চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)
কয়েকদিন ধরে দারুন কুফা টাইম কাটাচ্ছি। দিনকাল বিশেষ ভালো যাচ্ছে না।
একদম সর্বশেষ বাজে খবর হলো আমাকে এইবার একটা কোর্স রি-টেক করতে হচ্ছে। তারমানে আবার ক্লাস, ক্লাসটেস্ট, পি.এল. এবং সবশেষে টার্ম ফাইনাল!! এই কোর্স টাও আবার আগের কোর্স থেকে আলাদা, কারণ সিলেবাস পাল্টে গেছে। তার মানে একদম নতুন করে একটা জিনিস পড়া লাগবে।
মানসিকভাবে আমি মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলাম যে এইবার পড়াশোনার পাট চুকে যাচ্ছে। এখন আবার শুরু করতে হবে। আরও সমস্যা হলো আমাকে এই কোর্সটা দুই ব্যাচ জুনিয়রদের সাথে নিতে হচ্ছে। যাই হোক, ভিক্ষার চাল কাঁড়া আর আকাঁড়া!
এর উপর আরেক বিপদ বাঁধিয়ে বসেছি, গতকাল সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে শাহবাগের মোড়ে মিশুকে উঠেই ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়লাম। দুইপাশ থেকে ৪ কি ৫ জন চেপে ধরলো।
ডান পকেটে মোবাইল আর বাম হাতের ঘড়ি ছিনিয়ে নিয়েই ভো-কাট্টা। আমার অতি সাধের নকিয়া এন৭০, ঘড়িটাও অনেক দামী ছিল, বাইরে থেকে ফুপি উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছিল। দুটোই গেল!
দুঃখে শোকে আমার পাথর হবার দশা!! কীই বা করার আছে এর পরে??
ফিরে আসতে আসতে গতবছরের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমার খুব ছোটবেলার এক বন্ধু গত বছর ছিনতাইকারীদের হাতে মারা গেছে। ধানমন্ডিতে একটা ব্যাঙ্ক থেকে টাকা নিয়ে বেরোনোর পথে ফুটপাতেই ছিনতাইকারী ধরেছিল।
ছেলেটা প্রায় ৬ ফুট লম্বা, দারুন তেজী আর প্রাণবন্ত মানুষ। হাতাহাতির এক পর্যায়ে কানের নিচে ওরা গুলি করে দেয়। ঐ খানেই মারা যায় আমার বন্ধু। সেদিন সন্ধ্যা থেকেই নিউজে দেখাচ্ছিল ওর মারা যাবার খবরটা। আমি প্রথম শুনে এত ভয়ংকরভাবে চমকে গেছিলাম যে কিছুক্ষণ কথাই বলতে পারিনাই।
বুকের মধ্যে একটা অদ্ভুত মোচড়ানো কষ্ট হচ্ছিলো। মাত্রই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছিলো ও, যে টাকাটা তুলছিল বাইরে ভর্তির টাকা সেটা, কদিন পরেই বিদেশ যেত মাস্টার্স করতে। এ কী ধরনের অন্যায়! ওর জানাজায় যাবার মতো সাহস আমার ছিল না, এমনিতেই আমি এরকম শোক সহ্য করতে পারি না। ওর মায়ের কষ্ট দেখার মতো শক্তি আমার মাঝে ছিল না। কতগুলো অবর্ণনীয় প্রশ্ন কুরে কুরে খাচ্ছিলো আমাকে।
কী হতো যদি ও হাতাহাতি না করতো। চুপচাপ দিয়ে দিলে ওরা হয়তো ওকে মারতো না, হয়তো ও আজও বেচেঁ থাকতো! একটা মেয়েকে পছন্দ করতো ও। আমি চিনতাম একসাথে ক্লাস করার সুবাদে। একদিন বিগ বাইটে খেতে গিয়ে ওর সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল, গার্লফ্রেণ্ড সহ। অনেকক্ষণ গল্প করেছিলাম ঐদিন।
ওদের বিয়ে হবার কথা ছিল! এই বেদনা একজন মানুষ কীভাবে সহ্য করে?
এসব দেখলে শুনলে মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা যতই আইন করি আর বিচার করে শাস্তি দেই না কেন, এই অন্যায় আর কষ্ট আমাদের মাঝ থেকে কোনদিনই দূর হবে না। কারণ গলদ আসলে আমাদের মধ্যেই। আমরা নিজেরাই নিজেদের এভাবে করে মেরে কেটে শেষ করে দিচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।