যাহত

নিজে পড়ুন অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন।

ইরানের ওপর একটি অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে মার্কিন প্রশাসনের অব্যাহত তৎপরতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ ইরানকে যুদ্ধের উস্কানিদাতা বলে উল্টো অভিযোগ এনেছে মার্কিন প্রশাসন। রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ তার সা¤প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় আরব রাষ্ট্রপ্রধানদের আহ্বান জানিয়েছেন যে, ইরানের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে তারা যেন মার্কিনের পাশে এসে দাঁড়ায়। বুশ তার এসব ধামাধরা আরব নেতৃবৃন্দকে বলেন, বেশি দেরি হয়ে যাবার আগে ইরানের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার এটাই উপযুক্ত সময়।

রাষ্ট্রপতি বুশ মূলত এবার হরমুজ প্রণালীকে ঘিরে রচিত কল্পকাহিনীকে সামনে তুলে ধরেন। এ কল্পকাহিনীর মূল কথা হলো, আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে ইরানি নৌসেনারা নাকি হরমুজ প্রণালীতে অবস্থানরত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ উড়িয়ে দেবার হুমকি দিয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের ভাষ্যমতে, ‘গত ৭ জানুয়ারি ইরানের হরমুজ প্রণালীর আন্তর্জাতিক নৌসীমায় টহলরত মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের নাবিকদের জাহাজসমেত উড়িয়ে দেবার হুমকি দিয়েছে ইরানি নৌবাহিনীর জওয়ানরা। এ উদ্দেশ্যে পাঁচটি সশস্ত্র ইরানি স্পিডবোটও নাকি মার্কিন যুদ্ধজাহাজের কাছাকাছি চলে এসেছিল। ’ মার্কিনের ভাষায় ইরানির নৌবাহিনী এ আক্রমনাত্মক অবস্থান ৩০ মিনিটেরও বেশি স্থায়ী হয়েছিল।

এবং অবশেষে কোনো প্রকার গোলাগুলি বিনিময় ছাড়াই এ মারমুখী অবস্থার অবসান ঘটে। ইরানকে যুদ্ধবাজ ও সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণ করার দলিল হিসেবে মার্কিন সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন কর্পোরেট মিডিয়া এ ঘটনার একটি ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করে। যাদে দেখানো হয়, ইরানি নৌবাহিনীর সদস্যরা কি ভাষায় মার্কিন সেনাদের হুমকি প্রদান করেছে। এই ভিডিও ছাড়াও বিভিন্ন পশ্চিমা কর্পোরেট মিডিয়া এ ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি অডিও ফাইলও প্রচার করে। যাতে ইরানি নৌসেনাদের উস্কানিমূলক উক্তি ধারণ করা হয়েছে বলে এসব মিডিয়া প্রচার করে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বুশ প্রশাসনের মদদে এ ধরনের সাজানো সংবাদ পরিবেশনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সত্য ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু করে। হাটে হাড়ি ভাঙে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই বহুল প্রচারিত কাগজ নিউইয়র্ক টাইমস। টাইমস্ এ সংক্রান্ত তাদের এক প্রতিবেদনে লিখে ‘পরিস্কার ইংরেজিতে উচ্চারিত ইরানি নৌসেনারা টহলরত অবস্থায় তাদের স্পিডবোট থেকে এ হুমকি দিয়েছে। কিন্তু ধারনকৃত অডিও রেকর্ডে তাদের কথাবার্তার মাঝখানে কোনো পারিপার্শ্বিক শব্দ অর্থাৎ সমুদ্রের ঢেউ, বাতাস কিংবা ইঞ্জিনের শব্দের উপস্থিতি নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে ইরানি নৌসেনারা যদি তাদের স্পিডবোট থেকে ওয়্যারলেস-এ হুমকি দিয়ে থাকে তাহলে এসব আশপাশের শব্দের উপস্থিতি রেকর্ডে থাকাই স্বাভাবিক।

