হলমার্কের মতো ভয়াবহ ঋণ কেলেঙ্কারির আরও তথ্য পাওয়া গেছে সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এমন একজন বিদেশিকে ঋণ দেওয়া হয়েছে যার কোনো হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না। জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট না নিয়ে ওই বিদেশির নামে অনিয়মিত ঋণপত্র স্থাপন (এলসি) করা হয়েছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পরও পিএডি দায় সৃষ্টি করা হয়েছে।
এ ধরনের জালিয়াতি হতে পারে ব্যাংকের এমডি প্রদীপ কুমার দত্ত তা বিশ্বাস করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হয়েছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে, যার এ-দেশীয় অংশীদার রয়েছে।
২০০৮-০৯ সালে এ ধরনের জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকটির প্রায় ৪১ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন কতিপয় কর্মকর্তা। সোনালী ব্যাংক স্থানীয় কার্যালয়ের বিরুদ্ধে এ অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতর। শুধু তাই নয়, ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে অডিট দফতর। মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভেঙে ঋণ বিতরণ, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে পুনঃতফসিলিকরণ এবং নামমাত্র জামানত নিয়ে ঋণ মঞ্জুর করে এসব দুর্নীতি করা হয়েছে।
২০০৮-০৯ সালে হওয়া এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ব্যাংকটির প্রায় ১৪২ কোটি ২২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ঋণ মঞ্জুরের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদনটি অডিট দফতর থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমের কাছে পাঠানো হয়। ২০০৯ সালে নিরীক্ষায় সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ঋণ অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। ওই সময় প্রধান কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভেঙে এবং নামমাত্র জামানতে এমন একটি প্রকল্পে ঋণ দেন যা উৎপাদনে যেতে পারেনি।
পরে অনিয়মের মাধ্যমে ওই ঋণ পুনঃতফসিলিকরণও হয়। এর ফলে ব্যাংকটির প্রায় ১৩ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একই বছর সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় থেকে অস্তিত্বহীন প্রকল্পে নামমাত্র জামানতে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ মঞ্জুর করার তথ্য পেয়েছে অডিট দফতর। অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮-০৯ সালে কনসোর্টিয়াম ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ঋণ বিতরণ না করে অপর্যাপ্ত জামানতের বিপরীতে ওয়ান গ্রুপের নামে অতিরিক্ত ঋণ সৃষ্টি করে ব্যাংকটির প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ঝুঁকিপূর্ণ দায় সৃষ্টি করেছেন স্থানীয় কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা। একই শাখা থেকে মেসার্স প্রিটেঙ্ (প্রা.) লিমিটেড নামে একটি অস্তিত্বহীন প্রকল্পে জামানত ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়েছে।
এর ফলে ব্যাংকটির ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। একই শাখায় ওই বছরই শ্রেণীকৃত পিএডি লোন হিসাবকে এলটিআর হিসাবে স্থানান্তরপূর্বক পুনঃতফসিলিকরণ সত্ত্বেও কতিপয় কর্মকর্তা পাওনা আদায়ে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে ব্যাংকটির ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি করে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত জামানত থাকা সত্ত্বেও নীতিমালা ভঙ্গ করে অনিয়মিত সুদ মওকুফ ও ঋণের আসল টাকা সুদবিহীন ব্লক হিসাবে স্থানান্তরপূর্বক পুনঃতফসিলিকরণের মাধ্যমে ব্যাংকটির আরও প্রায় ৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার ক্ষতি করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।