মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....।
মাত্র কিছু দিন আগেও প্রতিদিন আপ্যায়নে কম করে হলেও ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় করা তানভীর আর জেসমিনের কেমন কাটছে হাজতজীবন, চলুন একটু জেনে নেই।
দিনে ৭৫ টাকার খাওয়া, রাতে বালিশ ছাড়া শোয়া- এভাবেই রমনা থানায় নিশিদিন কাটছে হলমার্ক চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের। হঠাৎ পাওয়া বিলাসী জীবন থেকে রমনা থানার চৌদ্দ শিকের ভেতর।
থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে রাখা সিসি টিভির মনিটর দেখে কেউ মন্তব্য করছেন ‘চোর’, কেউ বলছেন ‘ডাকাত’, আবার কেউ বলছেন ‘ডাকাতের ডাকাত’। এ দৃশ্য গতকালের রমনা থানার। গতকাল পর্যন্ত সেখানে বসবাস ছিল হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও জিএম তুষার আহমেদের। হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদকে আগের দিন জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিকালে আদালতে নেয়া হয়েছে জেসমিন ও তুষারকে।
ঈদের পর আবারও রমনা থানার বাসিন্দা হবেন- তারা এমন কথাই বললেন দুদক কর্মকর্তা আখতার হামিদ।
সকাল ন’টা। রমনা থানার গারদের সামনে গিয়ে ‘হলমার্ক’ শব্দটি উচ্চারণ করতেই এক গাল হাসি দিয়ে সেন্ট্রি খানিকটা গানের সুরে ‘সকালবেলা আমির রে ভাই ফকির সন্ধ্যাবেলা’ কথাটি বলেই হাতের ইশারায় এগোতে বললেন গারদের দিকে, তার আগে জানতে চাইলেন পরিচয়। জেসমিন ইসলামকে রাখা হয়েছে মহিলা হাজতখানায়। পাশেই পুরুষ হাজতখানায় জেসমিনের ভগ্নিপতি হলমার্ক গ্রুপের জিএম তুষার।
হাজতখানায় জেসমিন ইসলামের কক্ষে আছেন আরেক মহিলা। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে চুরির অভিযোগে। স্বামীর ৫০ লাখ টাকা চুরি করে ভেগেছিলেন তিনি। তাকে চট্টগ্রাম থেকে ধরে আনা হয়েছে।
হাজতের মেঝেতে বিছানো একটি তেল চিটচিটে কম্বল।
ওই রকম আরেকটি কম্বল মুড়িয়ে বানানো হয়েছে বালিশ। মেঝেতে এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু পুরনো পত্রিকা। রাতে ওগুলো বিছানো হয়েছিল ঘুমানোর সময়। হাজতখানার সামনেই দাঁড়ানো দু’জন মহিলা সেন্ট্রি। হাজতের সামনে একটি মশার কয়েলের শেষটুকু তখনও জ্বলছে।
জানা গেল দু’দিন আগে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন জেসমিন ইসলাম। সে কারণে দুদক ওই দিন তাকে রিমান্ডে নেয়নি। আগের দিনের জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেননি। চেহারায় রোগাক্রান্ত ভাব।
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন হাজতের ভেতরে।
পরনে গোলাপি রঙের সালোয়ার কামিজ। ওড়না দিয়ে পুরো ঘোমটা দেয়া। ঘণ্টাখানেক নিশ্চুপ বসে থেকে দু’একটা কথা বললেন কক্ষের অন্য হাজতির সঙ্গে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটাহাঁটি করলেন কিছুক্ষণ। আবার বসে থাকলেন।
পুরুষ হাজতিদের কক্ষে তুষারের সঙ্গে আরও ৫ জন। তাদের একজন ব্যায়াম করে যাচ্ছেন অনবরত। অন্য তিন জন ঘুমাচ্ছেন বেঘোরে। তুষার কখনও সটান হয়ে শুয়ে পড়ছেন, কখনও উঠে দাঁড়াচ্ছেন, হাজতের এপাশ থেকে ও পাশে হাঁটছেন। ওই কক্ষের মেঝের অনেকটা জায়গা ফাঁকা, কম্বল নেই।
