নক্ষত্রের রাত
আগামী ১৫ মাস পর ২০০৮-এর ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে চলমান কর্মকাণ্ডে খুব একটা আস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি জনমানসে। তারপরও মানুষ প্রত্যাশা করে সরকার ঘোষিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
এ ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর উদ্বিগ্নতার মধ্যেই পুত্র আরাফাত রহমান কোকোসহ গ্রেপ্তার হলেন বেগম জিয়া। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা যে জিয়াউর রহমান, সেই জিয়া পরিবারের তিন সদস্যÑ স্ত্রী বেগম জিয়া ও দুই পুত্র এখন চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার।
সৎ জিয়ার রাজনৈতিক ইমেজ বিলুপ্ত করে দিয়ে জিয়া পরিবার এখন দুর্নীতির অভিযোগে কাঠগড়ায়। যদিও বেগম জিয়া মাত্র কদিন আগে টেলিকনফারেন্সে পুত্র তারেক জিয়াকে নির্দোষ, সংস্কারের মূলপুরুষ এবং দুর্নীতিহীন মানুষ বলেই দাবি করেছেন। গ্রেপ্তারের পর আদালতেও বলেছেন, দেশের বাইরে যাবার চাপ উপেক্ষা করেছেন বলেই আজ তার এই দশা। তিনি ও তার পরিবার ষড়যন্ত্রের শিকার।
২.
ওয়ান ইলেভেনের অপ্রত্যাশিত ঘটনার পর মানুষের প্রত্যাশা ছিলÑ ১. দুর্নীতিবাজদের বিচার নিশ্চিত হওয়া, ২. গণতান্ত্রিক পথে উত্তরণের জন্য একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা।
সরকার মানুষের এই প্রত্যাশা উতরে নিজেদের সফল করতে নানা উদ্যোগ নেয়। এই সরকারের আমলেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে ফেরদৌস আহমদ কোরেশীরা উজ্জ্বল হন রাজনীতির মাঠে। ড. কামাল হোসেন তার ১৪ দলীয় মিত্র ছেড়ে একাকী সরকারের পরামর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। রাজনীতির মাঠে আওয়াজ উঠতে থাকে ‘সংস্কারের’। এই নতুন আওয়াজে আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে বইতে থাকে নতুন ধারা।
গ্রেপ্তার হন শেখ হাসিনা। অবশেষে ৭ মাস পর অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সরকার গ্রেপ্তার করেন বেগম জিয়াকে।
৩.
আওয়ামী লীগে সংস্কারপন্থীদের চার নেতার মধ্যে এখন প্রকাশ্যে সক্রিয় আমির হোসেন আমু। রাজ্জাক, তোফায়েল কিছুটা নিশ্চুপ। কানাডায় নিরাপদ জীবনে আছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
সংস্কারবাদীদের প্রাণপুরুষ হিসেবে স¤প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন আমির হোসেন আমু। আমুর বক্তব্য, শেখ হাসিনা ছাড়াও চলতে পারে দল। ঘরোয়া রাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠানো ছাড়াও চলতে পারে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ। আমির হোসেন আমুর এই বক্তব্যের পরপরই একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন।
অন্যদিকে আমুর বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান।
শেখ হাসিনাকে জেলে রেখে
নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। আমু-জিল্লুরের এই বক্তব্য প্রমাণ করে আওয়ামী লীগে একটা চিঁড় বা বিভাজন এখন সুস্পষ্ট। রাজ্জাক-তোফায়েল-সুরঞ্জিত মাঠে সক্রিয় না থাকলেও আমুর বক্তব্যের পেছনে যে তারাই আছেন তাও সুস্পষ্ট। শেখ হাসিনার জেল নিশ্চিত হলে এই সংস্কারবাদীরা হয়তো আরও সক্রিয় হয়ে উঠবেন। প্রথমদিকে সংস্কারবাদীদের তৎপরতা চোখে পড়লেও মাঝখানে অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে যান।
হঠাৎ দেশে ফিরে আসা আমুর সক্রিয়তার ফলে এই তৎপরতা হয়তো আরো বাড়বে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আওয়ামী লীগে সংস্কারবাদীদের সাফল্যের সম্ভাবনা কতটুকু? শেখ হাসিনাকে মাইনাস করে এবং দলের অভিযুক্ত নেতাদের জেলহাজত নিশ্চিত করে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কতটুকু সফল হতে পারবেন ‘সংস্কারবাদীরা’? এ েেত্র কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন উঠছে। প্রথমত, শেখ হাসিনা ছাড়াও অন্য নেতারা যদি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষিত হনÑ তবে তোফায়েল, আমু, রাজ্জাক, সুরঞ্জিতকে কি বিবেচনায় নেবেন সাধারণ ভোটাররা বা আওয়ামী লীগের কর্মীরা? যেসব কারণে শেখ হাসিনা বা অন্যরা দোষী হবেন, সেই দুর্নীতি থেকে কতটুকু ‘নিষ্কলুষ’ এই সংস্কারবাদীরা।
যদি তারা শেষমেশ বর্তমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আওতামুক্ত থাকেন এবং ‘সংস্কারের’ পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আবির্ভূত হন, তবে তাদের সম্পর্কে দলীয় সাধারণ নেতা-কর্মীরাই বা কী মনোভাব পোষণ করবেন? সাধারণ ভোটাররা কি খুব একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করবেন এই সংস্কারবাদী আওয়ামী লীগারদের?
সাপ্তাহিক ২০০০ এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটির বাকি অংশ পড়তে চাইলে ক্লিক করতে হবে এখানে
ডাইরেক্ট লিংক:
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।