যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
গত দশ তারিখে অনেকদিন পর ব্লগে ঢুকে দেখি ভয়াবহ অবস্থা। এই ব্লগটা কম্যুনিটি-বেইজড, শুধু নিজের ব্লগে ঢুকে লিখেই কাজ শেষ হয়ে যায়না, অন্যেরা কি লিখল, কি নিয়ে আলোচনা চলছে, নিজের লেখায় কে কি কমেন্ট করল, কত ডাইমেনশন! সেভাবেই, প্রথম পাতায় ক্লিক করেই দেখলাম ব্লগে কলম বিরতি চলছে। প্রিয় ব্লগারদের ব্লগে ঢুঁ দিয়ে দেখি কয়েকজন, যেমন অমি পিয়াল, মাহবুব সুমন, এস্কিমো ও আরো অনেকেই কলম বিরতি নিয়েছেন।
ঘটনা কি ঘটেছিল ধারনা করতে পারছি; এটা একদল নির্লজ্জ ব্লগারের পূরোনো কৌশল, ইজি মেকানিজম --আগেও ঘটেছে। স্বাধীনতা-বিরোধীচক্র দ্বারা প্রভাবিত এই একদল পথভ্রস্ট তরুন/তরুনী, এদের অনেকেই স্রেফ উদ্দেশ্যমূলকভাবে/ উস্কানীমূলকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা/ অস্তিত্বকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলতে থাকে, সেটা পড়ে সাধারণ ব্লগারদের মাঝে বিরক্তি তৈরী হয়, হয়ত তারা পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে যেতে চান; কিন্তু সবার সহ্যক্ষমতা সমান না, সেটা এই ম্যানিপুলেটররা ভালো জানে।
তারা হয়ত একসময় সহ্যক্ষমতা হারান, প্রথম পাতায় দেশকে নিয়ে অপমান আর কত সহ্য করা যায়! তখন সেইসব কুরুচিপূর্ণ পোস্টকে প্রথম পাতা থেকে সরানোর জন্য সবাই মিলে পোস্ট করতে থাকেন (এটাকে সাধাসিধেভাবে 'ফ্লাডিং' বললেও, আমি 'ভলান্টিয়ারি পোস্টিং' বলব; আমি নিজেও অনেক করছি)। তো, এবারও সম্ভবতঃ তাই ঘটেছে, তবে কর্তৃপক্ষ সেটাকে সাধারণ ফ্লাডিং হিসেবে চিহ্নিত করে কয়েকজন ব্লগারকে ব্যান করেছেন।
ফলাফল হিসেবে, যে চেতনার পক্ষ থেকে ভলান্টিয়ারী পোস্টিংকারীরা ব্যান হয়েছেন, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সবার কাছেই ব্যাপারটা অগ্রহনযোগ্য হবে -- সেটাই স্বাভাবিক। ব্লগবর্জনের বা কলমবিরতির ডাক এসেছে।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঘটনাকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেস্টা চলছে -- ভলান্টিয়ারী পোস্টিংকে গালিবাজির সাথে মিশিয়ে ফেলা হচ্ছে।
ভলান্টিয়ারী পোস্টিংয়ের জন্য কয়েকজনকে ব্যান করা হলো, অথচ এখন দেখা যাচ্ছে তাদের ওপর গালিবাজির দায় চাপানো হচ্ছে। এটাও আরেকটা মেকানিজম, সেই একই পথভ্রস্ট পক্ষের। তারা উস্কে দেয় যতসব দেশ-বিরোধী পোস্ট দিয়ে, এবং তারা জানে যে সবার সহ্যক্ষমতা সমান না। হবে কিভাবে? মুক্তিযুদ্ধে আমার কাছাকাছি আত্নীয়ের কেউ মারা যায়নি, আমি কিভাবে বুঝব যে ছেলেটার চাচাকে তার বাবার সামনে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়েছে, এবং ছেলেটি বারবার সেই গল্প শুনেছে বাবার চোখের পানির সাথে সাথে, তার মত করে আমি কোনদিন মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করতে পারবনা। তাই আমি নিজে যদিও বুঝি, এখানে গালি দেয়াটা হচ্ছে হেরে যাওয়া, উস্কানীর ফাঁদে পা দেয়া, সাধারণ ব্লগারদের কাছে নিজেকে এবং সাথেসাথে নিজের চেতনাকে নিজের অজান্তেই খারাপভাবে প্রদর্শন করে ফেলা, কিন্তু সেই ছেলেটা কতক্ষণ সেটা মানবে।
মানুষই তো, এমন বিষয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ তো সম্ভব না। রক্ত একসময় ফুঁসে উঠবেই। (তবে প্রচুর গালিগালাজ আছে যেটা সম্পূর্ণ বিনাকারণে হয়, অনেক সাধারণ ব্লগারকেই ব্যাক্তিগত সম্পর্কের কারণে স্বাধীনতাবিরোধী ল্যাবেলিং করে গালিগালাজ করা হয় -- যেগুলোর পক্ষে এটাকে সাফাই হিসেবে না নেয়ার জন্য অনুরোধ করি)।
সুতরাং, আমিও কলম বিরতিতেই আছি।
তবে এতদিন ধরে ব্লগাচ্ছি, সেই সামহোয়ারের এই অবস্থা দেখে গায়ে পড়ে সমস্যাটা নিজে যতটুকু বুঝি ততটুকু প্রকাশ করার দায়িত্বটা নিলাম।
সামহোয়ারের প্যারাডক্সটা কোথায়?