ন’টার সামান্য পরে প্লেটে করে খাবার দেয়া হলো হাজতিদের। একই প্লেটে আলুর ঝোল, ডাল-ভাত, টিনের গ্লাসে পানি। খাবার দেয়ার আগে গারদের চাবি আনা হলো থানার ওসির কাছ থেকে। বেলা সাড়ে ১১টায় দুদক কর্মকর্তারা এসে গাড়িতে করে জেসমিন ও তুষারকে নিয়ে গেলেন সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ে।
গতকাল রমনা থানা হাজতে তানভীর না থাকলেও থানার সিসিটিভিতে ধারণ করা চিত্রে দেখা গেল তার হাজতবাসের কয়েকদিনের দৃশ্য।
কখনও দু’হাঁটুর মাঝে মাথা রেখে বসে আছেন, কখনও বসে আছেন দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে। কখনও আবার উদাস ভাবে তাকিয়ে আছেন উপরের দিকে। বেশির ভাগ দিনে গায়ে সাদা শার্ট, পরনে ক্রিম কালারের প্যান্ট। কালো মুখে গজিয়ে ওঠা সাদা দাড়িগুলো চিক চিক করছে। একদিনের দৃশ্যে দেখা গেল তানভীরের পাশে বসে বমি করছে এক নেশাগ্রস্ত হাজতি, নেশার জন্য চিৎকার করছে আরেকজন।
রমনা মডেল থানার ওসি শাহ আলম জানালেন, জেসমিন ইসলাম ও তুষারের প্রতিদিনের খাওয়ার বরাদ্দ ৭৫ টাকা করে। ঠিক অন্য হাজতিদের জন্য সরকারি বরাদ্দের মতোই। সকালে ১৫ টাকার নাস্তা, দুপুরে ৩০ ও রাতে ৩০ টাকার খাওয়া। তিনি জানালেন, হলমার্ক একটি সেনসেটিভ মামলা। এ কারণে আমরা আরও বেশি সতর্ক, বাইরের খাবার দেয়া নিষেধ।
দৈনিক ৭৫ টাকার মধ্যে কি খাবার দেয়া হয় সেটা জানা গেল খোঁজ নিয়ে। থানার স্টাফদের খাওয়ার জন্য মেস আছে। ওই মেসের খাওয়া থেকে তাদের খাবার দেয়া হয়। বেশির ভাগ দিনে সকালের নাস্তা আলুর ঝোল, ডাল ও ভাত। দুপুরে ও রাতে কোন দিন এক টুকরো মাছ বা এক টুকরো গরুর মাংস- সঙ্গে পাতলা ডাল।
দুদক যেদিন তাদেরকে রিমান্ডে সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে নেয় সেদিন দুপুরে তারাই খাবার দেয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা জানান, দুদকেও তাদেরকে খাবার দেয়া হয় একজন হাজতির প্রাপ্য সরকারি বরাদ্দ অনুসারে।
তানভীর, জেসমিন ও তুষার তিন জনই অভ্যস্ত বিলাসী জীবন যাপনে। আলিশান বাড়ি, দামি দামি একাধিক গাড়ি, লোকলস্কর তাদের নিত্যসঙ্গী। এখন রমনা থানার হাজত গণ্ডিতে দিনে ৭৫ টাকার খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে, মাত্র কিছু দিন আগেও প্রতিদিন আপ্যায়নে ব্যয় করতেন কম করে হলেও ৭৫ হাজার টাকা।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তানভীর স্বীকার করেছেন সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে তিনি আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় করেছেন ১শ’ কোটি টাকা। জেসমিন টাকা খরচ করতেন দু’হাতে কাগজের মতো করে- এমনটাই দেখেছেন শেওড়াপাড়ার তার প্রতিবেশীরা। রমনা থানার হাজতে দেখা গেল গোসল সারতে হচ্ছে হাজতের ভেতরই, চুল আঁচড়ানোর আয়না-চিরুনিটাও নেই। থানা হাজতে অন্য কারও সহানুভূতিটুকুও দেখা গেল না তাদের প্রতি। হলমার্ক নাম শুনলেই অনেকটা ঘেন্নাভরে কথা বলেন সকলে।
দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানালেন, থানার সিসিটিভি সম্পর্কে তাদের কাছে আপত্তি জানিয়েছেন জেসমিন ইসলাম।
লেখাটি একটি অনলাইন থেকে নেয়া।
লিংক:
http://bangla.bdnews.com/news/21540 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।