এরকমই স্ববিরোধী অবস্থানের কথা তুলে ধরে বেশ কিছু পশ্চিমা মিডিয়া মার্কিনের প্রচারিত ভিডিও চিত্র সম্পর্কে বলেছে, এতে আলাদাভাবে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ চলাচলের ভিডিও চিত্রের সাথে বানোয়াট অডিও ক্লিপ জুড়ে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা ইন্টার প্রেস সার্ভিস। সংস্থার প্রতিবেদক গারেথ পোর্টার তার এক প্রতিবেদনে মার্কিন পঞ্চম নৌবহরের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন, প্রকৃতপক্ষে মার্কিন নৌসেনারা ইরানের পক্ষ থেকে এ-রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যেই পড়েনি। মার্কিনের এ মিথ্যা প্রচারণার সর্বশেষ প্রমাণ হলো, ইরানের পক্ষ থেকে প্রচারিত একটি সা¤প্রতিক ভিডিও চিত্র। যাতে দেখা গেছে, হরমুজ প্রণালীতে ইরানি নৌবাহিনীর স্পিডবোট থেকে একজন ইরানি নৌসেনা এসব মার্কিন যুদ্ধজাহাজের নাবিকদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।

মার্কিনের এসব মিথ্যাচার নানাভাবে প্রমাণ হবার পরও রাষ্ট্রপতি বুশ দফায় দফায় বলে চলেছেন, ইরানি স্পিডবোটগুলো মার্কিন জাহাজকে নিশ্চিত আক্রমণের উদ্দেশ্যেই এসেছিল। বুশের এ বক্তব্যকে বাস্তব ভিত্তি দেয়ার জন্য পেন্টাগনের মুখপাত্র ব্রায়ান হুইটম্যান বলেছেন, এ স্পিডবোটগুলো এমনভাবে অস্ত্রসজ্জিত ছিলো যা সত্যিই উস্কানিমূলক। কিন্তু পেন্টাগনের এ মুখপাত্র যে তথ্যটি দিতে ভুলে গেছেন তাহলো, এসব টহল স্পিডবোটে সাধারণ তিন-চার জনের বেশি নাবিক থাকে না, আর অস্ত্র বলতে থাকে শুধু মেশিন গান। যা দিয়ে কখনোই একটি বড় যুদ্ধ জাহাজকে উড়িয়ে দেয়া সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছিলো মার্কিন নৌবাহিনীর ভাইস এডমিরাল কেভিন কমগ্রিফকে।

প্রশ্ন করা হয়েছিলো, এসব ইরানি স্পিডবোটে জাহাজ বিধ্বংসী মিসাইল কিংবা টর্পেডো ছিল কিনা। উত্তরে এডমিরাল কেভিন জানান, এর কোনোটাই ইরানি বোটগুলোতে ছিল না। এমনিভাবেই একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রচার করেছে বুশ প্রশাসন ও তাদের নিয়ন্ত্রিত কর্পোরেট মিডিয়া জগত। যে মিথ্যা প্রচারণা এখনো সমান তালে অব্যাহত রয়েছে। যার অংশ হিসেবে সারা দুনিয়ায় যুদ্ধের বিভীষিকা সৃষ্টিকারী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আজ যুদ্ধের উস্কানিদাতা বলে ইরানকে অভিযুক্ত করছে।

এমন কি মার্কিনের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হলে এর জন্য দায়ী থাকবে ইরান। পরমাণু অস্ত্র তৈরির বানোয়াট অভিযোগে ইরানের বিরুদ্ধে ক্রমাগত উস্কানিমূলক আচরণ করেছে প্রধানত মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু এর বিপরীতে ইরান ধৈর্য্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বিশ্ব জনমতের দ্বারস্থও হয়েছে ইরান। ইরানের পক্ষে আজ সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশ্বজনমত থাকার পরও মার্কিনের বেপরোয়া আচরণের কমতি নেই।

ফলে ইরানি উপকূলে মার্কিন রণতরী হাজির হবার পরও উল্টো ইরানিকেই যুদ্ধের উস্কানিদাতা বলে গালাগাল শুনতে হচ্ছে। ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু ইস্যুকে কেন্দ্র করে মার্কিনের চরম কূটনৈতিক পরাজয়ের পর বুশ প্রশাসন এবার হরমুজ প্রণালীর ইস্যুকে শেষ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিন্তু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এ চক্রান্তও শেষ পর্যন্ত ধোপে টিকলো না। ইরাক যুদ্ধ পরবর্তীকালে মার্কিন অর্থনীতিতে যে চরম মন্দা দেখা দিয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধের মাধ্যমেই এ মন্দা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজছে বুশ প্রশাসন। হরমুজ প্রণালীর মার্কিনী কল্পকাহিনী তারই ইঙ্গিত বহন করে।

-------------------------- লেখকঃ হাসান তারিক চৌধুরী

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.