একইসাথে "অবারিতসংখ্যক ব্লগার" আবার "গালিগালাজ বা তথাকথিত ফ্লাডিংবিহীন ব্লগ" আশা করাটাই সামহোয়ারইন প্যারাডক্স।
যতদিন না রাজাকারপন্থীদের উস্কানীমূলক পোস্টিংয়ের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা না নেয়া হবে, ততদিন পর্যন্ত গালিগালাজ বলেন আর ফ্লাডিং (ভলান্টিয়ারী পোস্টিং) বলেন -- চলবেই। আমি নিজে গালিগালাজ পছন্দ করিনা (তবে ভলান্টিয়ারী পোস্টিংয়ের বড় সমর্থক), কিন্তু আমরা সমর্থন করি বা না করি এটা চলবেই। কিভাবে ঠেকাবেন? আপনাদের বর্তমান পলিসিটাই প্যারাডক্সিকাল।
কারণ, বর্তমান সিস্টেমে রাজাকরদের উস্কানীমূলক পোস্ট বন্ধ আপনারা কিভাবে করবেন? একই লোক প্রতিদিনই নতুন নিকে জয়েন করতে পারে।
একটু বুদ্ধি যার আছে সে তো পাইপলাইনিং করে সবসময়ই নিজের হাতে পাঁচটা নিক রেখে দেবে, যাতে কোনটা ব্লক হলেও পরেরটা ব্যবহার শুরু করতে কয়েকদিন অপেক্ষা না করতে হয়। কতকিছুই তো করা যায়! গালিগালাজও কি বন্ধ করতে পারবেন? অথবা ভলান্টিয়ারী পোস্টিং, যেটাকে আপনারা ফ্লাডিং হিসেবে নিলেন? এই যে আ.রা.শি.দের মতো কয়েকজন ভাল ব্লগারদের ব্যান করলেন, তারাতো শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণেই, নিজের ন্যায়-অহংকারের কারণেই অন্য নিকে ব্লগিং শুরু করেননি, করতে চাইলে সামহোয়ারইনের বর্তমান সিস্টেমে কি ঠেকানো যেত?
সমস্যাটাতো একদম মূলে,
আপনারা ব্লগার রেজিস্ট্রেশন নীতিটা করেছেন একদম উদার, অন্যদিকে ব্লগারদের কর্মকান্ডকে ভয়ানক গতিবিধির মাঝে বেঁধে দিতে চাইছেন --- দুটা একসাথে যাবে কিভাবে?
গতিবিধি বাঁধতে হলে রেজিস্ট্রেশনেও গতিবিধি প্রয়োগ করুন, স্ট্রিক্ট রেজিঃ পদ্ধতি প্রয়োগ করুন। নাহলে একদমই স্বাধীন মতপ্রকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে রাখুন এটাকে, যেখানে "স্বাধীনতাকে অপমান করলে ভয়াবহ গালি খেতে হবে অথবা মুহূর্তেই প্রথম পাতা থেকে নিস্ক্রান্ত হতে হবে" এই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে যদি কেউ স্বাধীনতাকে অপমান করতে পারে তো করুক না।
তানাহলে কিছুদিন হিট বেশী পড়বে এটা ঠিক, তবে সামহোয়ার আর আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারবেনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।