আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেউ কি আমাদের গলার ফাঁসটা শক্ত করে দিবেন?



আর মাত্র কম্প্রিহেনসিব পরীক্ষাটাই বাকী ছিল। ভেবেছিলাম এটা শেষ হলেই মুক্তি। ভাইভাতে কোনমতে এটেন্ড করলেই হলো। ভাইভার তারিখও দেয়া হয়ে গেছে। কিছুই পড়া হয়নি।

পুরো মাষ্টার্স পরীক্ষাটাই যাচ্ছেতাই দিলাম। মনে হচ্ছিল পরীক্ষাগুলো একেকটা গলায় ফাঁস। একটা পরীক্ষা দিচ্ছি, গলা থেকে একটা ফাঁস নেমে যাচ্ছে। ২০০৫ সালের অক্টোবরে অনার্স ফাইনাল দিলাম। এখন ২০০৮ সাল।

আমাদের মাষ্টার্স (১ বছরের) পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। গলায় ফাঁস না ভেবে এটাকে পরীক্ষা ভাবি কিভাবে? পরীক্ষা ভাবতে পারলে হয়তো কিছু পড়াশুনা করে আসতাম। যাগকে, শেষ ফাসঁটা গলা থেকে খুলে ফেলার উদ্দেশ্যে ২৯শে ডিসেম্বর সকালে ক্যাম্পাসে গেলাম। কলাভবনের করিডোর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা নোটে চোখ বুলাচ্ছিলাম আর ধীরে ধীরে এক্সাম হলের দিকে এগুচ্ছি। পিছন থেকে আমার দু’বন্ধু ডাক দিলো।

‘আরে মিয়া এতো পড়ে লাভ নেই, পরীক্ষা আজকে না ও হতে পারে’। ওদের কথা শুনে ভাবলাম মজা করছে। আমার অবস্থা বুঝে আমজাদ বললো তুমি মনে হয় পেপার দেখনি। আসলেই আমি সেদিনের পেপার দেখতে পারিনি। বাসা থেকে পরীক্ষার জন্য বের হই ৭:৩০ মিনিটে।

পেপার আসে ৮ টায়। পত্রিকার খবর হলো, আগের রাতে একজন ছাত্র ভিসি স্যারের কাছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ করেছে। ভিসি স্যার সে অভিযোগ গ্রহন করেছেন। সমাজ বিজ্ঞান অণুষধের ভারপ্রাপ্ত ডীন আরেফিন স্যারকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে এটা যাছাই করার। পরীক্ষা শুরুর আগে অভিযোগকৃত প্রশ্নগুলোর সাথে মূল প্রশ্নপ্রত্র মিলিয়ে দেখা হবে।

এরপর পরীক্ষা হবে অথবা বাতিল হবে। ৮:৫০ এ পরীক্ষা হলে ঢুকলাম। ৯ টায় পরীক্ষা। কোন স্যারকেই পরীক্ষার হলে দেখলামনা। খাতাপত্রও না।

৯ টা বেজে গেছে তবুও না। বুঝলাম পরীক্ষা আর হচ্ছেনা। ৯ টার পরে স্যাররা আসলেন। আরেফিন স্যারও আছেন সাথে। চেয়ারম্যান স্যার আমাদেরকে শুনালেন, অভিযোগকৃত ৫টি প্রশ্নের ৩টি মূল প্রশ্নের সাথে মিলে গেছে।

বিশাববিদ্যালয়ের নিয়ম হচ্ছে ৪০% মিললেই এই প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা হবেনা। সুতরাং আমাদের পরীক্ষা হচ্ছেনা। রাগে, ক্ষোভে, দু:খে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলো মন। মুক্তির মাত্র তিন ঘন্টা আগে আমাদেরকে শুনানো হলো, মাষ্টার্স পরীক্ষা নামক গলায় ফাঁস থেকে তোমরা এখনই মুক্তি পাচ্ছোনা। অধিকাংশ ছাত্ররাই স্যারদেরকে অনুরোধ করলো, আমরা এক ঘন্টা বসবো; একটা প্রশ্নপত্র তৈরী করে দিন।

কে শুনে কার কথা। গলায় ফাঁস নিয়েই পরীক্ষা হল থেকে বেরিয়ে আসলাম। কবে যে মুক্তি পাবো জানিনা। ২৯ শে ডিসেম্বরের পর আজ ১৩ দিন পার হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছেনা।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। সেই কমিটি থেকে আবার একজন পদত্যাগও করেছেন। এই তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিবে। তারপর আমাদের ৫০ নম্বরের কম্প্রিহেনসিব পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে। হায়রে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! হায়রে আমার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ! ২০০০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০০৮ সালেও ৫ বছরের (অনার্স+মাষ্টার্স) পড়াশুনা শেষ হচ্ছেনা।

অসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আমাদের বন্ধুরা ৩ বছর আগেই কর্মক্ষেত্রে ঢুকে গেছে। আর আমরা এখনো গলায় ফাঁস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমি আর মুক্তি চাইনা। মরতে চাই। কেউ কি আমাদের গলার ফাঁসটা আরেকটু শক্ত করে দিবেন, যাতে আমাদের মৃত্যু নিশ্চত হয়।

ছাত্ররাজনীতি করেন এমন কেউ যদি আমার লেখাটা পড়ে থাকেন তাহলে নেতাদেরকে বলে কয়ে যদি একটা ধর্মঘট ডাকেন তাহলে আমার মতো অনেকের গলার ফাঁসটা শক্ত হবে। এখন যে অবস্থায় আছে, ফাঁসটা আরেকটু শক্ত হলেই আমাদের মৃত্যু হবে। আমরা মুক্তি পাবো। চিরমুক্তি। জাহাঙ্গীরনগরে গতপরশু আপনাদের কর্মকান্ডে আমি খুবই আশান্বিত।

আসলে আপনারাইতো আমাদের গলায় ওটা পরিয়ে দিয়েছেন। আর আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলী পুরো ৭-৮ বছর ধরে সযতনে এটার পরিচর্যা করে এসেছেন। শেষ কাজটাও আপনারা করে আমাদেরকে করুণা করুণ। আমাদের মৃত্যুটা নিশ্চিত করুন। প্লিজ জাহাঙ্গীরনগরের মত একটা ঘটনা আর অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য একটা ধর্মঘট।

আল্লাহ আপনাদেরকে অনেক সওয়াব দিবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.